আজকের অনুষ্ঠানে অষ্ট্রেলিয়ার একজন পার্লামেন্ট সদস্যের কথা আপনাদের বলবো । এ পার্লামেন্ট সদস্যের নাম মাইকেল জনসন। এ বছর তার বয়স ৩৯ বছর । তিনি পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকেই এশিয়ার সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখার সংকল্প ব্যক্ত করেন । গত আট বছরে মাইকেল জনসন চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন ।
মাইকেন জনসন বলেন চীনের প্রতি তার বিশেষ মমতা রয়েছে । তিনি চীনের হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন ,তার মা চীনের কুয়াংচৌ শহরের নাগরিক ছিলেন । তাই তিনি চীনের প্রতি সবসময় নিবিড় দৃষ্টি রাখেন । তিনি বলেন , আমি অনেকবার চীন সফর করেছি । চীনের খাবার আমি পছন্দ করি এবং চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখে আনন্দ বোধ করি । আমি চীনকে ভালোবাসি ।
আট বছর আগে মাইকেল জনসন অষ্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন । পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে তার বয়স সবচেয়ে কম । অষ্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে তিনিই একমাত্র চীনাবংশোদ্ভুত সদস্য,এর জন্য তিনি গৌরব বোধ করেন । পার্লামেন্টে তার প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেছেন , তিনি চীনের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ও চীনে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলীয় দেশগুলোর সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাবেন । তিনি আরো বলেন , চীনসহ এশিয়ার দেশগুলো সম্পর্কে আমাদের আরো বেশি জানতে হবে । আমি অষ্ট্রেলিয়া ও চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো । আমার শরীরের অর্ধেক রক্ত এসেছে চীন থেকে , তাই আমি চীনা জনগণকে বলতে চাই ,আমি চীনা জনগণের বন্ধু । আমি একথাও বলতে চাই যে অষ্ট্রেলিয়াও চীনা জনগণের ভালো বন্ধু ।
গত বছর মাইকেল জনসন অষ্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পরিদর্শন করেন । এ সফরে তিনি এক নতুন তিব্বত দেখেছেন । তিনি বলেন , গত বছর আমি আমার মাকে সঙ্গে নিয়ে চীনে গিয়েছি । গত ৪০ বছরে আমার মা এই প্রথমবার নিজের জন্মস্থান যাওয়ার সুযোগ পান । আমরা পেইচিংয়ের মহাপ্রাচীরে গিয়েছি । আমার মা মহাপ্রাচীর দেখে অভিভুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । অষ্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে মাকে সঙ্গে নিয়ে জন্মস্থানে ফিরে যাওয়া আমার জীবনের এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা । আমার মা আমাকে বলেন , চীনা নাগরিকদের আত্মবিশ্বাস ও গৌরব তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । বিদেশে ৪০ বছর থাকার পর চীনে ফিরে গিয়ে চীনাদের মুখের হাসি ও গৌরববোধ আমি ভুলতে পারি না । তাদের মুখ দেখে আমি বিশ্বাস করি চীনারা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মতো সব কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
চীন সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মাইকেল জনসন বলেন ,আমি মনে করি ,চীনের সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো চীনের নেতৃবৃন্দ জনগণকে দেশের মালিক হওয়ার অধিকার দিয়েছে । শুধু চীনে নয় ,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নয়নের সবচেয়ে ভালো উপায় হল জনগণকে নিজের ভূমিকা ও সামর্থ্য উপলব্ধি করতে উত্সাহ দেওয়া । জণগণ দেশের মালিক হিসেবে কাজ করলে দেশের উত্পাদন ,বিজ্ঞান , শিক্ষা , পরিবেশ রক্ষাসহ সব কাজের উন্নয়ন হবে ।
সি আর আই সংবাদদাতা অষ্ট্রেলিয়ায় চীনা দূতাবাসে মাইকেল জনসনকে প্রথমবার দেখেছেন । সেদিন অষ্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য চীনা দূতাবাসের আয়োজিত একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে ব্রিসবন থেকে ক্যানবেরা গিয়েছেন। সি আর আই সংবাদদাতার সঙ্গে জনসনের দ্বিতীয় সাক্ষাত হয় ব্রিসবনে অনুষ্ঠিত অষ্ট্রেলিয়া –চীন বাণিজ্য ফোরামে । তিনি এ ফোরামের চেয়ারম্যান । চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব কর্মসূচীতে মাইকেল জনসন অংশ নিতে আগ্রহী । তিনি বলেন ,আমি অষ্ট্রেলিয়া –চীন বাণিজ্য ফোরাম আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি । আমি এ ফোরামের মাধ্যমে দু দেশের ব্যবসায়ী , রাজনৈতিক নেতা ও তথ্যমাধ্যমকে জড়ো করে দু'দেশের বিনিময় ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে চাই । বর্তমানে এ ফোরাম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে , আমি আশা করি , এ ফোরাম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখবে ।
অষ্ট্রেলিয়া ও চীনের সম্পর্ক প্রসংগে মাইকেল জনসন বলেন , দুদেশের সম্পর্ক ভালো । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাস্তব অনুশীলন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশও নিজ দেশের ওপর নির্ভর করে সব কাজ সম্পন্ন করতে পারে না এবং একটি দেশ গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারবে না । প্রতিটি দেশেরই বন্ধুর সহায়তা প্রয়োজন । |