v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিল্প উন্নয়নের অগ্রদূত ফেং সিয়াও পিং
2009-09-21 17:00:50
চীন একটি শিক্ষা মহাদেশ। প্রতি বছর চীন সাধারণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা , স্নাতকোত্তর ডিগ্রীতে ভর্তি পরীক্ষা এবং বিভিন্ন ধরণের পেশাগত যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার পটভূমিতে চীন শিক্ষা প্রশিক্ষণের বিরাট বাজার সৃষ্টি করেছে। অনেক বেশি লোক এসব পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। চীনে দেশ গড়ে তোলার সরকারী বিদ্যালয় ছাড়া, আরো অনেক বেসরকারী শিক্ষা প্রশিক্ষণ সংস্থা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দশ বছরেরও বেশি সময়ের উন্নয়নের মাধ্যমে চীনের নানা রকমের শিক্ষা প্রশিক্ষণ সংস্থা পেশাগত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। ফেং সিয়াও পিং ও তার প্রতিষ্ঠিত ওয়েন তু নামের কোম্পানি নিজের চেষ্টার মাধ্যমে চীনের শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিল্প পেশাগত উন্নয়নের প্রক্রিয়া স্বচক্ষে দেখেছেন।আজকের অনুষ্ঠানে ফেং সিয়াও পিং কর্মসংস্থানের সাফল্য অর্জনের প্রক্রিয়া এবং চীনের শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আমি আপনাদের বন্ধু লিলু।

১৯৯৫ সালে ফেং সিয়াও পিং চীন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর কোর্স সম্পন্ন করেছেন।এ বছরের গ্রীষ্মকালে এক আকস্মিক সুযোগে পেয়ে তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিল্পে যোগ দিয়েছেন। তারা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে শুধু গ্রীষ্মকালীণ ছুটিতেই তিনি দশ হাজারেরও বেশি ইউয়ান উপার্জন করেছেন। এ উপার্জনের কারণে তার জীবনযাপনের মানেও বেশ উন্নতি হয়েছে। এরপর থেকে তিনি শিক্ষা প্রশিক্ষণের কাজেই নিয়োজিত আছেন। তিনি বলেছেন, (১)

১৯৯৫ সালে গ্রীষ্মকালীণ ছুটিতে আমি শেন ইয়াং শহরে থাকতাম। আমি, আমার সহপাঠীর আত্মীয় ও আমার সহপাঠীর সহযোগিতায় শেনইয়াং পৌর কমিটির উদ্যোগে তিন শ'ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে প্রশিক্ষণ দেই। এ গ্রীষ্মকালীণ ছুটিতে আমি ৩০ থেকে ৪০ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত উপার্জন করেছিলাম।

বিংশ শতাব্দীর ৮০ দশকের প্রথম দিকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।চীনারা নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখতে চায়। তারা আশা করে, তারা নতুন চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাবে। তখন সমাজের অনেক সংস্থা বিভিন্ন ধরণের বিদ্যালয় গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়। বিশেষ করে, পেশাগত প্রযুক্তি ক্ষেত্রের স্বল্প-মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স। ৯০'র দশকের মধ্যবর্তীতে চীন থেকে বিদেশে লেখাপড়া করতে যাওয়া লোক সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণের বেসরকারী শিক্ষা প্রশিক্ষণের অনেক সংস্থা গড়ে তোলা হয়। অবশেষে এসব চীনের শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। ফেং সিয়াও পিং-এর ওয়েন তু নামের কোম্পানি এ পটভূমিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ফেং সিয়াও পিং ১৯৯৬ সালে ওয়েন তু নামে কোম্পানি গড়ে তোলেন। তখন এ কোম্পানির প্রধান কাজ ছিল স্নাতকোত্তর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া। ১২ বছর ধরে ওয়েন তু নামে কোম্পানি স্নাতকোত্তর নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া, বিভিন্ন ধরণের সরকারী কর্মকর্তা ভর্তির পরীক্ষা, জাতীয় আইন পরীক্ষা ও নানা রকমের পেশাগত শিক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দ্রুত উন্নত করেছে। বিশেষ করে, স্নাতকোত্তর ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে চীনে ওয়েন তু কোম্পানি'র বাজারে কোটার হার ৬০ শতাংশ। তাছাড়া, দু'লাখেরও বেশি পাঠক ওয়েন তু কোম্পানি প্রকাশিত বই পড়েছে।

