v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
তিব্বতের নতুন রূপ
2009-09-28 20:38:19

     এবারের চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সীতান্ত সফলে আমরা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে দশ দিন ছিলাম । এ দশ দিনের মধ্যে আমরা পাহাড়-পর্বত ও তৃণভূমির মধ্য দিয়ে ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছি । বলতে হয় , পেইচিং-লাসা সরাসরি বিমান ফ্লাইট ও প্রায় সারা তিব্বতে ছড়িয়ে পড়া পিচঢালা সড়ক না থাকলে আমাদের যাত্রা অনেক দুরূহ হতো । ১৫ বছর আগে আমি একবার তিব্বতে আসি । তখন চীন-নেপাল সীমান্তের চাং মু মহকুমার দিকে ধাবিত ৩১৮ নম্বর জাতীয় সড়ক ছিল কাঁচা রাস্তা । আর এখন এ রাস্তা একেবারে একটি আধুনিক পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের গাড়ি অনায়াসে পাহাড় , তৃণভূমি ও গ্রামগঞ্জ চলাচল করতে পারছে । আমরা আনন্দের সংগে দেখতে পাচ্ছি যে , বেশ কিছু গ্রামের বাড়িঘর নতুন করে নির্মিত হয় । ঐতিহ্যিক স্টাইলে নির্মিত এসব বাড়িতে বিদ্যুত ও টিভি ব্যবস্থা রয়েছে । এমন কি সর্বত্রই সৌর শক্তির সাহায্যে বিদ্যুত উত্পাদনের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে । বড় গোছের গ্রামগুলোতে সর্বাধুনিক ইমারত দেখলে বুঝতে হবে সেটা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভবন ।

    বিভিন্ন স্কুলের ক্যাম্পাসে নীল পোশাক পরিহিত ছাত্রছাত্রীরা শহরের ছেলেমেয়ের মত খোলা মনে নানা ধরণের খেলা করে থাকে । বিভিন্ন সাক্ষাত্কার থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে , তিব্বতের জাতির বাবামারাও নিজেদের সন্তানদের শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন । বিশ্বের সমস্ত বাবামার মত তারাও আশা করেন যে , তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় সফল হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের চেয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে । তবে পৃথিবীর ছাদ বলে পরিচিত তিব্বতে বসবাসকারী অধিকাংশ তিব্বতী হচ্ছেন কৃষক ও পশুপালক । ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আশা আকাংক্ষার বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে । তারা সবাই কামনা করেন যে , আগামীদিনগুলোতে তাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটবে । ইখাচেতে একজন তিব্বতী তরুণের সংগে আমার দেখা হলো । সে তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছে । তার বাবামা হচ্ছেন কৃষক । তিনি একজন পশু চিকিত্সক হতে চায় । অথচ সে শহরে জীবন যাপন করতে চায় । আমাদের গাড়ির চালকও গ্রামের লোক । গত বিশ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি লাসায় নিজের বাড়ি কিনেছেন । তার দুটি সন্তান রয়েছে । তিনি আন্তরিকভাবে আশা করেন যে , তার সন্তানরা লেখাপড়া করে সুযোগ্য ব্যক্তি হবে ।

     তিনি বর্তমান জীবনের প্রতি সন্তুষ্ট । তার মনে হয় , তিনি সুখে রয়েছেন । এখন তার আয়ও মন্দ নয় । পরে তিনি নিজের জন্যে একটি জীপ কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন । তখন তিনি জীপ চালিয়ে দেশ বিদেশের পর্যটকদের নিয়ে তিব্বতের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণের সুযোগ পাবেন । অবশ্য তিব্বতের সড়কগুলোর উন্নতি তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । ধুলাভর্তি কাঁচা রাস্তাগুলো এখন সমান আধিনিক পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে এবং সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে সুন্দর সুন্দর গাছ লাগানো হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে , তা খুবই উল্লেখযোগ্য । বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের দু' পাশে সারি সারি গাছ লাগানো হয়েছে ।

     লাসা থেকে ইখাচে পর্যন্ত ইয়ালুজাম্বু নদীর দু' তীরে বনানীবলয় নির্মাণে সুফল পাওয়া গেছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা চীন সরকারের জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে বিবেচিত হয় । তিব্বতও তার ব্যতিক্রম নয় । সুতরাং ভবিষ্যতে তিব্বতে আমরা আরো বেশি নীল রং ও আরো নীল আকাশ দেখতে পারবো বলে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ সরকারের ভাইস চেয়ারম্যান পাইমাচিলিন আমাদের জানিয়েছেন , পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বত করার জন্যে স্থানীয় সরকার সারা তিব্বতে সমস্ত সোনা খনি ও অন্য খনিজ খনন নিষেধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China