সিপিসি’র ক্যাডারদের দেয়া সি চিন পিংয়ের ‘প্রথম পাঠ’
2021-01-11 15:07:28

১৯৯৯ সাল থেকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)’র কেন্দ্রীয় পার্টি স্কুলে প্রতি বছরের শুরুতে চালু হয় উচ্চ স্তরের সেমিনার। চীনের প্রাদেশিক ও মন্ত্রী পর্যায়ের ক্যাডারগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। এ বছরে পার্টি চীনের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উপস্থিত ছিলেন এবং গুরুত্বর্পূণ ভাষণ দিয়েছেন। দেশের উন্নয়নের নতুন প্রবণতা ও কর্তব্য অনুযায়ী সিপিসির ক্যাডারদেরকে নতুন নির্দশনা দেন তিনি। একে সিপিসি’র সর্বোচ্চ নেতা কর্তৃক পার্টির ‘মূল সংখ্যালঘু’ অর্থাৎ উচ্চ পর্যায়ের ক্যাডারদেরকে দেয়া ‘প্রথম পাঠ’ হিসেবে মনে করা হয়।

 

২০১৬ সাল ছিলো ক্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সূচনা বছর। ক্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে চীনের অর্থনীতি উন্নত রূপ পাওয়ার পাশাপাশি কাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়। সেসময়ে ব্যাপক ও গভীর পরিবর্তন পার্টি ও দেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। নবায়ন, সমন্বয়, গ্রীণ, উন্মুক্ত ও ভাগাভাগির নতুন উন্নয়ন ধারণা বাস্তবায়নে নানা পর্যায়ের ক্যাডারদের ধারণা ও কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালের সেমিনারে সি চিন পিং ইতিহাস ও বাস্তবতার আলোকে ক্যাডারদেরকে নতুন উন্নয়নের ধারণা নিয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ক্যাডারদের উচিৎ নিজেদের দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে সবাইকে সত্যের শক্তি বুঝিয়ে দেয়া। তিনি বলেন, একদিকে ক্যাডারদেরকে কঠোরভাবে শাসন এবং অন্যদিকে তাঁদেরকে আন্তরিক যত্ন নিতে হয়।  ক্যাডারগণ ভালো মন ও আস্থা রেখে ইতিবাচকভাবে কাজ করেন এবং দায়িত্ব বহন করেন। সাহসী ও উৎসাহি ক্যাডারদেরকে সমর্থন দিয়ে তাঁদের সৃজনশীলতা ও প্রবর্তনকে উত্সাহিত করতে হয়।

 

২০১৭ সালের এক সেমিনারে সি চিন পিং বলেন,ক্যাডারদের উচিৎ কঠোর স্ব-শৃঙ্খলা রাখা এবং কর্মী নিয়োগ বিষয়ে নিয়ম মেনে চলা। বৈধ ক্ষমতা ন্যায্যভাবে ও সাবধানে প্রয়োগ করা।

 

২০১৮ সালের এক সেমিনারে প্রাদেশিক পর্যায়ের ক্যাডার, মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ও বিকল্প সদস্যও অংশগ্রহণ করেন। এর আগে সিপিসির ঊনবিংশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং পার্টির নির্বাচন শেষ হয়।

 

সি চিন পিং পুনরায় সিপিসির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। সেবার সেমিনারে সি চিন পিং বলেন, সিপিসি বড় একটি পার্টি এবং চীন বড় একটি দেশ। বড় পার্টি নির্মাণ ও বড় দেশকে নেতৃত্ব দিতে চাইলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও উচ্চ পর্যায়ের ক্যাডারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের বিশ্বাস দৃঢ় হতে হবে, বড় দায়িত্ব পালন করতে দক্ষ হতে হবে। কমিউনিস্ট ও চীনের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রে দৃঢ় বিশ্বাসী এবং অনুশীলনকারী হতে হবে।

 

তিনি বলেন, সব ক্যাডারের উচিৎ ছোট বিষয়ে নিজেকে সংযত করা। বিশেষাধিকারের বিরোধীতা করা। তদারকি এবং সংযমের অধীনে কাজ ও জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত হওয়া।

 

২০১৯ সালের এক সেমিনারে সি চিন পিং রাজনীতি, মতাদর্শ , অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজ , বহিঃগত পরিবেশ ও পার্টির নির্মাণসহ নানা ক্ষেত্রের বড় ঝুঁকি প্রতিরোধ ও মোকাবিলা নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীনা জাতি মহান পুরুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রয়েছে এবং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কঠোর এক সময়ে প্রবেশ করেছে। এ সময়ে পরিশ্রমী ও উৎসাহী  ক্যাডার প্রয়োজন।

 

তিনি বলেন,ক্যাডারদের উচিৎ মূল পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করা এবং উন্নয়নের প্রবণতার পূর্বভাস করা। ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা এবং সিদ্ধান্তমূলক সিদ্ধান্ত নেয়া। কঠোর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে প্রতিটি বড় ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারা।

 

২০১৮ ও ২০১৯ সালের দুটো সেমিনারে সি চিন পিং দুবারের মতো উল্লেখ করেন যে, জটিল ও পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও সংবেদনশীল পরিবেশ, কঠোর উন্নয়ন কর্তব্যের সম্মুখীণ আমরা। আমরা যেমন ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত, তেমন ঝুঁকির সামনে রয়েছি আমরা। একদিকে প্রতিরোধ করি, অন্যদিকে সমস্যা হলে মোকাবিলা করতে পারি। তাঁর ওই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যও কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় প্রতিফলিত হয়।

শিশির/এনাম/রুবি