v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
দু'ভাষায় শিক্ষাদানের পদ্ধতি সিনচিয়াংয়ে জনপ্রিয় হয়েছে
2009-09-28 20:37:27
সিনচিয়াং হচ্ছে চীনের একটি বহু জাতির মিলন অঞ্চল। এখানকার উইগুর, কাজাখ,মঙ্গোলিয়া ও সিবোসহ বিভিন্ন জাতির যার যার নিজস্ব ভাষা ও লিপি রয়েছে। আগে সিনচিয়াংয়ের বহু জায়গায় হান জাতি ও সংখ্যালঘু জাতির ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। সংখ্যালঘু জাতির বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী শুধু নিজেদের জাতির ভাষা জানতে ও বুঝতে পারতো, তবে তারা হান ভাষার কিছুই জানতে ও বুঝতে পারতো না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনচিয়াংয়ে হান ভাষা ও সংখ্যালঘু জাতির ভাষা দু'ভাষায় শিক্ষার পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। অর্থাত্ হান জাতি ও সংখ্যালঘু জাতির ছাত্র-ছাত্রীরা একই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আজকের অনুষ্ঠানে দু'ভাষায় লেখাপড়া করা ছাত্র-ছাত্রীদের গল্প আপনাদের শুনাবো।

আপনারা একজন কাজাখ জাতির শিক্ষকের হান ও কাজাখ জাতির ভাষা ব্যবহার করে শিক্ষাদানের পদ্ধতি শুনেছেন। এ শিক্ষক হচ্ছেন চীন ও কাজাখস্তানের সীমান্ত এলাকার ৪০ কিলোমিটার দূরের সিনচিয়াং ইলি ছাবুচার জেলার জাকুচিনিউলু গ্রামের কেন্দ্রীয় স্কুলের একজন শিক্ষক। বর্তমানে এ স্কুলে ১ হাজার ২ শ'রও বেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কাজাখ জাতির ছাত্র-ছাত্রীর হার ৫০ শতাংশের বেশি। ২০ শতাংশ সিবো জাতির ছাত্র-ছাত্রী। অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী হচ্ছে হান জাতি, হুই জাতি ও উইগুর জাতির লোক। এ স্কুলের শিক্ষকরা অনেক বেশি জাতির ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তারা হান ভাষা বা সংখ্যালঘু জাতির ভাষার কোর্স ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী বাছাই অনুমোদন করেছেন।

এ স্কুলে আমরা একজন সিবো জাতির ছেলের সাক্ষাত্কার নিয়েছি। এ ছেলের নাম হল কুওয়া রোং হুয়া। সে প্রথম বর্ষ থেকে হান ভাষার কোর্স গ্রহণ করেছে। আট বছর লেখাপড়ার মাধ্যমে বর্তমানে সে সুষ্ঠু হান ভাষা বলতে পারে। সে বলেছে

আমি বাড়িতে বাবা ও মার সঙ্গে কখনো কখনো সিবো ভাষায় কথা বলি, কখনো কখনো হান ভাষায় কথা বলি। স্কুলে আমি সবসময় হান ভাষা বলি। ভবিষ্যতে আমি একজন চিকিত্সক হতে চাই। আমি আশা করি, বেশি লোককে আমি চিকিত্সা সেবা দিতে পারবো।

সে আরো বলেছে, হান ভাষা শেখার মাধ্যমে আমি যে কেবল হান জাতি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির লোক জনের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে পারি তাই নয়, বরং আমি ভবিষ্যত উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছি। এর ওপর বিবেচনা করে পিতা মাতারা তাদের ছেলেমেয়েদের জাকুনিউলু গ্রামের কেন্দ্রীয় স্কুলে ভর্তি করে হান ভাষা কোর্স গ্রহণ করতে আগ্রহী।

এ স্কুলের পরিচালক নিউ চি হুয়া বলেছেন, এ চাহিদা মেটানোর জন্য স্কুল সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষা-উপকরণ সম্প্রসারণের জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। তিনি বলেছেন

চীন সরকার দু'ভাষার ওপর শিক্ষাদানের ব্যাপারে বেশি সাহায্য করেছে। যেমন সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষকদেরকে হান ভাষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ অবৈতনিক করেছে। আমাদের স্কুলের সংখ্যালঘু জাতির ৩০জন শিক্ষক এ ধরণের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। দু'ভাষায় শিক্ষাদানের উপকরণও পেয়েছেন।

