আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাশালি ৮ অক্টোবর বলেছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে বৃহস্পতিবার এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় ১৭জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৮৪ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ভারতীয় দূতাবাসের সামনের সিমেন্ট দিয়ে তৈরী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বংস্ত হয়েছে। তা ছাড়া আশেপাশের বেশ কয়েকটি গাড়িও বিধ্বংসিত হয়েছে। রাস্তার আশেপাশের কয়েজ ডজন দোকান কম বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁচের টুকরা যেখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় তথ্য মাধ্যমে বলা হয়েছে, এবারের বিস্ফোরণ বড় আকারের।বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। ঘটনার পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। উদ্ধার ও তদন্ত কাজ অব্যহত রয়েছে। সে দিন এক বিবৃতিতে এই হামলাকে " বর্বরোচিত " বলে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট কারজাই উল্লেখ করে বলেন, আফগানিস্তানের নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।
তালেবান জঙ্গীরা এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। ইতোমধ্যে তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হলো আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাস। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও ৮ অক্টোবর নয়া দিল্লিতে এ হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, দূতাবাসের কোন লোক এবারের হামলায় হতাহত হয়নি। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফগানিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তালেবান জঙ্গীরা ভারতীয় দূতাবাসকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছিল। এতে কমপক্ষে ৪১জন নিহত এবং ১৪০জনেরও বেশী আহত হয়েছিল। এ হামলার পর ভারতীয় দূতাবাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। দূতাবাসের সামনে সিমেন্ট তৈরী প্রতিরক্ষা স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে।
বতর্মান পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আফগানিস্তানে বিদেশী নাগরিক ও বিদেশী সৈন্যদের ওপর তালেবান জঙ্গীদের বোমা হামলার ঘনঘন ঘটনা ঘটেছে। গত দু'মাসে কেবল রাজধানী কাবুলে পাঁচ বার আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কড়াকড়ি সতর্ক অবস্থায় রাখা ন্যাটোর সদর দফতর ও সামরিক ঘাঁটিগুলো পর পর হামলার শিকার হয়েছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কাবুল শহরের নিকটবর্তী এলাকায় ন্যাটোর গাড়িবহর হামলার শিকার হয়। এতে ৬ জন ইতালির সৈন্য ও ১০জন আফগান বেসারিক ব্যক্তি আহত হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর আফগানিস্তানে বিদেশি সৈন্যের মৃতের সংখ্যা ৪০০ জন ছাড়িয়ে গেছে।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সৈন্যের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তালেবানের হামলা কিছুতেই কমেনি। যার ফলে ন্যাটোর বিভিন্ন দেশ বড় চাপের মুখে পড়েছে। গত মাসের ১৭ তারিখে ৬ জন ইতালির সৈন্য বোমা হামলায় মারা যাওয়ার পর চাপের কারনে ইতালির প্রধান মন্ত্রী সিলভিও বেরলুসখোনি ঘোষণা করেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তার দেশের ৫০০ সৈন্যকে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ সব সৈন্য আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পাঠানো হয়েছিল। অন্য দিকে ব্রিটেনে আফগানিস্তান যুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়ানো জনসাধারণের সংখ্যাও বেড়েছে। সম্প্রতি বি বি সির প্রকাশিত একটি জনমতজরীপে দেখা গেছে, তদন্ত গ্রহকারীদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ ব্রিটিস জনগণ আফগানিস্তান যুদ্ধের বিরোধীতা করেন যা তিন বছর আগের চেয়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে। |