v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ফলমুলের স্বর্গ---সিনচিয়াং
2009-09-17 20:32:39
     প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা একটু আগে যে গান শুনেছেন তার নাম হল: "সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হল আমাদের সিনচিয়াং"। গানের কথা এমনি: " আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, তবে আমাদের সিনচিয়াং সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। যখন আমি থিয়েনসান পাহাড়ের দক্ষিণ ও উত্তর দিকে বেড়াতে যাই তখন আমি সবর্ত্র তরমুজের সুগন্ধ পেতে পারি। " গানে যে কথা বলা হয়েছে তা একেবারে সঠিক। প্রতি বছরের আগষ্ট মাসে সিনচিয়াংয়ে প্রচুর ফুলমুল পাওয়া যায়। থোকা থোকা আঙ্গুর যেখানে সেখানে দেখা যায়। মিষ্টি তরমুজ ইচ্ছামত পাওয়া যায়। আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা এক সঙ্গে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কাসি বিভাগের বোকেরানমো থানায় গিয়ে সেখানের বাম্পার ফসলের আনন্দ উপভোগ করবো।

    বোকেরানমো থানা সিনচিয়াংয়ের দক্ষিণাংশের কাসি অঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে প্রচুর আঙ্গুর , ডালিমসহ বেশ কয়েক ধরনের বৈশিষ্ট্যময় ফল উত্পাদিত হয় বলে প্রচীনকাল ধরে এই অঞ্চলকে " ফলের স্বর্গ" বলে অখ্যায়িত হয়। এ থানার ফল উদ্যানে উপস্থিত হলে ফলের সুগন্ধ আপনাআপনি নাকে ঢোকে। থোকা থোকা আঙ্গুর ও বড় বড় ডালিম সংবাদদাতার নজরে পড়ে। ফল চাষীদের কৃষি জমিতে কাজ করতে দেখা যায়। এ বছরের বাম্পার ফসল দেখে তাদের আনন্দের শেষ নেই। আঙ্গুর সংগ্রহরত ফল চাষী লিও উয়েন শিন আনন্দের সঙ্গে সংবাদদাতাকে বললেন,

    এখন পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। এ বছর আমার পরিবারের আয় ৪০ হাজার ইউয়ানে পৌছতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের আয় অপেক্ষাকৃত কম। কারণ যারা ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ইউয়ান বার্ষিক আয় করেন তাদের সংখ্যাও কম নয়।

এ বছরের বাম্পার ফসলের দৃষ্টি দেখে বোসিকেরান থানার কমিউনিষ্ট পাটি কমিটির সম্পাদক জেন ফেন মনের আবেগ সামলাতে না পেরে সংবাদদাতাকে বললেন, এ বছর এ থানার ফল উত্পাদনের পরিমাণ ৫০ হাজার টন পৌছবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফল উত্পাদনে যে অর্থ উপার্জন হয়েছে তা স্থানীয় বাসিন্দাদের মোট আয়ের ৪৮ শতাংশ। বন ও ফল শিল্পে এ থানার উন্নয়নের প্রাধান্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সবই প্রকৃতি প্রদত্ত। তিনি বলেন,

    প্রাচীনকাল থেকেই এখানে প্রচুর ফলমুল উত্পাদন হয়। কারন এখানকার আবহাওয়া আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী। আমাদের থানায় পানির অভাব রয়েছে । বেশী বৃষ্টিপাত হলে আঙ্গুর এত মিষ্টি হয় না।

    অদ্বিতীয় প্রাকৃতিক সম্পদের আলোকে বোসিকেরানমু থানার ফল চাষীরা সচ্ছল জীবন যাপন করছেন। এর পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের সচ্ছল জীবন আরও উন্নত হয়েছে। ২২ জন কৃষি কারিগর প্রতি দিন এই থানার ২১টি গ্রামের ঘরে ঘরে ফল চাষীদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান জনপ্রিয় করে তোলার কাজে নিয়োজিত। ৫৫ বছর বয়স্ক উইগুর জাতির মহিলা রেহানগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুসরণ ফল চাষের আনন্দ পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

