v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
এশীয়-ইউরোপ সংস্কৃতি শিল্পকলা উত্সব বিনিময়ের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে
2009-10-07 20:57:20
শ্রোতাবন্ধুরা, এশীয়-ইউরোপ আদর্শ সিনফোনিয়া, নাটক , নাচগান এবং পুরাকীর্তি শিল্প পণ্যের প্রদর্শনীকে প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে এশিয়া ও ইউরোপের প্রথম সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উত্সব সম্প্রতি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক সপ্তাহব্যাপী এবারের শিল্পকলা উত্সব ২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। এর প্রধান প্রতিপাদ্য হচ্ছে " বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতা ভাগাভাগি"। এশীয়- ইউরোপ সম্মেলনের প্রায় ৪০টিরও বেশি সদস্য দেশ এবারের শিল্পকলা উত্সবে অংশ নেয়। এ শিল্পকলা উত্সবের মধ্যে রয়েছে সংগীত, নৃত্য, অপেরা, শিল্পকলা প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র এবং বই ও ভিডিওসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়। এবারের শিল্পকলা উত্সব সাংস্কৃতিক ফোরামের মধ্য দিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের দু'টি বৃহত্ সভ্যের সংলাপ জোরদার করেছে এবং যৌথভাবে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছে। শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এবারের এশীয়-ইউরোপের সংস্কৃতি শিল্পকলা উত্সবের মহাসম্মিলনী নিয়ে আলোচনা করবো।

এক আনন্দদখন বসন্ত উত্সবের সংগীতের মধ্য দিয়ে এবারের এশীয়-ইউরোপ সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উত্সব শুরু হয়। পোল্যান্ড , ডেনমার্ক, জার্মানি, ফিলিপাইন এবং চীনের বেশ কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পী পিয়ানো, রেকোর্ডার, ট্রাম্পেট এবং পেইচিং অপেরা ফিড্ডলসহ পূর্ব ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গীতের বিন্যাস নিয়ে জে. জোসফ হাইডেন এবং ফ্রেডরিক ফ্রানসিস্কো ছোপিনসহ পশ্চিমা দেশের বিখ্যাত সুরকারদের সংগীত কর্ম এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবেশনা করেছেন। পূর্ব ও পশ্চিমা দেশগুলোর যৌথ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্প পদ্ধতিতে পুরোপুরিভাবে এবারের এশীয়-ইউরোপ সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উত্সবের " বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার ভাগাভাগি"এ প্রধান প্রতিপাদ্যের প্রতিফলন ঘটেছে।

গত বছর পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত সপ্তম এশীয়-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও এশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পালাক্রমে এশীয়-ইউরোপ শিল্পকলা উত্সবের আয়োজনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক ইয়ু সিং ই বলেন, শিল্পকলা উত্সবের মধ্য দিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিনিময় ও সমঝোতা আরও জোরদার করা যাবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: "এশিয়া ও ইউরোপের প্রথম সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উত্সব আয়োজনের লক্ষ্য হচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপের সভ্য ও সংস্কৃতির সংলাপ এবং এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ত্বরান্বিত করা। যা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতার জন্য সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে"।

এশিয়া ও ইউরোপের প্রথম সাংস্কৃতিক শিল্পকলা উত্সবে দিবসকালে এশিয়ার রীতি-নীতি, ইউরোপকে শুভেচ্ছা জানানো এবং চীনা জাতির রীতি-নীতিসহ তিনটি পরিবেশনা খাত ছিল। এর মধ্যে মঙ্গোলিয়া, ভারত এবং ফিলিপাইনসহ এশীয় দেশের চারটি বিশেষ পরিবেশনা এশিয়ার স্থল ও সামুদ্রিক সভ্যতার চমত্কার ভাবমূর্তি তুলে ধরেছে। ইউরোপের পাঁচটি ক্লাসিক্যাল শিল্প বিষয়ক সংগীত অনুষ্ঠান ইউরোপের শিল্পের ক্লাসিক্যাল বিষয় থেকে আধুনিক বিষয়ে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেছে।স্বাগতিক দেশ হিসেবে চীন এবারের শিল্পকলা উত্সবে চীনা জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাটক " লি ছিউ" এবং নৃত্যনাট্য " ই পা সুয়ান চাও" পরিবেশন করেছে।

