বিদায়ী বছর চীনসহ বৈশ্বিক চলচ্চিত্রাঙ্গন
2020-12-30 15:21:39

বিদায়ী বছর চীনসহ বৈশ্বিক চলচ্চিত্রাঙ্গন_fororder_xuzheng

আজ হচ্ছে ২০২০ সালের শেষ দিন। এই বছরে আমাদের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অর্থনীতি, পর্যটন ও চলচ্চিত্রাঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী নতুন বছরের দিকে তাকিয়ে সবার জিজ্ঞাসা- ভবিষ্যত কেমন হবে? প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের আজকের এই বিশেষ দিনের অনুষ্ঠানে আমরা ২০২০ সালে চীনের চলচ্চিত্রাঙ্গনের দিকে ফিরে তাকাবো।

২০২০ সালের বসন্ত উত্সবের ছুটি চলাকালে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কথা ছিলো। দর্শকেরা এসব চলচ্চিত্র দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। তবে, হঠাত্ করে মহামারী শুরু হলে আমাদের জীবনে নানা পরিবর্তন শুরু হয়। ২০২০ সালের শুরুতে সিনেমা হল বন্ধ হয়। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের শেষ দিকে ধাপে ধাপে সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে। চীনের চলচ্চিত্র এবং চীনা চলচ্চিত্র মহলের ব্যক্তিদের জন্য ২০২০ সাল নিঃসন্দেহে সবচে কষ্টকর বর্ষ।

বিদায়ী বছর চীনসহ বৈশ্বিক চলচ্চিত্রাঙ্গন_fororder_jiongma

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের বসন্ত উত্সব চলাকালে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কথা ছিলো। তবে মহামারীর কারণে অধিকাংশই মুক্তি পায় নি। সেগুলোর মধ্যে ‘লস্ট অন জার্নি’ নামের চলচ্চিত্র পরিচালক সুই চেং এ চলচ্চিত্রটি ৬৩ কোটি ইউয়ানের বিনিময়ে একটি ভিডিও ওয়েবসাইটের কাছে বিক্রি করার ঘোষণা করেন। তারপর দর্শকেরা বিনামূল্যে সেই ভিডিও ওয়েবসাইটে তার নতুন চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেছে। তার এ কাজটি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ছোট-বড় সিনেমা হলগুলো পৃথক পৃথকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও সুই চেংয়ের এই নতুন চলচ্চিত্র বিনামূল্যে ইন্টারনেটে প্রদর্শিত হয়েছে।

 

তারপর আমরা ‘কুয়েন হু’ নামে আরেকজন পরিচালকের কথা বলতে চাই। ২০১৯ সালের শাংহাই চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হওয়ার কথা ছিলো ‘The Eight Hundred’ নামে কুয়েন হু’র পরিচালিত চলচ্চিত্রটি। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে হঠাত্ করেই সেটি প্রদর্শন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাহলে কবে তা মুক্তি পাবে? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন নি পরিচালক কুয়েন হু।

বিদায়ী বছর চীনসহ বৈশ্বিক চলচ্চিত্রাঙ্গন_fororder_guanhu

২০২০ সালের ২০ জুলাই মাসে সিনেমা হল একে একে খুলে দেওয়ার পর থেকে বক্সঅফিসে চলচ্চিত্রের অবস্থা তেমন সন্তোষজনক ছিল না। গোটা চলচ্চিত্র বাজার উদ্ধার করতে অনেক আকর্ষণীয় একটি চলচ্চিত্রের খুব প্রয়োজন। ২১ অগাস্ট ‘The Eight Hundred’ নামে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। যুদ্ধের মহান দৃশ্য-বিন্যাস এবং দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকদের চেপে রাখা চলচ্চিত্র উপভোগের দাবি পূরণ করে ‘The Eight Hundred’ চলচ্চিত্র।

বক্সঅফিসে ৩১১ কোটি ইউয়ানেরও বেশি আয়ের কারণে ‘The Eight Hundred’ চলচ্চিত্রটি মুল-ভূভাগে বার্ষিক শীর্ষস্থান অধিকারের পাশাপাশি, সারা বছরে বৈশ্বিক বক্সঅফিসে বার্ষিক চ্যাম্পিয়নও হয়ে ওঠে।

