v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সিশা দ্বীপপুঞ্জের জেলেদের নতুন জীবনযাত্রা
2009-09-22 18:16:36

দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত চীনের সিশা দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । যা বেশকিছু দ্বীপ দিয়ে গঠিত । সিশা দ্বীপপুঞ্জ প্রচুর মত্স্য-সম্পদে সমৃদ্ধ । সুপ্রাচীনকাল থেকেই চীনের মত্স্যজীবীরা এখানে জাল ফেলে মাছ শিকার করতে আসছেন । কিন্তু চীনের মূলভূভাগ থেকে অনেক দূরে থাকা এবং যাতায়াত ব্যবস্থা অসুবিধাজনক বলে দ্বীপপুঞ্জের জেলেরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করতেন । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় সরকারের সযত্নে এবং আর্থিক সহায়তায় জেলেদের জীবনযাত্রায় ক্রমাগত আকাশ-পাতাল পরিবর্তন হয়েছে ।

হাইনান প্রদেশের ওয়েন ছাং শহর থেকে জাহাজে করে ১৫ ঘন্টা ধরে সামুদ্রিক যাত্রার পর সিশা দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ইয়ুংসিং দ্বীপে পৌঁছাই । ইয়ুংসিং দ্বীপের আয়তন মাত্র ২ বর্গকিলোমিটার । দূর থেকে জাহাজে দর্শন করলে দ্বীপটিকে মনে হয় যেনো নীল সমুদ্রের একটি সবুজ রত্ন ।

জাহাজ থেকে নামা মাত্র জেলে ফু চাইসৌ ও তার স্ত্রী গ্রাম থেকে বেরিয়ে আমাদের স্বাগত জানালেন । দীর্ঘকাল ধরে সমুদ্রে মাছ ধরা এবং বাতাসে ও রোদে থাকার কারণে ফু চাইসৌর শ্যামল রংয়ের ত্বক চকচকে করে । নিজের মাছ ধরার কাজ সম্পর্কে তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেন, এখানে সহজে মাছ শিকার করা যায় । সাধারণ সময় আমি সকালে মাছ ধরতে যাই এবং সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসি । অন্য জেলেদের কাছ থেকে কেনা মাছসহ প্রত্যেক বার আমি কয়েকশ'কেজি মাছ পাই ।

আগে উত্পাদন অবস্থার কারণে ফু চাইসৌ পরিবারের বার্ষিক আয় মাত্র ২০-৩০ হাজার ইউয়ান ছিল । মাছ ধরায় উন্নতমানের সরঞ্জাম ব্যবহার এবং মাছ বাজারের চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় তার পরিবারের মাথাপিছু আয় ৩০ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । আয়ের বৃদ্ধিতে ফু চাইসৌ ও তার পরিবার উপকৃত হয়েছেন । আরও আনন্দের বিষয় হল এই যে,ইয়ুং সিং তাও দ্বীপের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । তাদের জীবনযাত্রাও দিন দিন উন্নত হয়েছে ।

আগে দ্বীপে বিদ্যুত ছিল না । এখন বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হয়েছে । ২০০৭ সালে হাইনান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুংশা দীপপুঞ্জ বিষয়ক কর্ম কমিটি জেলেদের জন্য ৩০০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উত্পাদন সক্ষম এমন দুটা ডিজেল জেনেরেটোর বসিয়েছে । এতে দ্বীপের বিদ্যুত সমস্যা প্রশমিত হয়েছে ।

বিদ্যুত সমস্যা ছাড়া পানি সমস্যাও জেলেদের একটি বড় সমস্যা ।মিঠা পানি দ্বীপের সবচেয়ে দুর্লভ সম্পদ । সাধারণ সময় মিঠা পানি জাহাজের মাধ্যমে হাইনান দ্বীপ থেকে এখানে পাঠানো হয় । মিঠা পানি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ উপলব্ধি করে দ্বীপের প্রতিটি অধিবাসী বিশেষভাবে পানি সাশ্রয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। ফু চাইসৌর নানছুন গ্রামের লোকসংখ্যা মাত্র ৩০ । অর্ধেক বছরে এ ৩০জন লোক মাত্র ৫০ টন মিঠা পানি ব্যবহার করেছে । শহরাঞ্চলে এটা অভাবনীয় । তাদের পানি ব্যবহার সম্পর্কে ফু চাইসৌ বলেন , পানির অভাব বলে এখানকার সবাই খুব সাশ্রয়ী ব্যবহার করেন ।চাল ও শাকসব্জি পরিস্কার করার সময় আমরা সর্বপ্রথমে দ্বীপের পানি তার পর মিঠা পানি ব্যবহার করি ।