সিনচিয়াংয়ে জাকুচিনিউলু গ্রামের কেন্দ্রীয় স্কুলের মত দু'ভাষায় শিক্ষাদানের স্কুল কম নয়। গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশক সিনচিয়াংয়ে শুধু কয়েকটি স্কুলে দু'ভাষায় শিক্ষাদানের কোর্স রয়েছে। তবে বর্তমানে সিনচিয়াংয়ে দু'ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সংখ্যালঘু জাতির ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি। এ সংখ্যা সংখ্যালঘু জাতির ছাত্র-ছাত্রীর মোট সংখ্যার ৪০ শতাংশ।

৩৬ বছর বয়সী মিকোরেই আবুতুকাতির হচ্ছেন সিনচিয়াং ইনিং শহরের বাইয়ানতাই জেলার পরিচালক। প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় বর্ষ থেকে তিনি হান ভাষা শিখেছেন। তিনি সিনচিয়াংয়ে দু'ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুফল পাওয়া বহু লোকের মধ্যে একজন। তিনি বলেছেন, উইগুর জাতির একজন কর্মকর্তা হিসেবে সুষ্ঠু হান ভাষা তার কর্মের জন্য বেশি সুবিধা এনে দিয়েছে। তিনি বলেন,

হান ভাষা শেখার মাধ্যমে আমার কর্মের ওপর কল্যাণ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি চাকরি পাওয়ার প্রথম দিকে আমার কাজ ছিল কৃষি ক্ষেত্রে গ্রীনহাউস পদ্ধতির ব্যবহার। সবসময় আমি হান জাতির কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। হান ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে আমি এসব কৃষকদের কাছ থেকে বেশি জ্ঞান অর্জন করেছি। এর পর আমি এসব জ্ঞান সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে বিতরণ করেছি। বর্তমানে সংখ্যালঘু জাতির কৃষকরা হান জাতির কৃষকদের মত গ্রীনহাউস পদ্ধতিতে চাষের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।

মিকোরাই আবুতুকাতির পরিচালনার বাইয়ানতাই জেলার ৭০ শতাংশ লোক হচ্ছে সংখ্যালঘু জাতির লোক। যেমন উইগুর জাতি, হুই জাতি ও কাজাখ জাতি ইত্যাদি । তিনি বলেন, বর্তমানে জেলায় নাগরিকরা হান ভাষা, উইগুর জাতির ভাষাসহ বিভিন্ন জাতির ভাষার টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখতে পারে। পত্রিকা ও নগরের সরকারী দলিলেও বহু জাতির ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে।

মিকোরেই আবুতুকাতির বলেছেন,

আমার দুটি শিশু সন্তানও হান ভাষার কোর্স গ্রহণ করছে। তাদের হান ভাষার মান আমার চেয়ে ভালো ।বাড়িতে আমরা সবসময় উইগুর জাতির ভাষায় কথাবার্তা বলি, তবে আমি তাদের সঙ্গে হান ভাষার মাধ্যমে কথাবলার ব্যাপারে পছন্দ করি।

দু'ভাষায় শিক্ষাদানের লক্ষ্য হল যার যার জাতির ভাষা জানতে ও বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে হান ভাষার সুষ্ঠু ব্যবহারের দক্ষ জনশক্তি প্রশিক্ষণ দেয়া। এ শিক্ষাদানের পদ্ধতি সিনচিয়াংয়ের বহু সংখ্যালঘু জাতির নাগরিকদের সমর্থন পেয়েছে। জানা গেছে, সিনচিয়াং সরকার দু'ভাষায় শিক্ষাদানের উপায় প্রাক স্কুলে বাস্তবায়ন করতে চায়। সংখ্যালঘু জাতির দু'ভাষায় শিক্ষাদানের কিন্ডারগার্টেন গড়ে তোলার জাতীয় প্রকল্প চালু করার জন্য চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার বেশি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত সিনচিয়াংয়ে প্রাক স্কুলে দু'ভাষায় শিক্ষাদানের জনপ্রিয় তার হার ৮০ শতাংশেরও বেশি। এর পাশাপাশি সিনচিয়াং ছ'বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলের ১৬ হাজারজন দু'ভাষায় শিক্ষক সম্প্রসারণ করতে চায়।

ইনিং শহরে একটি নতুন গড়ে তোলা আঞ্চলিক দু'ভাষায় শিক্ষাদানের কিন্ডারগার্টেনে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, এখানকার ৪০জনেরও বেশি শিশুর মধ্যে বেশির ভাগ সংখ্যালঘু জাতির পরিবারে থেকে এসেছে। যদিও তারা শুধু কয়েক মাস ধরে হান ভাষা শিখেছে, তবে তারা হান ভাষার মাধ্যমে শিশুদের গান গাইতে পারে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China