v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ইচ্ছানুযায়ী কাজ বেছে নিয়ে সুন্দর জীবন সৃষ্টি হবে
2009-09-29 21:07:13
কর্মসংস্থান সবসময় প্রতিটি লোকের সারা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । ১৯৭৮ সালে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের আগে চীনা যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান সরকারের ওপর নির্ভরশীল ছিল । চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাথেসাথে চীনাদের কমর্মসংস্থানের পদ্ধতি ধাপেধাপে পরিবর্তন হয়েছে । এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা নিজের সখ ও গুণ অনুযায়ী নিজের পছন্দনীয় কাজ বেছে নিতে শুরু করেছেন ।

পেইচিংয়ের লিয়েনহো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফোং ফ্যান গত ২০ বছর ধরে ছাত্রদের কর্মসংস্থান বিষয়ক কাজের দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি একের পর এক প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া অতিক্রম করেছেন ।তিনি বলেন,বিংশশতাব্দীর ৯০-এর দশকের আগে প্রায় সকল স্নাতক ছাত্রছাত্রী রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা সরকারী অফিসে চাকরি করতেন । কর্মসংস্থানের চাপের সম্মুখীন না হলেও এধরনের পদ্ধতিতে ছাত্রদের স্বেচ্ছায় কাজ বা জায়গা বেছে নেওয়ার অধিকার ছিল না ।

তিনি বলেন , আগে বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর ৭০ ও ৮০-এর দশকের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা ব্যক্তিগত গুণ বা সখ উপেক্ষা করে বিনা শর্তে দেশের প্রয়োজনীয় জায়গায় যেতেন ।

৯০-এর দশকের শেষ দিকে চীনের বাজার অর্থনীতির সাথেসাথে কর্মসংস্থানের পদ্ধতির বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীরা সরকারের নির্ভরশীল হওয়ার পরিবর্তে বাজার অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী স্বেচ্ছায় কাজ বেছে নিতে শুরু করেন । তারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শুরু করেন । লি সিউলি প্রথম কিস্তির স্নাতক ছাত্রী যিনি চীনে স্বেচ্ছায় কর্মসংস্থানের নীতি চালু হওয়ার পর নিজের ইচ্ছানুযায়ী কর্মসংস্থান পান । ৩৪ বছর বয়সী লি সিউলি এখন শানতুং প্রদেশের ইয়েনথাই শহরের একটি শেয়ার কোম্পানিতে কাজ করছেন । ১৯৯৮ সাল তিনি শানসি অর্থ ও অর্থনীতি ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হন । স্বেচ্ছায় কাজ বেছে নেয়ার সম্মুখীন হয়ে তিনি কিছুটা ইতস্তত করলেন । তিনি বলেন, যেনো নীল আকাশ থেকে এক বজ্র আমার ওপর আঘাত হেনেছে । স্কুলে পড়ার সময় কখনো ভাবিনি নিজেকে কাজ খুঁজতে হবে । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় "বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব বহন করবে " এ কথা ছিল । নীতির পরিবর্তনে আমি কিছুটা ইতস্তত করলাম ।

সে সময়ে কম বয়সী লি সিউলির পক্ষে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান সাপেক্ষ ছিল । কোনো লোকের কাছ থেকেই তিনি কোনো অভিজ্ঞতা লাভ করেননি । বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কেউই তাকে সাহায্য করতে পারে নি । সব লি সিউলির নিজেকেই সমাধান করতে হবে । ভবিষ্যতমুখী হয়ে লি সিউলি নিজেকে সমন্বয়ের কাজ শুরু করেন । তিনি কাজ বেছে নেয়া প্রক্রিয়াকে নিজের দক্ষতা প্রমান করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন ।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, স্বেচ্ছায় কাজ বেছে নেয়া আমার জীবনে ভাল বিষয় হতে পারে । নিজের ওপর নির্ভর করে বাইরে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া খারাপ নয় । কম বয়সী মানুষ হিসেবে আমি খুব কম জানি । আমার পক্ষে ভয়ের কিছু নেই । এ ধারণা নিয়ে আমি কাজ খুঁজতে শুরু করে দেই ।

