v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
বিশ্বকে আলিঙ্গন করে
2009-10-01 21:20:52

১৯৮২ সালে লিন লি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চীনের দূর সমুদ্র পরিবহন কোম্পানিতে যোগ দেন এবং সেখানে সামুদ্রিক বীমা বিষয়ক কাজ করেন।

চীন বিশ্বের কাছে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা দরজা খুলে দিয়েছে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তেং সিয়াও পিং কুয়াংতুং ও ফুচিয়ানে পরিদর্শনের পর তিনি অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার নীতি সঠিক বলে স্বীকার করেন এবং আরো বেশি বৈদেশিক উন্মুক্ত শহর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। ফলে এপ্রিল মাসে ১৪টি উপকূলীয় বন্দর শহর উন্মুক্ত হয়েছে। তখন সরকারী সংস্থার অনেক ক্যাডার ও বুদ্ধিজীবী চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে প্রায় চল্লিশ বছর বয়সী লিন লিও সাহসের সাথে নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, '১৯৮৬ সালে আমার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ ছিল। আমি দূর সমুদ্র কোম্পানির কাজ ত্যাগ করে অধ্যয়নের জন্য জাপানে যাই। তখন আমার হাতে কেবল ৮০০ জাপানী ইয়েন ছিল। আমি বাসার একটি রেফ্রিজারেটর বিক্রি করেছি। আমি বাইরে গিয়ে এ বিশ্বকে দেখতে চাই।'

বিদেশে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা লিন লির দর্শনক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। তিনি যথাযথভাবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জাপানের দ্রুত বিকাশ উপলব্ধি করেছেন। তিনি বলেন, 'জাপানের গোটা সামাজিক সংগঠন খুব উন্নত মানের। জাপানের জনসাধারণ পরিসেবা সম্পূর্ণ পরিবেশে বসবাস করেন। আমি জাপানের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা জানার জন্য নানা চাকরি করেছি। তাদের অভ্যন্তরীন সাংগঠনিক কাঠামো ও ব্যক্তিদের সম্পর্ক পরিদর্শন করেছি।'

১৯৯০ সালে লিন লি স্নাতকের পর স্বদেশে ফিরে আসেন। অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে তিনি প্রথমে বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। দু'বছর পর তিনি নিজে শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চীনের পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশের পরিবর্তন অনুভব করেন।

লিন লি চীনের প্রথম ধনী হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। এটা ১৯৯২ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রধান স্থপতি তেং সিয়াও পিংয়ের দক্ষিণ চীন পরিদর্শনের সময় গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেয়ার সুফল। এ বছরের বসন্তকালে ৮৮ বছর বয়সী তেং সিয়াও পিং দক্ষিণ চীনের উ হান, শেন চেন, চু হাই ও শাংহাইসহ নানা অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন, যাওয়ার পথে তিনি সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ সংক্রান্ত কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'চীন সমাজতন্ত্র না করলে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং অর্থনীতি উন্নয়ন না করলে, জনগণের জীবনযাপন উন্নয়ন না করলে অন্য যে কোন পথ কানা গলি হবে। কেবল জনগণের জীবনযাত্রার মান অব্যাহতভাবে উন্নত করলে তারা তোমাকে বিশ্বাস করবে এবং সমর্থন করবে।'

তেং সিয়াও পিং দক্ষিণ চীন পরিদর্শন করার দ্বিতীয় বছরে লি মিং ছাই'র বসবাসের গ্রাম এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কৃষকরা কখনো ভাবেন নি, তাঁদের বাসার আশেপাশের সবুজ পাহার ও নদনদী একদিন তাদের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে । একদিন কয়েকজন পথ হারা পর্যটক লি মিং ছাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করেন। লি মিং ছাইয়ের মেয়ে শান শু ফাং তাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তখন অনেকে জিজ্ঞেস করেন, এখানে কোন থাকার ব্যবস্থা আছে কি। আমি বলেছি নেই। তবে অসুবিধা নেই। ভিতরে আসুন। প্রথম বার তাঁরা নয় জন একসাথে আমাদের বড় বিছানায় বিশ্রাম নিয়েছেন। তখনো আমার মনে ব্যবসা করার পরিকল্পনা ছিল না।'

কিন্তু এরপর শান শু ফাং হোটেল খোলার কথা ভাবতে শুরু করেন এবং শহরে গিয়ে ব্যবসা করার পদ্ধতি শিখলেন। তাদের বাসার চারটি ঘরের নয়টি বিছানা থেকে শুরু হয়ে বর্তমানের দুটি বড় আকারের পর্যটন প্রাঙ্গন অধিকার হয়েছে। তাদের ব্যবসাও দিন দিন ভাল হচ্ছে।

এখন প্রতি বছর শান শু ফাং পাঁচ হাজারেরও বেশি পর্যটক অর্ভ্যথনা করেন, বার্ষিক নিট আয় ১ লাখ ইউয়ানেরও বেশি। তাঁর নেতৃত্বে এ গ্রামের ৮০ শতাংশ গ্রামবাসী জমি চাষ করার পাশাপাশি পর্যটন বিষয়ক ব্যবসা শুরু করেন। তাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় দশ হাজার ইউয়ানেরও বেশি।

লিন লি ও লি মিং ছাইয়ের মতো গত ৬০ বছরে কোটি কোটি চীনা মানুষের জীবন আর স্বদেশের উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে সুযোগসুবিধা উপভোগ করা এবং কঠিন অবস্থা অতিক্রম করার চীনা মানুষ আরো বিস্তীর্ণ ও চমত্কার বিশ্বের সম্মুখীন হবেন। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China