চীন কীভাবে মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে: বিদেশীদের ধারণা
2021-01-13 10:03:26

২০২১ সালের শুরুর দিকে চীনের উহান শহরের কর্মব্যস্ত বাণিজ্যিক রাস্তায় দেখা যায় মানুষের ভিড়। উহানের মানুষেরা মাস্ক পরে পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে হেঁটে হেঁটে কেনাকাটা করছেন। মার্কিন গণমাধ্যম ব্লোমবার্গের জনৈক সাংবাদিক উহানের রাস্তায় লোকজনের সাক্ষাত্কার নিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর মতে, সেখানে তিনি যা দেখেছেন তা একেবারেই অবিশ্বাস্য। এক বছর আগে উহানে চলছিল টানা ৭৬ দিনের কঠোর লকডাউন। তখন রাস্তায় কোন মানুষের দেখাই মিলতো না।

 

উহানের এক নাগরিক ওই সাংবাদিককে বলেন, “আমি কোন চিন্তা করি নি। আমার মতে উহান এখন সবচেয়ে নিরাপদ শহর। অল্প কয়েক মাসে মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেয়েছন।”

 

মহামারি নিয়ন্ত্রণে চীন কী কী করেছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উহান পরিদর্শন ও গবেষণা করেন আন্না নামের এক রুশ মেয়ে । তাঁর তৈরি এক ভিডিওতে আন্না বলেন, হুপেই প্রদেশে বাইরের চিকিত্সক দল, স্থানীয় চিকিত্সক, ও নার্স মিলে মোট ১.৭লাখ মানুষ মহামারি প্রতিরোধ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানে প্রতিরোধক সরঞ্জামের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১০০কোটি ইউয়ানের বেশি। প্রতি গুরতর রোগীর চিকিত্সা খরচ ১লাখ ইউয়ানের বেশী। চীনে যখন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০হাজারের বেশি, তখন লেই শেন শান, হু শেন শান ও আশ্রয় হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। সেসঙ্গে আরোপ করা হয় কঠোর লকডাউন। ফলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে মহামারি পরতিরোধে চীন যে পরিমাণ খরচ করে, তা একটি মাঝারি আকারের যুদ্ধের ব্যয়ের সমান। মার্চ মাসের মাঝা-মাঝি সময় পর্যন্ত মহামারি প্রতিরোধে চীন মোট ১১,৬৯০কোটি ইউয়ান ব্যয় করেছে এবং তা বিশ্বের যে কোন দেশের এ খাতে খরচের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। মহামারির শুরুর দিকে বিশ্বের নানা দেশ তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়কে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু চীন কখনও টাকার দিকে তাকায় নি, বরং মানুষের জীবনকে প্রথমে স্থান দিয়েছে।

 

আন্না একজন বিদেশীর চোখে চীনের মহামারি মোকাবিলাকে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, ‘মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার’ দিয়ে চীনা সরকার এমন সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২০ মার্চ, তখন উহানে লকডাউন চলছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যেখানে মহামারির অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর, সেখানে গিয়েছিলেন। স্থানীয় মানুষের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং কমিউনিটিতে মানুষের  জীবনযাপনের অবস্থা ও মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কাজের অবস্থা পরিদর্শন করেন। প্রেসিডেন্ট সি  বলেন, মহামারি হলেও মানুষের জীবনযাপনের মানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। উহানের মানুষ তাজা মাছ খেতে পছন্দ করে, সম্ভব হলে তাদেরকে তাজা মাছ সরবরাহ করতে হবে। এর কিছু দিন পর ট্রাকে করে তাজা মাছ নানা জায়গা থেকে উহানে পৌঁছেছে এবং উহানের মানুষের বাড়িতে বিতরণ করা হয়েছে।

 

মহামারি নিয়ন্ত্রণে চীনের সফলতার মূল কারণ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে মহামারির পুরোটা সময় উহানে থাকা ফরাসি চিকিৎসক ফিলিপ ক্লিন বলেন, চীন সরকার মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও  পরাজিত করতে আশ্চর্যরকম প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং চীনা মানুষ এতে বড় অবদান রেখেছে।

 

মার্কিন কুন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রবার্ট লরেন্স কুন মনে করেন, চীন সরকারের সাংগঠনিক সক্ষমতা বিশ্বের স্বাস্থ্য ইতিহাসে বিরল। চীন সময় মতো মহামারি ছড়িয়ে পড়াকে ঠেকাতে পেরেছে মূলত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সুদক্ষ নেতৃত্ব ও ত্যাগি কর্মীবাহিনীর কারণে।(শিশির/এনাম/রুবি)