v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
রাশিয়ার সংস্কৃতির প্রচারক ও অনুবাদক চান চিয়েন হুয়া
2009-09-30 16:55:14
 

প্রিয় বন্ধুরা ,আজকের অনুষ্ঠানে চীনের বিশ্ববিদ্যায়লের একজন প্রফেসর কাম অনুবাদকের কাহিনী আপনাদের বলবো আমি ফোং সিউ ছিয়েন । এ প্রফেসর কাম অনুবাদকের নাম চান চিয়েন হুয়া । গত ত্রিশ বছরে তিনি রাশিয়ার সাহিত্য , বিশেষ করে রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্য তার ছাত্রছাত্রী ও চীনা পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । এর জন্য তিনি রাশিয়ার সরকার ও সাহিত্য মহলের প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন । চান চিয়েন হুয়া বলেন , বই প্রকাশ ও পাঠকদের প্রশংসা পাওয়া আসলে তার উদ্দেশ্য নয় । তিনি আশা করেন , ক্লাস নেয়া ও সাহিত্য কর্ম অনুবাদের মাধ্যমে চীনের আরো বেশি মানুষ রাশিয়ার সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে জানবেন ও ভালোবাসবেন ।

১৯৪৫ সালে পূর্ব চীনের চেচিয়ান প্রদেশে চান চিয়েন হুয়া জন্মগ্রহণ করেন । যদিও তার বয়স ষাটের বেশি হয়েছে , তবু তিনি এখনও মধ্যবয়সী মানুষের মতো দেখতে এবং তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারেন । তিনি বলেন তার পরিচিত প্রথম বিদেশীই রাশিয়ান । এই রাশিয়ান রাশিয়ার সাহিত্য কর্মের চরিত্র , রাশিয়ার নামকরা লেখক পুশকিনের রচনাগুলোর চরিত্রগুলো , বিশেষ করে বৃদ্ধের চরিত্রগুলো তার খুব ভালো লাগে । তিনি বলেন , আমি মনে করি পুশকিনের রচনাগুলোর চরিত্রগুলোর আন্তরিকতা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে । ছোটবেলা থেকেই আমি রাশিয়ার সাহিত্য পড়তে পছন্দ করতাম । সেই সব বই পড়ার সময় আমার মনে হতো বয়োবৃদ্ধ চরিত্র জ্ঞানী মানুষের মতো অল্পবয়সীদের সঙ্গে আলাপ করছেন বা গল্প শোনাচ্ছেন । যেমন ' সোনালী মাছ ও মাঝির কাহিনী ' আমি বিশ্বিবিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই পড়েছি। এ কাহিনীর উষ্ণতা ও ভালোবাসা আমার মনে ছাপ ফেলেছে ।

চান চিয়েন হুয়া মনে করেন , বিদেশী ভাষা বিশ্বকে জানার একটি জানালা । তাই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে তিনি বিদেশী ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নেন । ১৫ বছর বয়সে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিং বিদেশী ভাষা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন । পরীক্ষায় তিনি পূর্ণ রম্বর পান এবং ইন্সটিটিউটে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই এ ইন্সটিটিউটের রাশিয়ার ভাষার উচ্চারণ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান । চান চিয়েন হুয়া রাশিয়া ভাষাকে সারা জীবন চর্চা করার স্বপ্ন দেখেন , তবে প্রথম দিকে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি । ইন্সটিটিউটে পাঁচ বছর লেখাপড়ার পর তাকে দক্ষিণ পশ্চিম চীনের একটি পরিমাপক যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত গবেষণাগারে পাঠানো হয় । এর পরের ১১ বছরে তিনি সাত বছর শ্রমিকের কাজ করেন এবং বাকি চার বছর প্রযুক্তি ক্ষেত্রের তথ্য অনুবাদের কাজ করেন । এ ধরনের জীবন তার কাম্য ছিল না । সহপাঠীদের মধ্যে চান চিয়ের হুয়ার বয়স সবচেয়ে কম এবং বিদেশী ভাষা চর্চায় তার আগ্রহ বেশি বলে তিনি তার জীবন পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন , পেইচিং বিদেশী ভাষা ইন্সটিটিউটের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অব্যাহতভাবে রাশিয়া ভাষা চর্চার জন্য আমাকে চিঠি লিখেন । তাই ১৯৭৯ সালে আমি পরীক্ষার মাধ্যমে আবার পেইচিং বিদেশী ভাষা ইন্সটিটিউটে স্নাতোকতর ছাত্র হিসেবে ভর্তি হই । সেখানে রাশিয়ার ভাষা ও সাহিত্য গবেষণার পাশাপাশি আমি রাশিয়ার লেখকের রচনা চীনা ভাষায় অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি । লেখাপড়া শেষ করে আমি সেই ইন্সটিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি ।

