v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পিকিং অপেরার তরুণী শিল্পী চিয়া ফেং ফেই
2009-10-14 21:26:45

আজকের অনুষ্ঠানে চীনের একজন তরুণী পিকিং অপেরা শিল্পীর কাহিনী আপনাদের বলবো । এ তরুণী শিল্পীর নাম চিয়া ফেং ফেই । চিয়া ফেং ফেই একজন সুন্দরী মেয়ে । তার গলার স্বর মিষ্টি । তিনি পিকিং অপেরায় তরুণী মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন । সম্প্রতি তিনি চীনের নামকরা পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লান ফানের রচিত পিকিং অপেরা ' থিয়েন নুই সান হুয়া 'তে স্বর্গীয় পরির চরিত্রে অভিনয় করেন । এ অপেরা দেশবিদেশে অনেকবার পরিবেশিত হয়েছে এবং দর্শকদের দারুণ সমাদর পেয়েছে । দর্শকরা এ অপেরায় তার অভিনীত সুন্দরী পরির চরিক্রই বিশেষভাবে পছন্দ করেছে । তাই অনেকেই তাকে তার নাম ধরে না ডেকে তাকে স্বগীয় পরি বলে ডাকতে পছন্দ করে ।

পিকিং অপেরা ' থিয়েন নুই সান হুয়া 'র মেঘ পথ নামে অংশে চিয়া ফেং ফেই হাতে ১৫ মিটার লম্বা সিল্কের রঙীন ফিতা উড়িয়ে অভিনয় করেন । অভিনয়ের সময় তিনি পাক খাওয়া ও লাফ দেয়ার মাধ্যমে হাতের রঙীন ফিতা আন্দোলিত করেন , তার হাতের উড়ন্ত ফিতা রঙীন মেঘের মতো দেখায়। নাচের সঙ্গে তিনি অপেরার গানও করেন । এ অপেরার জন্য চিয়া ফেং ফেইকে এক সময় প্রতিদিন লম্বা ফিতা হাতে নিয়ে কঠোর চর্চা করতে হয়েছিল ।

' থিয়েন নুই সান হুয়া ' চীনের পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লান ফানের রচিত একটি নৃত্যনাট্য । এ নৃত্যনাট্যের কাহিনী বৌদ্ধশাস্ত্র থেকে নেয়া একটি প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী । ওয়েই মো একজন বুদ্ধ ভিক্ষু , তিনি প্রতি দিন সারা রাত বৌদ্ধ শাস্ত্র পড়েন , ফলে তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে । বৌদ্ধ শাক্যমনি স্বগীয় পরিকে ওয়েই মোর ঘরে ফুলের পাপড়ি ছড়ানোর আদেশ দেন । অপেরার এ অংশে স্বর্গীয় পরির ওয়েই মোর ঘরে যাওয়ার পথের দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে । অপেরায় শিল্পী চিয়া ফেং ফেইয়ের হাতের ফিতার আন্দোলন ও গানের সুর ধীরে ধীরে দ্রুত লয়ের দিকে যেতে থাকে । এতে আকাশের মেঘের দ্রুত পরিবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় । এ প্রসঙ্গে চিয়া ফেং ফেই বলেন , এ অংশে আমার নাচ হলো রঙীন ফিতার নাচ । ১৫ মিটার লম্বা ফিতা উড়ানো খুব একটা সহজ ব্যাপার নয় । আমার হাতের রঙীন ফিতা আকাশে রংধনু থাকা মেঘের প্রতীক । আকাশ থেকে পৃথিবীতে নামার পথ হল মেঘের পথ । তাই পরি মেঘের পথ বেয়ে বুদ্ধ ভিক্ষু ওয়েই মোর ঘরে যাওয়ার সময় পথের দৃশ্য গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে ।

এ বছরের জুন মাসে জাতিসংঘ অর্থনীতি ও সমাজ বিষয়ক বিভাগের আমন্ত্রণে চিয়া ফেং ফেই ও তার কয়েকজন সহকর্মী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এ পিকিং অপেরা পরিবেশন করেছেন । এ অপেরা জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । চিয়া ফেং ফেই বলেন , এ অপেরাই একটি নৃত্যনাট্য , জাতিসংঘের কর্মকর্তারা অপেরার কাহিনী হয়ত পুরোপুরি বুঝতে পারে নি , তবে নাচের মাধ্যমে সৃষ্ট পরিবেশের অর্থ সারা বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারেন । তাই এ অপেরা উপভোগ করে জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা তুমুল করতালির মাধ্যমে তাদের মনের আনন্দ প্রকাশ করেছেন ।

