শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের " সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব" অনুষ্ঠানে আমরা পেইচিংয়ের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অনুবাদক চাং চিয়ান হুয়া'র গল্প আপনাদেরকে শোনাবো এবং তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। ৩০ বছর ধরে চাং চিয়ান হুয়া রুশ সাহিত্য প্রচারের লক্ষ্যে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এ জন্য রাশিয়া সরকার এবং সে দেশের সাহিত্য মহল তাকে বহু পুরস্কার প্রদান করেছেন। চাং চিয়ান হুয়া বলেন, নিজের সর্বোচ্চ সাফল্যে কত বই প্রকাশিত হলো তা নয়, বরং নিজের শিক্ষাদানের মাধ্যমে বেশি মানুষ রুশ সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
১৯৪৫ সালে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের চে চিয়াং প্রদেশে চাং চিয়ান হুয়ার জন্ম । চাং চিয়ান হুয়া বলেন, ছোটবেলায় তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় একজন রুশ নাগরিকের। সেসময় চাং চিয়ান হুয়ার ইংরেজি ভাষা বেশ ভাল থাকায় এ রুশ নাগরিকের সাথে কথা বলার সময় তার কোন সমস্যা হয় নি। এ সম্পর্কে তিনি স্মরণ করে বলেন:
" আমার স্মরণ শক্তি ও অনুভূতি বেশ প্রবল। প্রথবারের কথাবার্তা আমার মনে দৃঢ় ছাপ ফেলেছে। এটি ভবিষ্যতে আমার রুশ ভাষা শেখার জন্যও অনেক সহায়ক হয়েছে।"
এ থেকে চাং চিয়ান হুয়া বুঝতে পেরেছেন যে, বিদেশী ভাষা বিশ্বকে সুষ্ঠুভাবে জানার লক্ষ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। সুতরাং, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে তিনি সাফল্যের সঙ্গে পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ ভাষা বিভাগে ভর্তি হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষা শেখার সময় চাং চিয়ান হুয়া খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতেন। অবশেষে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি রাশিয়ার কিছু কিছু লেখকের সাহিত্য কর্ম অনুবাদ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে তিনি পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তখন থেকেই তাঁর রাশিয়ার সাহিত্য সংক্রান্ত অনুবাদ কাজ শুরু হয়ে যায়। চাং চিয়ান হুয়া রুশ ভাষার শিক্ষাদান এবং অনুবাদের কাজে প্রায় ৩০ বছর পার করে দিয়েছেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অনেকেই স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সব শিক্ষকের ওপর শিক্ষাদানের গুণগত মান সংক্রান্ত জরীপে ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী চাং চিয়ান হুয়ার খুব উচ্চ পর্যায়ের মূল্যায়ন করেছেন। চাং চিয়ান হুয়া বলেন, ছাত্রছাত্রীদের উচিত ভাষা শেখা , সাহিত্য নিয়ে গবেষণা এবং চিন্তা ভাবনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কল্যাণ সৃষ্টি করা। সেজন্য এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ভালোভাবে আলোচনা করা। আসলে আলোচনার প্রক্রিয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া এবং তাকে আত্মস্থ করার প্রক্রিয়া। এ সম্পর্কে চাং চিয়ান হুয়া বলেন:
" সকল ছাত্রছাত্রীর সঙ্গেই আমার খুব ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমার ক্লাসে মাঝে মাঝে আলোচনা বা বিতর্কের আয়োজন করা হয়। কারণ, সাহিত্যের ক্লাসে কারো নিজের উপযুক্ত মতামত থাকলে সরাসরিভাবে সবার সামনে তা ব্যাখ্যা করতে পারে। তরুণ -তরুণীদের মতামত একটু উন্মুক্ত, তবে তাদের যুক্তি সঠিক হলে , আমি নিশ্চয় তাদের মতামত গ্রহণ করি। সুতরাং, আলোচনা বা বিতর্কের প্রক্রিয়া ছাত্রছাত্রী এবং আমার জন্য একটি খুবই আনন্দের বিষয়।"
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের সময় এমন ধরণের আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন ছাত্র শিক্ষক চাং চিয়ান হুয়ার রুশ সাহিত্যের ক্লাস শুনার পর, ইংরেজির পরিবর্তে রুশ ভাষা শেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষক চাং চিয়ান হুয়ার শিক্ষাদানের গুণগত মান যে কত ভাল তা এতেই প্রমাণিত হয়।
বর্তমানে চাং চিয়ান হুয়ার সাহিত্য কর্ম অনুবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্যের অনুবাদ করা। তাঁর প্রকাশিত অনেক অনুবাদ কর্ম হচ্ছে রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্য। তবে অনেক মানুষই এ সংশ্লিষ্ট বিষষের ওপর খুব কম জানেন। সাধারণত মানুষ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যের কথাই বেশি জানেন।
চাং চিয়ান হুয়া বলেন, তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য মানুষের প্রশংসা পাওয়া নয়, বরং বহু বছর ধরে নিজের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও অনুবাদের মাধ্যমে আরো বেশি চীনারা যাতে রাশিয়ার সংস্কৃতিকে জানতে এবং বুঝতে পারে সে বিষয়ে কাজ অব্যাহত রাখা। এ সম্পর্কে চাং চিয়ান হুয়া বলেন:
" আমি আমার কাজকে অনেক পছন্দ করি। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমার সাহায্যে চীনাদের রাশিয়ার সাহিত্য সম্পর্কে জানতে সক্ষম হওয়া।"
চাং চিয়ান হুয়া রাশিয়া সরকার ও সাহিত্য মহলের অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৬ সালে তিনি রাশিয়ার লেখক সমিতির " মাক্সিম গোর্কি পুরস্কার" গ্রহণ করেছেন। এটি হচ্ছে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক মহলে চাং চিয়ান হুয়ার রাশিয়ার সাহিত্য শিক্ষাদান ও গবেষণার উচ্চ পর্যায়ের স্বীকৃতি পাওয়ার প্রতীক।
|