আপনারা এই মাত্রা শুনলেন বিখ্যাত নাটক " লি ছুই"-এর একটি অংশ। এটি হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের নাটকগুলোর মধ্যে একটি উত্কৃষ্ট কর্ম। এ নাটক চীনের শান সি প্রদেশের উঠান সংস্কৃতিকে পটভূমি হিসেবে গ্রহণ করে একটি ব্যবসায়ী পরিবারের সুখ ও দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করেছে।

শিল্পকলা উত্সব চলাকালে চীন চীনে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সংগ্রহ করা সামগ্রীর প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। যা অনেক দেশি-বিদেশীকে আকর্ষণ করেছে। চীনে রুমানিয়ার দূতাবাসের কাউন্সিলার তাতিয়ানা ইস্টিকিওয়াইয়া বলেন,

" চীনে এশিয়া ও ইউরোপের প্রথম সাংস্কৃতিক শিল্পকলা উত্সবে অংশ নিতে পারায় আমরা অনেক আনন্দিত । চীনের উদ্যোগে শিল্পকলা উত্সব আয়োজন করার ব্যাপারেও আমরা অনেক খুশি হলাম। আমরা মনে করি, চীনা জনগণ বৈদেশিক সংস্কৃতির ব্যাপারে বেশি উন্মুক্ত মনোভাব পোষণ করেন। শিল্পকলা উত্সব একটি খুবই ভাল প্ল্যাটফর্ম। সবাই পারস্পরিকভাবে আরো বেশি জানতে পারেন"।

এবারের শিল্পকলা উত্সবে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উত্কৃষ্ট বই ও ভিডিও পণ্যও বিনিময় বিষয়গুলো প্রদর্শনের মধ্যে অন্যতম। এ সব পণ্যগুলোর মধ্য দিয়ে বিস্তারিতভাবে এশিয়া ও ইউরোপের ৪২টি সদস্য দেশের সংস্কৃতি ও রীতি-নীতি প্রতিফলিত হয়েছে। আপনারা এই মাত্র শুনলেন ডেনমার্কের একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্রের অংশ। চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের চলচ্চিত্র চ্যানেল ১ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একসপ্তাহব্যাপী " এশিয়া ও ইউরোপের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী" তুলে ধরেছে।

এশিয়া ও ইউরোপের প্রথম সাংস্কৃতিক শিল্পকলা উত্সবের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্পরতা হিসেবে পূর্ব ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন ফোরামও এশিয়া ও ইউরোপের ১২টি দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ এবং সাংস্কৃতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আকর্ষণ করেছে। তারা বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ , বহুপাক্ষিক সংস্কৃতির বাস্তব ও অভিজ্ঞতা এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক শিল্প উন্নয়নের নমুনা ও দিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

জার্মানির বার্লিন অংশীদারি কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা স্ভেন হার্পারিং বলেন, সৃজনশীল শিল্পের বিশৃঙ্খল ও মাত্রাতিরিক্ত উন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। শ্রমিক ও পুঁজিপতিদের সম্পর্কও উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: " ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক শিল্পে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এখন এর সংখ্যা হয়েছে ১০ লাখ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এ শিল্পে কর্মীদের আয় কম হয়েছে। কর্মীদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে জার্মানির কিছু শহর যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে"।

বিশ্বায়নের পটভূমিতে আধুনিক যোগাযোগ ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল তাদের পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্মান ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে প্রচুর বহুপাক্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় করেছে। বিনিময়ের প্রক্রিয়ায় অনেক দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আধুনিক সভ্যতার আঘাত ক্ষেত্রে বাধ্য হয়। এ সম্পর্কে মিয়ানমারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিয়াও শেইন নাং বলেন, আন্তঃদেশীয় সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং নতুন চ্যালেঞ্জও এনে দিয়েছে। বিশেষ করে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সমঝোতা ও সম্মানের অভাব থাকার কারণে তরুণ-তরুণী ও বুড়ো-বুড়ির মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মনে করেন, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সময় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণের ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।---ওয়াং হাইমান

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China