মহামারিতে দারিদ্রমুক্ত চিন মি গ্রামের গল্প
2021-01-13 10:04:33

উত্তর চীনের শ্যান সি প্রদেশের পাহাড়ে অবস্থিত চিন মি গ্রাম। এটি সব সময় দরিদ্র ছিল। গ্রামের নাম চিন মি। চিন মানে সোনার এবং মি মানে খাদ্য। গ্রামের মানুষেরা একদিনে টাকা ও খাদ্য অর্জন করতে পারে এমন স্বপ্ন পোষণ করতেন বলে গ্রামটির এমন নামকরণ।

 

চিন মি গ্রাম পাহাড়ি বনে অবস্থিত এবং সেখানকার পানি খুবই পরিষ্কার। গ্রামটি ১,০০০ থেকে ২,০০০মিটার পাহাড়ি উচ্চতায় অবস্থিত বলে সেখানে বিশেষ একধরনের মাশরুমের চাষ হয় প্রচুর। এ মাশরুম দেখতে মানুষের কানের মতো এবং খুব পুষ্টিকর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিন মি গ্রামের মানুষ এ মাশরুম চাষ, চাইনিজ ভেষজ ওষুধ চাষ, এবং গ্রামীণ পর্যটনের মাধ্যমে তাদের জীবনযাপনের মান ক্রমশ উন্নত করেছে। তবে ২০২০ সালের শুরুতে হঠাৎ শুরু হয় কোভিড-১৯ মহামারি এবং কৃষি পণ্যের ঐতিহ্যগত বিক্রয় ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে চিন মি গ্রামের মাশরুম বিক্রি প্রায় বন্ধ হয় পড়ে। ঠিক এ সময়ে গেল কয়েক বছরে স্থানীয় সরকার সড়ক পথ, বিদ্যুত, লজিস্টিক ও ই-বাণিজ্যসহ নানা খাতে করা সরকারের বিনিয়োগ গ্রামবাসীদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়। অনলাইনে চিন মি গ্রামের মাশরুম চীনের নানা জায়গায় বিক্রি হতে থাকে।

২০২০ সালের এপ্রিল মাসে, চিন মি গ্রামের ‘মারুশম স্মার্ট গ্রীণ হাউসে’ বিশেষ একজন অতিথি এসেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তাঁর এবারের পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য হলো মহামারিতে চীনা গ্রামটির বাসিন্দাদের দারিদ্র্যমুক্তির খোঁজ খবর নেয়া। চিন মি গ্রামের মাশরুম অনলাইনে বিক্রি হয় দেখে তিনি খুব খুশি। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ই-বাণিজ্য কৃষি পণ্য বিক্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সি চিন পিং চিন মি গ্রামের এক লাইভ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন ২কোটিরও বেশি দর্শক এ অনুষ্ঠান দেখেন এবং অনলাইনে ২৪টন মাশরুম ক্রয় করেন। তাই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’কে‘সেরা বিক্রয়কর্মী ’হিসেবে মনে করা হয়।

চিন মি গ্রামের মতো চীনের হাজার হাজার গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচন ছিল ২০২০ সালে চীনা সরকারের বৃহত্তম কাজ। সে বছর মহামারি হলেও প্রেসিডেন্ট সি ১১বারের মতো চীনের নানা জায়গা পরিদর্শন করেন এবং দারিদ্র্যবিমোচন কাজে সবাইকে উৎসাহিত করেন।

 

২০২০ সালের ১১ মে, প্রেসিডেন্ট সি এসেছেন শান সি প্রদেশের তা থুং শহরের একটি জৈব পদ্ম চাষ কেন্দ্রে। তিনি স্থানীয় লোকদের বলেন, পদ্মও বড় শিল্প হতে পারবে এবং তার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ শিল্পকে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করতে হবে এবং তার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।

 

২০২০ সালের ৮ জুন, প্রেসিডেন্ট সি নিং সিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত এলাকার উ জুং শহরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধনী হতে হলে পুরো জাতিকে হতে হয়। তাই আমরা এক সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাব।”

 

মহামারি চীনা মানুষের দারিদ্র্যমুক্তিকে ঠেকাতে পারে নি। ২০২০ সালের প্রথম ৯মাসে চীনের গ্রামের খূচরা বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১.৩ট্রিলিয়ান ইউয়ান, তা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭.৮শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর চীনের কুই চৌ প্রদেশের শেষ ৯টি জেলার দারিদ্র্যমুক্তির  ঘোষণা করা হয় এবং এ পর্যন্ত চীনের ৮৩২টি দরিদ্র জেলা চরম দারিদ্র্যকে বিদায় জানিয়েছে। গত ৮ বছরের কঠোর পরিশ্রমে এবং মাহামারির আঘাত মোকাবিলা করে চীন সময় মতো দারিদ্র্যবিমোচনের উদ্দেশ্য পূরণ করেছে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের ১০ বছর আগে দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করে মানব ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

 

পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও মহামারি সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মাঝেও চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কাজের বড় সফলতা বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৭০বছরের বিশ্বে যে পরিমাণ দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে তার ৭০ শতাংশেরও বেশিতে রয়েছে চীনের একক অবদান।

 

রুশ বিজ্ঞান একাডেমির ফার ইস্ট ইস্যু গবেষণালয়ের উপ পরিচালক অস্ট্রভস্কি বলেন, সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে চীনের ব্যবস্থা থেকে শিখতে পারে বিশ্বের নানা দেশ।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ট্রুডি মহায়া বলেন, চীনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় মানুষকে উন্নয়নের কেন্দ্রে রেখে কাজ করলে বড় সফলতা অর্জিত হবেই। (শিশির/এনাম/রুবি)