ভালো সাংবাদিকদের ভালো গল্প শোনা
2020-11-12 20:17:21

নিজের দায়িত্ব মনে রাখা, ঘটনাস্থলে যাওয়া, জনগণের কথা শোনা এবং চীনের গল্প বলা--- এসব কথা বললে, আপনার মনে কোন পেশার কথা মনে হয়?

হ্যাঁ, সাংবাদিকতা।

২০২০ সালে চীনের সাংবাদিক দিবস উপলক্ষ্যে ‘ভালো সাংবাদিকের ভালো গল্প বলা’ শিরোনামে এক বিশেষ অনুষ্ঠান ৮ নভেম্বর চায়না মিডিয়া গ্রুপের সিসিটিভি’র সার্বিক চ্যানেলে প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানে ১৩জন সাংবাদিক তাঁদের সাক্ষাত্কারের অভিজ্ঞতা ও তার পিছনের গল্প বলেন। অনুষ্ঠানে ২০২০ সালে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় সাংবাদিকদের চমত্কার পারফর্মেন্স তুলে ধরা হয়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবো।

 

মহামারী প্রতিরোধের ফ্রন্ট-লাইনে কাজ করেন তাঁরা।

চলতি বছরের শুরুর দিকে উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। ২৩ জানুয়ারি শহরটি লকডাউন করা হয়। ৮ এপ্রিল লকডাউন তুলে নেওয়া পর্যন্ত ৭৬ দিনব্যাপী এ শহরের প্রতিটি মুহূর্ত সব চীনা নাগরিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

 

চিকিত্সক থেকে নার্স পর্যন্ত, মেডিকেল বর্জ্য নিষ্পত্তি স্টেশনের কর্মী থেকে কমিউনিটির সম্পাদক পর্যন্ত, রোগী থেকে শুরু করে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তি পর্যন্ত সার্বিক বিষয় রেকর্ড করেন সিএমজি’র সাংবাদিক তোং ছিয়েন। তিনি শহরটির খুঁটিনাটি বিষয় ধারণ করেন। তিনি বলেন, আমি যে কাজ করেছি তা হলো আমার দেখা ও অনুভব করা বিষয় এই লকডাউনের শহর থেকে প্রচার করা এবং আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা।

 

মনোযোগ দিয়ে সম্প্রচার করা এবং ঘটনার গভীরতা ও উষ্ণতা অনুভব করা হলো সব সাংবাদিকের অভিন্ন চেষ্টা।

অন্যকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া হাসপাতালের প্রধান, দিনরাত ফ্রন্ট-লাইনে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীর কথা বলেছিলেন পিপলস ডেইলি পত্রিকার সাংবাদিক উ শান। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে চোখের পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি।

 

হুপেই ডেইলি পত্রিকার সাংবাদিক খ্য হাও উহানের চিয়াংহান স্টেডিয়াম বা প্রদর্শনীকেন্দ্রে নির্মিত অস্থায়ী হাসপাতালে দেখা এক তরুণের বই পড়ার ঘটনা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, সে সময় আমি তার বই পড়ার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সেই মুহূর্তে আমি ভাবছিলাম যে, তিনি প্রচণ্ড মানসিক শক্তি প্রকাশ করছেন। তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, প্রাণঘাতী রোগের সামনে দাঁড়িয়েও উহান শহর ও উহানবাসী কত দৃঢ়; এটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। খ্য হাও বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে উহান শহর রক্ষার লড়াইয়ে ক্যামেরার পাশাপাশি আমার চোখও একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে।

 

মহামারীর সময় সিনহুয়া বার্তা সংস্থার হুপেই শাখা সংস্থার সাংবাদিক সিয়োং ছি দশ বারেরও বেশি ‘লাল অঞ্চল’ বা অতি বিপজ্জনক অঞ্চলে গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। খুব কাছে থেকে মহামারী প্রতিরোধের দৃশ্য রেকর্ড করেছেন তিনি। তিনি বলেন, দায়িত্বশীল মূল্যবোধ থেকে বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে সাংবাদিকের ভূমিকা পালন করা উচিত্।

 

খবরা-খবর দিয়ে জনগণের মনের কথা প্রকাশ করেন তারা।

‘জাতীয় সুরক্ষিত অঞ্চলের প্রাণী কৃষকদের মাটিতে পুঁতে রাখা বীজ চুরি করে খেয়ে ফেলে, তাহলে কে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেবে?’ ‘সরকারি পুনর্বাসনের আবাসন কেন্দ্রটি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে?’ চিয়াংসু প্রদেশের বেতার ও টিভি কেন্দ্রের সাংবাদিক ওয়াং চিন চিন সংলাপ ও আন্তরিকতার মাধ্যমে সরকারের সংস্কারের গল্প তুলে ধরছিলেন।

 

একজন সাংবাদিক হিসেবে সিপিসি’র নীতিমালা প্রচারকারী, যুগের ঘটনা রেকর্ডকারী এবং সামাজিক অগ্রগতি অগ্রসরকারী হওয়া উচিত্। ইনারমঙ্গোলিয়ার বেতার ও টিভি কেন্দ্রের সাংবাদিক লেই মোং ইনারমঙ্গোলিয়ায় প্রায় ৪০ বছরব্যাপী পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেন। ছাগল লালন-পালন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক পর্যটন উন্নয়নের সময়টি বেশ দীর্ঘ। বর্তমানে ইনারমঙ্গোলিয়ার পশুপালকরা ধনী হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।

 

কুয়াংমিং ডেইলি পত্রিকার সাংবাদিক ছাং হ্য গ্রামাঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ইয়ে লিয়েন পিংয়ের গল্প তুলে ধরেছেন। তিনি টানা ২১ বছর ধরে বিনামূল্যে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি ভাষা শেখাচ্ছেন। তিনি নিজেকে ‘জোনাকি’ হিসেবে গণ্য করেন। তবে, তার মতো এক একটি জোনাকি গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ আলোকিত করে তুলেছেন।

 

তারা বাস্তব পদক্ষেপ দিয়ে চীনা গল্প বলেন

চীনে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পিছনে অসংখ্য সাংবাদিকদের চীনা গল্প এবং চীনের প্রচেষ্টা রয়েছে।

তুহুয়াংতে উট চালিয়ে বিদেশি নেটব্যবহারকারীদের রেশম পথের গল্প তুলে ধরেছেন সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সাংবাদিক শাং ইয়াং। চীনের ‘দুই অধিবেশন’ চলাকালে ভ্লগের মাধ্যমে মহামারীর বিশেষ সময় চীনের রাজনৈতিক মহান সম্মেলন তুলে ধরেন তিনি।

 (লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)