চান চিয়েন হুয়া পেইচিং বিদেশী ভাষা ইন্সটিটিউটে প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করেছেন । একটি জরীপে বলা হয়েছে , ৯৫ শতাংশ ছাত্র চান চিয়েন হুয়ার ক্লাস পছন্দ করেন । চান চিয়েন হুয়া বলেন , ক্লাসে আমি ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করি ও তর্ক করি । সাহিত্যের বিষয়ে কোনো সঠিক উত্তর নেই । একটি সাহিত্য সম্পর্কে তরুণ ছাত্রছাত্রী ও আমার ধারণা পুরোপুরি এক হতে পারে না । তাই আমরা মতবিনিময় ও তর্কবিতর্কের মাধ্যমে নিজের মতামত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি । এ প্রক্রিয়া উভয় পক্ষকেই আনন্দ দেয় । ইংরেজী বিভাগের একজন ছাত্র চান চিয়েন হুয়ার ক্লাস শোনার পর ইংরেজী বিভাগ ছেড়ে রাশিয়া বিভাগে ভর্তির অনুরোধ জানিয়েছিলেন ।

চান চিয়েন হুয়া প্রধানতঃ রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্য কর্ম অনুবাদ করেন । এ সব রচনা পাঠকদের কাছে কম পরিচিত , কারণ বেশির ভাগ চীনারা রাশিয়ার ক্লাসিক্যাল সাহিত্য কর্ম পড়েন । ২০০৬ সালে চীনের রাশিয়া বর্ষ কর্মসূচী আয়োজনের সময় চান চিয়েন হুয়ার অনুবাদ করা ' রাশিয়ার আধুনিক ছোট গল্প সংগ্রহ ' প্রকাশিত হয় । এতে রাশিয়ার ৪০জন আধুনিক লেখকের ছোট গল্প স্থান পেয়েছে। পাঠকরা এ বইয়ের উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন । তারা বলেন , আমরা এ সব ছোট গল্প পড়তে পছন্দ করি । আমরা এ সব গল্প উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে লেখকের চিন্তাধারা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি । চান চিয়েন হুয়া বলেন , আমি আমার শিক্ষকতা ও অনুবাদের কাজকে পছন্দ করি । বই ও প্রবন্ধ প্রকাশ করা ও পাঠকের ভালো মূল্যায়ন পাওয়া আমার কাছে আনন্দের বিষয় সত্য , তবে আমার কাছে আরো আনন্দের ব্যাপার হলো আরো বেশি মানুষ রাশিয়া সম্পর্কে জানবেন এবং আরো বেশি মানুষ রাশিয়ার সংস্কৃতি প্রচারের কাজ করবেন ।

চান চিয়েন হুয়ার রাশিয়ার সাহিত্য প্রচারে অসাধারণ অবদান প্রশংসার জন্য ২০০৬ সালে রাশিয়ার লেখক সমিতি তাকে ম্যাকসিম গোর্কী পদক প্রদান করে । এতে তার রাশিয়া সাহিত্য গবেষণায় রাশিয়ার সংস্কৃতি মহলের স্বীকৃতির পরিচায়ক ।

ছোট বেলায় চান চিয়েন হুয়া রাশিয়ার সাহিত্য কর্ম পড়ার মাধ্যমে রাশিয়ার সংস্কৃতি ও সমাজের সংস্পর্শে আসেন ,গত ত্রিশ বছরে তিনি চারবার রাশিয়া সফরের সুযোগ পেয়েছেন । সফরকালে তিনি নিজের চোখে রাশিয়ার সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষের জীবন ধারা পর্যবেক্ষণ করেন ,ফলে রাশিয়ার সাহিত্যের প্রতি তার ভালোবাসা আরো বেড়েছে । তিনি বলেন , এর কারণ হচ্ছে রাশিয়ার সাহিত্যের আসল রূপের কোনো পরিবর্তন হয় নি । চান চিয়েন হুয়া বলেন , তিনি রাশিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচারকে তার জীবনের একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন । এর জন্য তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন । এ কাজ করতে পেরে তিনি প্রচুর আনন্দও পেয়েছেন ।

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China