শিক্ষা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে যোগ দেয়া সংস্থা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সৃষ্টি হয়েছে। দশ বছরের মধ্যে ছোট আকারের প্রশিক্ষণ সংস্থা পেশাগত পরিচালনা গ্রুপে উন্নীত হয়েছে।

ওয়েন তু কোম্পানির উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ফেং সিয়াও পিং দুবার কাঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি বলেন, (২)

এ দুবারের কাঠিন অবস্থা ছিল ব্যাপক। প্রথমতঃ আমার কোম্পানির উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব ছিল। প্রথম দিকে আমাদের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার চাহিদা উচুঁ ছিলনা। তবে সংস্থার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিচালনা ক্ষেত্রে দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবের কারণে পরিচালনা সমস্যা দেখা দেয়। দ্বিতীয়তঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বেশি অর্থের দরকার।

ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ সাফল্য অর্জন করতে চায় এবং বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করতে চায়। এর ওপর ফেং সিয়াও পিং বরাবরই জোর দিয়ে বলেছেন, এ জন্য সবার যথাসাধ্য চেষ্টা থাকা দরকার। আগে একজন পরীক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগে স্নাতকোত্তর ভর্তির পরীক্ষার ইংরেজীর মান ভালো ছিল না। তবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং তার নিজের চেষ্টার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠ সাফল্য অর্জন করেছে। এটি এ পরীক্ষার্থী যথাসাধ্য চেষ্টার ফলাফল। ফেং সিয়াও পিং আরো বলেন, (৩)

আমরা যথাসাধ্য চেষ্টার ওপর গুরুত্ব দেই। এ চেষ্টা আমরা আমাদের শিক্ষকদের মাঝে দেখতে পাই। কিছু কিছু শিক্ষক ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ কোর্স বাড়িতে প্রস্তুত করেছেন। এ সময়ে তারা কখনো বাড়ি ত্যাগ করেন নি। তারা সবসময় প্রশিক্ষণের কাজ করেছেন।

ফেং সিয়াও পিং প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলাফলকে গুরুত্ব দেন। বর্তমানে চীনের বেসরকারী শিক্ষা প্রশিক্ষণ সংস্থা অনেক। তবে তাদের প্রশিক্ষণের ফলাফল পরীক্ষার মানদন্ড ভিন্ন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রুপ বিভিন্ন ফীডব্যাক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। ফেং সিয়াও পিং'র কোম্পানি প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলাফলের জন্য দুটি ফীডব্যাক পদ্ধতির বন্দোবস্তু করেছে। তিনি বলেন, (৪)

প্রথমতঃ আমরা ভালো সাফল্য অর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একটি বিশেষ ফোরাম গড়ে তুলেছি। আট বছরে এ ফোরামে যোগ দেয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কয়েক শ'জন। দ্বিতীয়তঃ নমুনা-ওয়ারী তদন্ত। এটি হল ফলাফলের একটি জরীপ। অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের বলেছে। এসব পদ্ধতি প্রশিক্ষণের ফলাফল বাস্তব তার সাথে প্রকাশ করতে পারে।

শিক্ষা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ফেং সিয়াও পিং নতুন প্রযুক্তি ও নতুন প্রস্তাব গ্রহণের ওপর বরাবরই জোর দিয়ে বলেছেন,দূরশিক্ষণ বা দূরপাল্লার শিক্ষা হচ্ছে ফেং সিয়াও পিং এর বাজার সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বর্তমানে ওয়েন তু কোম্পানির প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খুব সুবিধাজনকও।

ফেং সিয়াও পিং মনে করেন, বর্তমানে চীনের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব প্রবল। তারা আরো ভালো প্রশিক্ষণের উপায় খুঁজে বের করছে। তিনি আশা করেন, আরো বেশি পরীক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজের গুণাবলী আরো উন্নত করতে পারবে এবং সুন্দর জীবন গড়তে পারবে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China