মিঠা পানির অভাব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্ম কমিটি একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে । বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে সামুদ্রিক পানির মিঠায়নে যে বিদ্যুত লাগবে তা এখন নিশ্চিত হয়েছে । কর্ম কমিটির উপপ্রধান থান সিয়েনখুন বলেন, সামুদিক পানিকে মিঠা পানিতে পরিণত করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে ।এর দাম এক টন পাঁচ ইউয়ান । তাছাড়া দূষণ পানিকে বিশুদ্ধ করার প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে । বিশুদ্ধ পানি গোসল ও কাপড় ধোঁয়ায় ব্যবহার করা যায় । এভাবে দ্বীপের জেলেরা খাওয়া ছাড়া জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে মিঠা পানি ব্যবহার করতে পারবেন ।

এছাড়া দ্বীপে পোষ্ট অফিস খোলা এবং মোবাইল ফোন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় জেলেদের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগে খুবই সুবিধা হয়েছে । মোবাইল ব্যবস্থা চালুর আগে দ্বীপের জেলেরা পোষ্ট অফিসের টেলিফোন ব্যবহার করে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন । প্রথম দিকে পোষ্ট অফিসে মাত্র ৩-৪টি টেলিফোন ছিল । এক মিনিট ফোন করলে ১০ ইউয়ান লাগতো । ফোন করতে চাইলে অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো । প্রাদেশিক সরকারের সহায়তায় চীনের টেলিকম কেম্পানির ব্যবস্থা নেয়ায় দ্বীপের জেলেদের ফোন করার সমস্যার সমাধান হয়েছে ।

আনন্দদের বিষয় হল, ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই ইয়ুং সিং দ্বীপে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয় । নেট কেন্দ্রে মোট ৩০টি কম্পিউটার রয়েছে । কম্পিউটারের মাধ্যমে নেট করা যায় । ঝড় বা টাইফুনের কারণে মাছ শিকার করতে যেতে না পারলে অনেকে এখানে এসে নেটের মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করেন । এ সম্পর্কে ২০ বছর বয়সী চি হাইউ বলেন, বন্ধু বা সহপাঠী আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আমরা নেটের মাধ্যমে দেখা করি বা গল্প করি । খুব সুবিধা এবং সস্তা ।

পোষ্ট অফিস, মোবাইল এবং ইন্টারনেট ছাড়াও দ্বীপে হাসপাতাল, ব্যাংক,সুপারমার্কেটও খোলা হয়েছে । কর্ম কমিটি জেলেদের জন্য বিলিয়ার্ড ও টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং জেলেরা বিনাপয়সায় সেখানে খেলতে পারেন । মূলভূভাগের মতোই দ্বীপে জীবনযাপন করা খুব সুবিধাজনক ।

পরবর্তীকালের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে গেলে ফু চাইসৌ নিজের হিম গুদামে রাখা সামুদ্রিক খাবার ভরা ৭টি ফ্রিজার-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, আবহাওয়া খারাপের সময় মাছ শিকার করতে যাওয়া না গেলে ফ্রিজাগুলোতে রাখা মাছ দ্বীপের অধিবাসীদের জন্য মাত্র সাত দিন সরবরাহ করতে সক্ষম ছিল । আবহাওয়া পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তিনি হিমগুদাম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছেন । গুদাম সম্প্রসারিত হওয়ার পর ১৫ দিনের মাছ রাখতে সক্ষম হবেন ।

ফু চাইসৌর স্ত্রী হেসে হেসে বললেন , সিশা দ্বীপের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার ক্রমাগত উন্নতি হবে বলে আমরা আশা করি ।সিশার জনগণের মাছের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা আরও বেশি মাছ শিকার করব ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China