উত্তর পশ্চিম চীনে অবস্থিত চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বহুজাতি অধ্যুষিত একটি অঞ্চল । এ অঞ্চলে উইগুর , হান , কাজাখ ও মঙ্গোলিয়সহ ৪০টিরও বেশি জাতির লোকজন বসবাস করছেন । এ অঞ্চলের বিভিন্ন জাতির মধ্যকার বিনিময় ও লেখাপড়া ত্বরান্বিত এবং যৌথ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করার জন্য গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে হান ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির ভাষার ওপরও গুরুত্ব দিয়ে আসছে । দ্বৈত ভাষার ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলার মাধ্যমে সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতি আরো উন্মুক্ত হয়ে উঠেছে ।
সিনচিয়াংয়ের কাশ্ অঞ্চলের শাছে জেলায় ৯৬ শতাংশেরও বেশি অধিবাসী উইগুর জাতির । তাদের মধ্যে হান ভাষার ব্যবহার খুব কম । কিন্তু এ জেলার বাস্কেত থানার প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা হান ভাষায় সংবাদদাতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে ।
৭ বছর বয়স্ক নারজেরিয়ে মাইমাইটি অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে হান ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সে পড়ছে । হান ভাষার মাধ্যমে সে ও তার অন্যান্য সহপাঠীরা ভাল বন্ধনে আবদ্ধ । সে হান ভাষায় অন্যান্য সহপাঠীদের কাছে সিনচিয়াংকে পরিচয় করে দিতে চায় এবং বিনিময়ের মাধ্যমে হান জাতি ও অন্য জাতির সহপাঠীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ।
প্রাথমিক স্কুলের অধ্যক্ষ হোয়াং মিং সংবাদদাতাকে বলেন , স্থানীয় বহু সংখ্যালঘু জাতির জনগণ কৃষি জ্ঞান শেখতে চেয়েছেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সব বই হান ভাষায় প্রকাশিত । ১২ বছরের আগে তার উদ্যোগে এ প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় । সুতরাং গ্রামবাসীরা আশা করেন , তাদের ছেলেমেয়েরা হান ভাষা শেখার মাধ্যমে আরো বেশি বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান লাভ করতে পারবে । গত ১২ বছরে হোয়াং মিংয়ের প্রাথমিক স্কুল সিনচিয়াংয়ের সব প্রাথমিক স্কুলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে । এখন তার প্রাথমিক স্কুলে হান ভাষা , ইংরেজী , অংকবিদ্যা , চারুকলা ও সংগীতসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সেরও চালু করা হয়েছে । তৃতীয় শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য উইগুর ভাষার কোর্সেরও ব্যবস্থা করা হয় । বোঝা যায় , সিনচিয়াংয়ে সংখ্যালঘু জাতির ভাষার ওপরও ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । সিনচিয়াংয়ের সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রীরা বেশ কয়েকটি জাতির ভাষা শিখেছে । ভাষার এ প্রাধাণ্যের কারণে তাদের মধ্যে অনেকেই আরো বেশি শেখার জন্য উন্নত অঞ্চলগুলোতে গেছে । হান ভাষা আয়ত্ত হওয়ার কারণে তারা চীনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার সুযোগ সুবিধাও পেয়েছে । প্রাথমিক স্কুলের অধ্যক্ষ হোয়াং মিং বলেন ,
সংখ্যালঘু জাতির ভাষা ছাড়া হান ভাষা শেখা উইগুর জাতির ছেলেমেয়েদের কাজের ব্যাপারে অনুকূল । এটা তাদের দারিদ্র্যমোচনের জন্য সহায়ক ।
২০০৪ সাল থেকে সিনচিয়াংয়ে উইগুর ভাষা শেখার সংগে সংগে হান ভাষা জনপ্রিয় করে তোলার কাজও চালু করা হয়েছে । হান ভাষা আয়ত্ত করার ফলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একটি সুষ্ঠু ভিত্তি স্থাপন করা হবে । এ পর্যন্ত সংখ্যালঘু জাতির ৩০ শতাংশেরও বেশি ছাত্রছাত্রী হান ভাষা শিখেছে । সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , ২০০৫ সাল থেকে সংখ্যালঘু জাতির ৩ লাখ ৩৩ হাজার শিশু হান ভাষা শিখেছে । এ ক্ষেত্রে সরকার ২০ কোটি ৬০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করেছে ।
বর্তমানে বিশ্ব ইন্টারনেট যুগে প্রবেশ করেছে । সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে যারা হান ভাষা শিখেছে , তারা হান ভাষার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্ব সম্পর্কে বেশি জানতে পারবে । কাশ্ অঞ্চলের ইয়েছেং জেলার ইতিমুখুং থানার মাধ্যমিক স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কম্পিউটার কোর্সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল । এ স্কুলের সব ছাত্রছাত্রী উইগুর জাতির । ছাত্রছাত্রীরা অধ্যবসায়ের সঙ্গে হান ভাষা শিখছে । তারা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স খুব পছন্দ করে । ছাত্রী আরলিজ গুলিয়ান বললো ,
ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রবন্ধ রচনা করতে পারে এবং অনেক জ্ঞান অর্জন করেছে ।
সিনচিয়াংয়ের দক্ষিণাংশের হোথিয়ান অঞ্চলে সংখ্যালঘু জাতির প্রচুর লোকজন বসবাস করছে । এখানের ছেলেমেয়ে ও প্রবীণদের হান ভাষা শেখা ভাল লাগে । আরলিজ গুলিয়ানের বয়স ৩৬ বছর । তিনি হান ভাষা শিখেছেন দু'বছর হল । তিনি বলেন , তার বহু বন্ধু বান্ধব হান ভাষা শিখছেন । হান ভাষার মাধ্যমে বাইরের বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকজনের সঙ্গে মত বিনিময় করা যাবে । বিনিময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্ব সম্পর্কে তারা আরো বেশি জানতে পারবেন । এ ছাড়াও ভাষার প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে তারা শহরে উপযুক্ত কাজও করতে পারবেন । তিনি আরো বলেন ,
হান ভাষা আয়ত্ত করার ফলে মানুষের জন্য যেমন চাকরি তেমনি নিত্য জীবনযাত্রার জন্যও সুবিধা হবে ।
স্থানীয় কর্মকর্তা মাইমাইটি রুজ বলেন , হান ভাষা শেখার পর তাদের নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে উপকার হবে । ভাষার সুবিধার সাহায্যে বড় শহরে চাকরি পাওয়ার জন্যও বহু সুযোগ সুবিধা হবে । ২০০৫ সাল থেকে কৃষক ও পশুপালকদের আয় বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু গ্রামীণ শ্রমিক সিনচিয়াংয়ের উত্তরাংশসহ বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে গেছে । হান ভাষা ছাড়া এ সব অঞ্চলে চাকরি পাওয়া অসম্ভব । ভাষা প্রকাশের দক্ষতা বাড়ানো তাদের সচ্ছলতার ক্ষেত্রে উপকৃত হবে ।
সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে হান ভাষা জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতির ভাষার ব্যবহার ও রক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতির ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হচ্ছে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে উইগুর ও কাজাখসহ ৭ ধরনের সংখ্যালঘু জাতির ভাষায় পড়ানো হচ্ছে । স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী প্রতিষ্ঠানে উইগুর ও হান ভাষায় দলিলপত্র রচনা করা হয় । সিনচিয়াংয়ের গণ প্রকাশনালয় উইগুর , হান , কাজাখ ও মঙ্গোলীয়সহ ৬ জাতির ভাষায় বই প্রকাশ করে আসছে ।
(থান ইয়াও খাং) |