চিয়া ফেং ফেই দশ বছর বয়স থেকে পিকিং অপেরা শিখতে শুরু করেন। তিনি ছোট বেলায় শিশুদের একটি অপেরা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান । পরে তিনি চীনের অপেরার সর্বোচ্চ বিদ্যালয়—চীনের কেন্দ্রীয় অপেরা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন । সেখানে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দুজন শিক্ষক পান । এ দুজন শিক্ষক হলেন ওয়াং চি ই ও চান চিং । তিনি তাদের কাছ থেকে পিকিং অপেরার অভিনয় কলা শিখেন । তার শিক্ষক ওয়াং চি ই হচ্ছেন চীনের নামকরা পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লাই ফানের ছাত্র আর চান চিং হলেন মেই লান ফানের ছেলে মেই পাও চিউয়ের ছাত্র ।

চিয়াং ফেং ফেই বলেন , পিকিং অপেরা শেখার ব্যাপারে ক্লাস নেয়ার পরিবর্তে সাধারণত একজন শিক্ষক একজন ছাত্রকে শিখান । আমার দু'জন শিক্ষক পিকিং অপেরার গান ও অভিনয় শেখার ক্ষেত্রে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন । পিকিং অপেরার গান পরিবেশনায় বিভিন্ন শিল্পীর বিভিন্ন স্টাইল রয়েছে । আমি বিখ্যাত পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লান ফানের গান পছন্দ করি , তাই তার গানের স্টাইল শেখার চেষ্টা করেছি । আমার দু'জন শিক্ষক মেই লান ফানের গানের স্টাইলের উত্তরাধিকারী । তাই তারা মেই লান ফানের বৈশিষ্ট্য ভালো করে জানেন । তা ছাড়া গানের সঙ্গে অভিনয় ও চোখের পলকের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতাও বেশি। 

চিয়া ফেং ফেই যখন পিকিং অপেরা শিখতে শুরু করেন , তখন তার বয়স খুব কম ছিল । সেই সময় তিনি পিকিং অপেরার কাহিনী পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেন নি । শুধু জানেন অভিনয়ের সময় সুন্দর সুন্দর পোশাক পরতে পারা যায় । এখন পিকিং অপেরার প্রতি তার ভালোবাসা অনেক বেড়েছে । তিনি বলেন ,আমি প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় পিকিং অপেরা শিখতে শুরু করি । তখন আমি মনে করতাম পিকিং অপেরা এক মজার অপেরা। অভিনয়ের আগে মুখের মেকআপ সুন্দর , গায়ের পোশাকও সুন্দর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি পিকিং অপেরা সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পেরেছি । প্রথম দিকে তার সৌন্দর্য পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি নি , এ অপেরা শেখার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি আমার আসক্তিও বেড়ে যায় । এখন পিকিং অপেরা আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ , কোনো দিন আমি পিকিং অপেরার চর্চা বর্জন করবো না । বাসায় শিক্ষক বা অন্য শিল্পীর অভিনয়ের ডি ভি ডি দেখা ও থিয়েটারে বিখ্যাত শিল্পীর অভিনয় উপভোগ করা আমার সবচেয়ে পছন্দ দুটি কাজ ।

পিকিং অপেরা একটি বহুমুখী শিল্পকলা । অভিনয়ের সময় অন্য অভিনেতা- অভিনেত্রী ও বাদক দলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে । ' থিয়েন নুই সান হুয়া ' যদিও দেশবিদেশে অনেক পরিবেশনা হয়েছে , তবুও প্রত্যেকটি পরিবেশনার আগে অভিনেতা –অভিনেত্রীরা বাদক দলের সঙ্গে রিহার্সাল করেন এবং এ সময় প্রত্যেকবারই নতুন অনুভূতি পাই । পুরনো অপেরা হলেও মঞ্চে শিল্পীর অভিনয় ও বাদক দলের কোনো ত্রুটি বরদাস্ত করা যায় না । তা ছাড়া প্রত্যেক অনুষ্ঠানে অভিনেতা -অভিনেত্রীদের অনুভূতিও একই নয় । সুরের সাথে শরীর ও হাতের ভঙ্গি আরো সুন্দরভাবে মেলানোর জন্য বাদক দলের সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । চিয়া ফেং ফেইয়ের বয়স কম হলেও তিনি তার ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তা করেন । তিনি আশা করেন ,ভবিষ্যতে পিকিং অপেরায় অভিনয়ে আরো বেশি নারী চরিত্র সৃষ্টি হবে । তিনি এটাও আশা করেন যে দর্শকরা অব্যাহতভাবে তাকে সমর্থন করবেন এবং তার অভিনয় পছন্দ করবেন।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China