পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের তথ্য মন্ত্রী হোসাইন ১২ অক্টোবর জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার কাছে সোমবার সামরিক গাড়িবহর লক্ষ্য করে এক সন্দেহভাজন আত্মঘাতী হামলাকারীর হামলায় ৪১জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬জন নিরাপত্তা বাহিনী সদস্য রয়েছে।আহত হয়েছে আরো ৪৫ জন।
স্থানীয় টেলিভিশনের এক খবরে জানা গেছে, সোমবার সাংলার আলপুরি বাজারের কাছে আধা সামরিক বাহিনীর একটি গাড়িবহর সেনাচৌকির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আত্মঘাতী হামলাকারীরা হেঁটে এসে গাড়ি বহরের মধ্যে ঢুকে দেহে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় আহতদের আশাপাশের হাসপাতলে পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এর পর এ এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি কাজও সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এক বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন।
এখন পযর্ন্ত কোন সংস্থা বা ব্যক্তি এবারের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নি। কিন্তু জনমত অনুযায়ী, এটা সম্ভবত তালেবানদের চালানো একটি প্রতিশোধমূলক আক্রমন। গত এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানে তালেবান জঙ্গীরা চার বার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। গত ৫ অক্টোবর ইসলামাবাদে জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচি অফিসের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। গত ৯ অক্টোবর তালেবানরা পেশেয়ারে এক গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছে। এতে ৪৯জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
তালেবানদের রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দফতরে গত শনিবারের হামলার দায়িত্ব স্বীকার এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে আফগান সীমান্তের কাছে জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে সামরিক অভিযান শুরুর পর্যায়ে এ হামলার ঘটনা ঘটনো। জনমত অনুযায়ী, বতর্মানে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে প্রায় দশ হাজার তালেবান আছে। গত দু এক বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের চালকবিহীন বিমন ও পাকিস্তানের সামরিক বিমানগুলো বেশ কয়েক বার এই অঞ্চলে হামলা করেছে। কিন্তু কোন স্থল সামরিক অভিযান হয়নি। একটি খবরে জানা গেছে, এ অঞ্চলে জঙ্গি নির্মূলে স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, বড় আকারের স্থল অভিযান আসন্ন। তিনি আরও বলেন, তাদের কোন দয়া করা হবে না। কারণ , আমরা তাদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। পাকিস্তানে তাদের কোন স্থান নেই। এক সাক্ষাত্কারে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক বলেন, রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরে হামলার পেছনে তালেবান ও আল আয়দা জঙ্গিরা জড়িত বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে এই জঙ্গিদের ঘাঁটি। মালিক আরও বলেন, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানোটা এখন আর পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার নয়, প্রতিশ্রুতি পূরণেরও ব্যাপার নয়, এটি এখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষনের উদ্দেশ্যে তালেবানরা ঘনঘন হামলা চালিয়েছে। তালেবানের মুখপাত্র থালিক ১২ অক্টোবর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একঁগুয়েভাবে ওয়াজিরিস্তানের ওপর সামরিক অভিযান চালাতে চায় তাহলে তাদের বাঁচানোর কোন উপায় নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গার তালেবানরা ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাবে।
এর পাশাপাশি ঘনঘন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক আবার জটিল হয়ে উঠেছে।গত বছরের নভেম্বরে মুম্বাই হামলার শিকার হওয়ার পর, ভারত সরকার মনে করে, সে হামলা পাকিস্তানের সশস্ত্র সংস্থার পরিচালনায় চালানো হয়। |