বাংলাদেশের রংপুর জেলার গোয়ালু ডি.এক্স রেডিও লিসেনার্স ক্লাবের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন, '১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়অরী মাসের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। আমার জীবনে বেতার অনুষ্ঠানের আরেক দ্বার উন্মোচিত হল। রেডিও নব ঘুড়াতে ঘুড়াতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় সুমিষ্ঠ কন্ঠের আওয়াজ আমার কানে ভেসে এলো। আমি মনোযোগ দিয়ে সেদিনের সে সুমিষ্ঠ কন্ঠের অনুষ্ঠানমালা শুনছিলাম। খুবই ভাল লেগেছিল আমার সেই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে জানতে পারলাম সেটি ছিল চীন থেকে প্রচারিত রেডিও বেইজিং এর বাংলা অনুষ্ঠান। তখন আধাঘন্টার বাংলা অনুষ্ঠান পুণঃপ্রচারিত হত। তাই তো সেদিন পুনরায় সে আধাঘন্টার অনুষ্ঠান মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। পরবর্তী পর্যায়ে রেডিও বেইজিংয়ের বাংলা অনুষ্ঠানের কথা আমি আমার আব্বা, মা, ভাই, বোন ও বন্ধু বান্ধবসহ অনেকেই জানালাম। পরদিন থেকে আমরা বাড়ীর সবাই এক সঙ্গে বসে রেডিও বেইজিং এর বাংলা অনুষ্ঠান মালা শুনতাম। ভীষন ভীষন ভাল লাগত তখনকার সেই অনুষ্ঠান মালা। প্রতিদিন রেডিও বেইজিং এর অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি ঠিকানা সংগ্রহ করে জীবনের প্রথম চিঠি রেডিও বেইজিং এ লিখে পাঠালাম। এক মাসের মধ্যেই রেডিও বেইজিং থেকে পাঠানো আমার ঠিকানায় একটি চিঠি পেলাম। চিঠির খামের মধ্যে ছিল কয়েকটি ভিউ কার্ড অনুষ্ঠান সূচী আর উত্তর পত্র। এগুলো পেয়ে আমি সীমাহীন আনন্দে আনন্দিত হলাম। ভিউ কার্ডগুলোর কয়েকটি নিজে সংরক্ষণ করলাম। আর অবশিষ্টগুলো বন্ধুবান্ধবসহ অনেকের মাঝে বিতরণ করে দিলাম। সেদিনের সে অনুভূতিগুলো আজও আমার মনে দোলা দেয়। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানের কোন তুলনা হয় না। এর খবর ও প্রতিবেদনগুলো অত্যন্ত নিরপেক্ষ, তত্ত্ব ও তথ্য বহুল এবং বস্তুনিষ্ঠ। অনুষ্ঠানগুলো সুন্দর, আকর্ষণীয় ও জ্ঞান গর্ভমূলক যা খুব সহজেই শ্রোতাদের মনকে আকৃষ্ট করে। তাইতো সকাল এবং সন্ধ্যা হলেই শ্রোতাগণ গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শোনার জন্য। পরিশেষে বলতে পারি চীন আন্তর্জাতিক বেতার তার সুন্দর সুন্দর ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে তার শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রাখুক। সে কামনা করছি। আধুনিক যুগে বেতারের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, জীবন গঠনের শিক্ষা গ্রহণ করতে, চীন ও বিশ্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সকলেই নিয়মিত সি.আর.আই শুনুন, চিঠি লিখুন, বিশ্বকে জানুন। সি.আর.আই ও শ্রোতাদের মাঝে সম্পর্ক শীশাঢালা প্রচীরের ন্যায় সুদৃঢ় হোক সেই প্রত্যাশাই করছি। সিআরআই এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই দীর্ঘজীবি হোক।'
বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার সিআরআই লিসেনার্স ক্লাবের পরিচালক ফরহাদ হোসেন তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন, '১৯৭২ কিংবা ১৯৭৩ সালের কথা। আমার ছোট বেলাতে পড়ার টেবিল বসে বড় ভাইয়ের রেডিও থেকে সিআরআই'র কন্ঠ আমার কানে ভেসে আসত। ভাল মন্দ বুঝতাম না শুধু আড়ি পেতে শুনতাম চীনাদের কন্ঠে বাংলা কথা কথাগুলো আমার খুব ভাল লাগত। এই ভাললাগা আর ভালবাসার কারণে ১৯৭৬ সাল থেকে আমি সিআরআইর'র বাংলা অনুষ্ঠান নিয়মিত শুনে থাকি। মাত্র আধা ঘন্টার অনুষ্ঠানে খবর প্রতিবেদন আর সংগীতের মধ্য দিয়ে সিআরআই'র অনুষ্ঠান আমার আকৃষ্ট করত। সিআরআই'র সাথে বন্ধুত্বের পাহাড় গড়ে তোলার ল্কষ্যে ১৯৮১ সালের ৪২জন সদস্য নিয়ে সিআরআই লিসেনার্স ক্লাব গঠন করি। ৮০'র দশকে সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠানের মান আরও উন্নত হয়। এসময় আমি অনুষ্ঠান শুনার পাশাপাশি পত্র যোগাযোগ অব্যাহত রাখি। সিআরআইর'র আন্তরিকতায় বাংলা অনুষ্ঠানের ১৫ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে চীন ভ্রমনের সুযোগ লাভ করি। বছরের ২০শে এপ্রিল চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে দু সপ্তাহ চীন ভ্রমন করি। এই সময় সিআরআই'র বাংলা বিভাগের কর্মী বন্ধুদের সাথে পেইচিং সিআন সাংহাই ও হাংচৌ এলাকা ভ্রমনে যে আন্তরিকতা ও অতিথিপরায়নতার ছোঁয়া পেয়েছি তা কোন দিন ভূলার মত নয়। আমি এবং সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠান যেন একই ফুলে গাঁথা মালা। সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠান আমার নিকট ৪০ বছরের এক স্বচ্ছ দর্পন। এ দর্পনে প্রতিদিন আমার মনের ছবি ও চীন দেশকে দেখতে পাই। অনুভব করি চীনাদের কথা চীন দেশের কথা চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর কথা। তাই আমি সিআরআই'র সাথে গড়ে তুলতে চাই বন্ধুতের অনাবিল পাহাড়। যে পাহাড় কোনদিন বালির বাধের মত ভেঙ্গে যাবে না।' |