 

দু’মাস পর কুয়েন হু’র পরিচালিত আরেকটি যুদ্ধসংক্রান্ত চলচ্চিত্র ‘The Sacrifice’ প্রদর্শিত হয়। এই চলচ্চিত্রটি বক্সঅফিসে পারফর্মেন্স ও দর্শকপ্রিয়তা ‘The Eight Hundred’ মতো ভালো নয়, তবে এটিও ১১০ কোটি ইউয়ান আয় করে। ফলে চলতি বছর কুয়েন হু চীনের ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রাঙ্গনের সবচে জনপ্রিয় পরিচালক হয়ে ওঠেন।

এবার আমরা ‘চাং ই মৌ’ নামে আরেকজনের সঙ্গে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। বলা যায়, তিনিই চীনের চলচ্চিত্রাঙ্গনের মাস্টার। ২০১৯ সালে ৬৯তম বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয় তার তৈরি চলচ্চিত্র ‘One Second’। তবে, অবশেষে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সেই ইউনিট থেকে চলচ্চিত্রটি সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।

বিদায়ী বছর চীনসহ বৈশ্বিক চলচ্চিত্রাঙ্গন_fororder_zhangyimou

দু’বছর পর প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান হলে এ চলচ্চিত্রটি ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিচালকের বর্তমান বয়স ৭০ বছরেরও বেশি। তারপরও চাং ই মৌ নিজের রচনার গতি বন্ধ করেন নি। আশা করা যায়, নতুন বছর তার কাছ থেকে আমরা আরো অনেক উন্নতমানের চলচ্চিত্র উপহার পাবো।

 

 চীনের চলচ্চিত্রাঙ্গনের বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের কথা জেনে নেওয়ার পর এখন ২০২০ সালে বিশ্বের চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের কয়েকটি বড় ঘটনার কথা জানাবো।

 

মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে ২০২০ সালে কান চলচ্চিত্র উত্সব ইতিহাসে দ্বিতীয় বারেরমতো স্থগিত করা হয়। তবে, গত ২৫শে জুলাই শাংহাই চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধন করা হয়। বৈশ্বিক মহামারী শুরু হলে এই প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের আয়োজন করা হয়।

 

লেডি গাগা’র উদ্যোগে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মহা-তারকার অংশগ্রহণে ‘one world: together at home’ শিরোনামে দাতব্য অনলাইন সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মহামারী প্রতিরোধের লড়াইয়ে জনগণকে উত্সাহিত করেছে।

 

২০২০ সালে চীনের চলচ্চিত্র বক্সঅফিসের মোট আয় ২০০০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন প্রথমবারের মতো বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র টিকেটের গুদামে পরিণত হবে।

আগেই বলা হয়েছে, ‘লস্ট অন জার্নি’চলচ্চিত্রটি সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়নি। এটি ইন্টারনেটে মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র। এ ঘটনা চীনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।

 

‘007:No Time To Die’, ‘Dune’ এবং ‘Black Widow’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র আগামী বছর প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব চলচ্চিত্র ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো।

‘ওয়ার্নার ব্রুস’ ঘোষণা করে যে, ২০২১ সালে সব চলচ্চিত্র সিনেমা হলে এবং এইচবিও ম্যাক্সে একযোগে প্রদর্শিত হবে।

 

‘Parasite’ নামে দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্রটি ৯২তম অস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ ওরিজিনাল চিত্রনাট্য এবং শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পুরস্কার জয় করেছে। যার ফলে নতুন ইতিহাসও সৃষ্টি করেছে এটি।

 

চাও থিং বা Chloé Zhao ক্লোই চাও ‘Nomadland’ নামে এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবের গোল্ডেন লায়ন অ্যাওয়ার্ড ছিনিয়ে নেন। তিনি ইউরোপের তিনটি চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কার পাওয়া প্রথম চীনা নারী চলচ্চিত্র পরিচালক।

 

প্রিয় বন্ধুরা, ২০২০ সাল আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিচ্ছে। আশা করি, আসন্ন ২০২১ সালে অস্থিরতা কিছুটা কমবে এবং সৌন্দর্য ও সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে।

 

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)