লি সিউলি জন্মস্থান শানসি ত্যাগ করে উপকূলীয় শহরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি বিশ্বাস করেন, মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি নিজের জন্য আশাভরপুর একটি ভবিষ্যত বয়ে আনবে । তিনি স্বেচ্ছায় কর্মসংস্থানের সুযোগে সম্পূর্ণভাবে নিজের জীবনের পরিবর্তন করবেন । লি সিউলি নিজের দক্ষতা দিয়ে শানতুং প্রদেশে কাজ করার সুযোগ পান । দশ বারো বছর প্রচেষ্টা চালানোর পর তিনি এখন স্থানীয় এলাকার একটি শেয়ার কোম্পানির একজন প্রধান ব্যবস্থাপক নিযুক্ত রয়েছেন । নিজের এ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় কর্ম বেছে নেয়ায় আমরা নিজেদের দর্শন শক্তি আরও প্রসারিত করে ইচ্ছানুযায়ী স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব ।

চীনে স্বেচ্ছায় কর্ম বেছে নেয়ার নীতি চালু হওয়ার ১০ বছরে চীনের যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের পরিবেশ ও অবস্থার কী কী পরিবর্তন হয়েছে ? এ সম্পর্কে শিক্ষক ফোং ফ্যান বলেন, এখন প্রধানত আশির দশকের প্রজন্মেরা সামাজিক জীবনে প্রবেশ শুরু করছেন । তারা নিজেদের বৈশিষ্ট্যময় চরিত্র ও গুণ দেখাতে পছন্দ করেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা ছাড়া তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই স্বেচ্ছায় কাজ বেছে নিয়েছেন ।

১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করা লি ইউয়ান ইউয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিষ্ঠা করা "ওয়েই লান অর্থাত নীল রং" নামে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ শিবিরে কাজ করেন । এটা একটি জাতিসংঘের কলা-কৌলশ অনুকরণ করা প্রশিক্ষণ সংস্থা । অর্থাত চীনের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করে জাতিসংঘের অনুকরণে ভিন্ন দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রাজনীতি ,অর্থনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা । লি ইউয়ান ইউয়ান জানান, শুরুতে তাদের কোম্পানি বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল । তিনি বলেন, প্রথম ২ বছরে যখন আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিদেশে যাই তখন সবাই জিজ্ঞেস করতে পারে, তোমরা কী ভাবে প্রমান করবে তোমরা মিথ্যাবাদী নও ।তোমরা মাত্র স্নাতক হয়েছে ।আমাদের ছেলেমেয়েকে শেখানোর তোমাদের কী যোগ্যতা আছে?

যাতে আরও বেশি লোক জাতিসংঘ অনুকরণ করা এই নতুন বিষয়কে গ্রহণ করে তার জন্য লি ইউয়ান ইউয়ান ও কোম্পানির তরুণ কর্মীরা চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মাধ্যমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নে জাতিসংঘ অনুকরণ করার মূল্য ও তাত্পর্যেরকথা প্রচার করেন । তাদের কার্যক্রম চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং চীনে নিযুক্ত জাতিসংঘ কার্যালয়ের সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছে । গত বছর তাদের উদ্যোগে চীনের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সাফল্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলু বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত জাতিসংঘ অনুকরণ তত্পরতায় অংশ নিয়েছে । এ বছর অধিক থেকে অধিকতর স্নাতক ছাত্রছাত্রী তাদের কোম্পানিতে যোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছে । প্রাণশক্তিতে ভরপুর এই কাজ দেখে লি ইউয়ান ইউয়ান খুব গর্বিত। তিনি বলেন, আমাদের এই কাজের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে বলে আমি মনে করি ।

লি ইউয়ান ইউয়ানের কথা থেকে আমরা জেনেছি , তার একটি স্থিতিশীল এবং বেশি বেতনের কাজ ছিল । টাকা পয়সার তুলনায় তিনি বেশি পছন্দ করেন তরুণ বেলায় নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং নিজের পছন্দনীয় কাজ করা । তিনি ছাত্রছাত্রীদের পছন্দ করেন । চীনের সেরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র,বৃটেন এবং সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে মতবিনিময় করতে পছন্দ করেন । তিনি বলেন,তার কাজের ব্যস্ততা অনুযায়ী বেতন আগের চেয়ে কম হলেও তিনি সুখী এবং আনন্দিত । নিজের প্র্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি অবশ্যই সুন্দর জীবন সৃষ্টি করবেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China