শ্রোতাবন্ধুরা, হান সান মিং এক সময় কয়লা-খনির একজন শ্রমিক ছিলেন। তিনি চীনের সবচেয়ে বেশি কয়লা-খনি থাকা শান' সি প্রদেশে প্রায় ২০ বছর কয়লা-খননের কাজ করেছেন। ২০০০ সালে কাকতালীয়ভাবে এক সুযোগ পেয়ে তিনি " প্ল্যাটফর্ম" নামক এক চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। সেই চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনিত চরিত্র ছিল কয়লা-খনির একজন সাধারণ শ্রমিক। সেখান থেকেই তাঁর জীবনের গতিপথের পরিবর্তন শুরু। এর পর তিনি " বিশ্ব", " তিন গিরিখাতের ভালো মানুষ" এবং "গাড়ি" নামের চলচ্চিত্রে ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে ভালো নৈপুন্য প্রদর্শন করেছেন। বিশেষ করে " তিন গিরিখাতের ভালো মানুষ" এ চলচ্চিত্রে জীবনের মাঠ পর্যায়ের মানুষের ভূমিকায় তার সরল অভিনয়ের জন্যে ২০০৭ সালে তিনি ১৪তম চিলির আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ নায়কের পুরস্কার অর্জন করেন। বন্ধুরা , আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের অভিনেতা হান সান মিংয়ের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো।
"' প্ল্যাটফর্ম' ছবিটি হচ্ছে একটি ছোট্ট আকারের শিল্পকলা ভিত্তিক চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রে হান সান মিং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিষয়টি শিখতে শুরু করেন। হান সান মিং হচ্ছেন চীনের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চিয়া চাং খে'র ফুফাতো ভাই এবং চীনের শান সি প্রদেশের ফেন ইয়াংয়ের একজন অধিবাসী। তিনি ছোট খাটো এবং কালো। ১৮ বছর বয়স থেকে তিনি কয়লা-খনিতে কাজ শুরু করেন । তাঁর বয়স যখন ৩৮ বছর, তখনও তিনি একজন কয়লা খনির শ্রমিক ছিলেন। ২০০০ সালের একদিন হান সান মিং তাঁর ফুফাতো ভাইয়ের টেলিফোনের মাধ্যমে " প্ল্যাটফর্ম" চলচ্চিত্রে একজন কয়লা-খনির শ্রমিকের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। এটি তাঁর প্রথমবারের মত চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং এতে শুধু দশ বারো মিনিটের চলচ্চিত্রের শব্দ বলা হলেও , হান সান মিং হঠাত্ এ খবর পেয়ে অনেক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
"শুরুর দিকে আমার মধ্যে বেশ উত্তেজনা কাজ করেছে। সবসময় ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমার ফুফাতো ভাই আমাকে বলতেন যে, ' ক্যামেরার দিকে তাকাবে না, চলচ্চিত্রের সংশ্লিষ্ট শব্দ শোনার পর , যেমন ভাবা তেমন কাজ, নিত্য দিনের জীবন অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে অভিনয় করা উচিত"।
হান সান মিংয়ের প্রথমবারের মত চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর তিনি পর্যায়ক্রমে অন্যান্য চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে " তিন গিরিখাতের ভালো মানুষ" চলচ্চিত্রে হান সান মিংয়ের অভিনয় দর্শকদের মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলেছে।
আসলে " তিন গিরিখাতের ভালো মানুষ" চলচ্চিত্রে হান সান মিংয়ের ভাল অভিনয় তাঁর নিত্যদিনের জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে হান সান মিং বলেন:
" এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনেক কিছুই আমার জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ ১৮ বছর বয়স থেকে আমি কয়লা-খনিতে কাজ শুরু করি। এ কাজ করে মোট ২০ বছর সময় অতিক্রম করেছি। একদিন কয়লা-খনিতে কাজ করার সময় একটি ছোট্ট জিনিস আমার মাথার উপর পড়া অনুভব করি। সঙ্গে সঙ্গে আমি দ্রুততার সাথে পিছনে সরে দাঁড়াই । প্রায় একই সময় হঠাত্ প্রচুর পাথর পড়তে শুরু করে। যদি আমি পিছনে সরে না দাঁড়াতাম , তাহলে সম্ভবত আমি এ প্রচুর পাথরের নীচে চাপা পড়তাম। এখনো সে কথা স্মরণ করলে আমার অনেক ভয় লাগে"।
কয়লা-খনিতে ঠিক ২০ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে হান সান মিং মাঝে মাঝে পরিচালকের কাছে চলচ্চিত্রের সংশ্লিষ্ট গল্প ও সংলাপ সংশোধনের প্রস্তাব দেন। যাতে আরো বেশি মানুষকে চলচ্চিত্র শিল্পের মাধ্যমে সমাজের বাস্তব এবং নিম্ন পর্যায়ে মানুষের জীবনের অবস্থা জানানো যায়। এ সম্পর্কে হান সান মিং বলেন: ' তিন গিরিখাতের ভালো মানুষ' এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর, আমার একটি ধারণা হয়েছে যে, নিম্ন পর্যায়ের মানুষের জীবনের অবস্থা সবার কাছে তুলে ধরলে ভালো হয় যাতে সবাই জানতে পারেন যে, কয়লা-খনির শ্রমিকের মত নিম্ন পর্যায়ের মানুষের জীবন কেমন ধরণের"।
চলচ্চিত্রে অংশ নেয়ার আগে হান সান মিং মনে করতেন যে, কয়লা-খনিতে কাজ করা একটি খুবই ক্লান্তিকর ব্যাপার। তবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, অভিনয়ের কাজও সহজ ব্যাপার নয়। নিয়মিতভাবে খাওয়া-দাওয়া করা যায় না, এ সব ছাড়াও মাঝে মাঝে সারা দিন ও সারা রাত কাজ করতে হয়। এ সম্পর্কে হান সান মিং বলেন: " সাধারণ মানুষ মনে করেন যে, অভিনেতাদের কাজ দেখতে খুবই আনন্দের । আসলে এ ব্যাপারটি অনেক কষ্টকর এবং তাতে অনেক ঝামেলাও রয়েছে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময়ে অনেক সময় একই ক্রিয়াকলাপ ১০ থেকে ৩০বার করতে হয়। সুতরাং এতে অনেক একঘেয়েমিও আছে।" |