     আমাদের ফল চাষের জ্ঞান দেয়ার জন্য থানার কৃষি কারিগররা মাঝে মাঝে আমার বাসায় আসেন। বিশেষ করে ফুল গাছ কাটা , সার দেয়া এবং কৃষি জমির ব্যবস্থাপনা ও পোকা দমনের ক্ষেত্রে তারা আমাদে অনেক সাহায্য করেছেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করার ফলে এ বছর আমার পরিবারের আঙ্গুর উত্পাদনের পরিমাণ কয়েক হাজার কিলোগ্রাম হতে পারের।

     বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করার প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি স্থানীয় অঞ্চলের এক মু জমিতে গড় উত্পাদনের পরিমাণ ক্রমেই বেড়েছে। এ থানার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত কাজ বিষয়ক উপ পরিচালক ওয়াং লিন ভিয়ে মনে করেন, ভবিষ্যতে গোটা থানার ফুল উত্পাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি বলেন,

ফুল উত্পাদনের পরিমাণ বাড়ানোর নিহিত শক্তি রয়েছে। আমরা প্রতি মু জমিতে ফুল উত্পাদনের পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করবো। এর পাশাপাশি অন্যান্য শাকসবজি ও কুমড়া চাষ করা হবে। অদুর ভবিষ্যতে প্রতি মুর জমিতে আঙ্গুর উত্পাদনের পরিমাণ দশ হাজারেরও বেশী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নোয়েমাইমাইতি দাউদি স্থানীয় বন ও ফুল সমিতির একজন আহিলকার । তার প্রধান কাজ হল ফল চাষীদের ফলমুল ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করা। চলতি বছর ফল বিক্রির পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বুড়ো আঙ্গুল প্রদর্শন করে এর প্রসংশা করেন। তিনি বলেন,

চলতি বছর ফলের যথেষ্ট কাটতি হয়েছে। এখানে যে সব ফুলমুল উত্পাদিত হয়েছে সে সব ফলমুল দূষণমুক্ত পণ্য। ফুল চাষের সময় সার ব্যবহার করা হয়নি। ফলমুল সংগ্রহ থেকে অবশেষে বিক্রি পযর্ন্ত ধারাবাহিক পরিসেবার ব্যবস্থা করা হয়। ফলমুল কেনার সময় আমাদের একক গুণগতমানের চাহিদা আছে। বিক্রির সময় আমাদের একক প্যাকিং ও মার্ক আছে। যার ফলে আমাদের ফুলমুলের গুণগতমান নিশ্চিত করা হয়েছে।

বোসিরানমু থানা কাসি অঞ্চলের বান ও ফলমুল উন্নয়নের একটি প্রতিনিধি মাত্র। এ অঞ্চলে উত্পাদিত ফলমুল চীনের বিভিন্ন এলাকার বাজারে পাওয়া যায়। ২০০৪ সাল থেকে এ অঞ্চলের আঙ্গুর পাকিস্তানে রফতানি করা হয়। প্রতি বছর পাকিস্তানের কাছে রফতানিকৃত আঙ্গুরের পরিমাণ ২ লাখ বেশী টনের কাছাকাছি। জানা গেছে, পাকিস্তানের বাজারে চীনের আঙ্গুর অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ফলমুলের রপ্তানী বাণিজ্যের উন্নয়ন আরও তরান্বিত করার জন্য কাসি শুল্ক বিভাগ স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীদের জন্য " গ্রীণ পথ" স্থাপন করেছে। শুল্ক বিভাগ পার হওয়ার প্রণালী সহজতর করা হয়েছে। এ শুল্ক বিভাগের প্রধান মেন ভিয়ে পিন সংবাদদাকে বলেন,

স্থানীয় বন ও ফলমুল উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করার জন্য আমরা তাদের জন্য " গ্রীন পথ" স্থাপন করেছি। ডাজন বন ও ফুল কোম্পানির ফলমুল যখন পাকিস্তানে পাঠানো হয় তখন সরাসরি শুল্ক বিভাগের গুদামে এনে রাখা যায়। যার মাধ্যমে অনেক অর্থের সাশ্রয় করা হয়েছে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China