v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পেইচিংয়ে আন্তর্জাতিক বই মেলা চীন ও বিদেশী সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সেতু
2009-09-16 11:14:16

পাঁচদিনব্যাপী ১৬তম আন্তর্জাতিক বই মেলা ৭ সেপ্টেম্বর পেইচিংয়ে শেষ হয়েছে। এ মেলায় বিশ্বের এক হাজার সাতশ'টি প্রকাশনা সংস্থার এক লাখ ৬০ হাজার ধরণের বই স্থান পেয়েছে। মোট ২ লাখ দর্শক এ মেলা দর্শন করেছে। বিশ্ব আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে, চীনের প্রকাশনা শিল্পের দ্রুত উন্নতি হয়েছে। সে কারণে পেইচিংয়ের আন্তর্জাতিক বই মেলার প্রতিও শক্তিশালী আর্কষণ দেখা দিয়েছে। যা চীন ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা শিল্পের জন্য সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সেতু হিসেবে কাজ করছে।

আন্তর্জাতিক প্রকাশনা শিল্পের ওপর আর্থিক সংকটের গুরুতর প্রভাব পড়া সত্ত্বেও এ বছরের পেইচিং আন্তর্জাতিক বই মেলা ছিল জাঁকঁজমকপূর্ণ। দেশ- বিদেশের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও ছিল গত বছরের চেয়ে বেশি। হার্পারকলিনস ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রকাশনা গ্রুপ, পেঙ্গুইন গ্রুপ, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থাগুলো এতে অংশ নিয়েছে। এ গ্রুপগুলোর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও বই মেলায় উপস্থিত ছিলেন।

৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের জাতীয় তথ্য ও প্রকাশনা সদর দপ্তরের প্রধান লিউ বিন চিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বই মেলা আন্তর্জাতিক প্রকাশনা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড প্রদর্শনীর মধ্যে অন্যতম। যা আন্তর্জাতিক কপিরাইট বানিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। তিনি বলেন, "বিশ্বের প্রকাশনা শিল্পের ওপর আর্থিক সংকটের গুরুতর প্রভাব পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে চীনের তথ্য ও প্রকাশনা শিল্প বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের বই মেলার আকারও কমে নি। ৪৩ হাজার বর্গমিটার আয়তনে দু'হাজার একশ ৪৬টি স্টল এবং ৫৬টি দেশ ও অঞ্চলের ১৭৬২টি প্রকাশনা সংস্থা এতে অংশগ্রহণ করেছে। এ মেলা বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার মধ্যে কপিরাইট বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং কষ্টকর পরিস্থিতি অতিক্রম করে যৌথ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হয়েছে।

এ বছরের প্রথম ছ'মাসে চীনের প্রকাশনা শিল্প অব্যাহত বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে পেইচিংয়ের আন্তর্জাতিক বই মেলা আন্তর্জাতিক প্রকাশনা শিল্পের জন্য ছিল আকর্ষনীয়। জার্মানির ৪০টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা নয়শ'রও বেশি বই নিয়ে প্রদর্শনীর স্টল সাজিয়েছে। যা আকারে ছিল খুবই বড়। স্পেনের দশটি'রও বেশি প্রকাশনা সংস্থা সর্বশেষ বই ও সে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়া বই নিয়ে এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।

বৃটেনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস সাতশ ধরণের বই নিয়ে এ মেলায় অংশ নিয়েছে। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি-বিজ্ঞান।

তাছাড়া পেইচিং আন্তর্জাতিক বই মেলার অনেক সমৃদ্ধ ধারা রয়েছে। এতে প্রথমবারের মত সি.ই.ও শীর্ষ সম্মেলন ও প্রকাশকদের জন্য বাণিজ্যিক রজনী আয়োজিত হওয়ার পাশাপাশি একশ'রও বেশি প্রকাশনা সংস্থা ও লেখক স্টলে দর্শনার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছে।

আন্তর্জাতিক বই মেলার প্রধান অংশ ছিল প্রদর্শনীতে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ। এতে ধারাবাহিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। জাপানের স্যানরিও কোম্পানি চীনের ছিং তাও প্রকাশনা গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তাতে এ কোম্পানি চীনের মুলভূভাগে তার বিখ্যাত শিশুদের চ্যানেল " হ্যালো কিটি-ভালো বন্ধু" প্রকাশনার জন্য ছিং তাও প্রকাশনা গ্রুপকে অনুমোদন দিয়েছে। এটা হলো জাপানের শিশুদের হস্তশিল্পজাত চ্যানেল ও চীনের প্রকাশনা শিল্প মহলের মধ্যে প্রথমবারের মত সহযোগিতা। জাপানের স্যানরিও কোম্পানির টোকিও সদর দফতরের বোর্ডের সদস্য শিনচি সুজুকি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, চীনের বাজারের ওপর তার যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, 'আমাদের ম্যাগজিনের প্রধান লক্ষ্য স্কুল যাওয়ার আগে শিশুদের আনন্দময় শিক্ষা গ্রহণ করা। আমাদের বই চীনা শিশুদের জন্য আনন্দ বয়ে আনার পাশাপাশি তাদের বুদ্ধিরও উন্নয়ন করতে পারবে। সেজন্য আমরা এ বাজারের ওপর আস্থাবান। কারণ এ বাজার আগে উন্নয়ন করা হয় নি। সেজন্য ছিং তাও প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নতুন বাজার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

চীনের ছ'শ প্রকাশনা সংস্থাও পেইচিংয়ের আন্তর্জাতিক বই মেলা বিশ্বের বাজারে প্রবেশের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। এ মেলা উদ্বোধনের পর আন হুই প্রকাশনা গ্রুপ অর্ধবেলা ধরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, হংকংসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে ৯০টি'রও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এ কোম্পানির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের মাদাম চু ছাং আই বলেছেন, এ বছরের বই মেলার রপ্তানিযোগ্য বইয়ের সংখ্যা ছিল গত বছরের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনী শেষ হওয়ার আগে আমরা ধারাবাজিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এবারের সেনায় ১৩০ থেকে ১৫০টি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মেলা চলাকালে আমরা ২০টি দেশের ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রতিদিন আমরা দশজনের বেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করি।

উচ্চশিক্ষা প্রকাশনা সংস্থা এবারের মেলায় "আকর্ষণীয় চায়না" শীর্ষক ডি.ভি.ডি'র প্রথম মুক্তকরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তারা থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসকে ডি.ভি.ডি উপহার দিয়েছে। এ সংস্থার বৈদেশিক সহযোগিতা বিভাগের উপ-পরিচালক মাদাম সিয়াও ছিং বলেন, "গত বছরের মেলায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল আমদানির চেয়ে বেশি। কিন্তু এর আগে আমদানির পরিমাণ ছিল রপ্তানির চেয়ে বেশি। আমার মনে হয় সময় এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের সাংস্কৃতিক প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সেজন্য নিশ্চয়ই আমাদের দেশের রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে।

আসলে বই আমদানি ও রপ্তানি কর্মকান্ড উভয় ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। চীনের তথ্য ও প্রকাশনা সদর দফতরের উপ-মহাপরিচালক উ সু লিন বই মেলায় বিদেশীর কাছে বই পরিচয় করা সংক্রান্ত আলোচনা সভায় বলেছেন, বইয়ের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জ্ঞান বিনিময় ও মন যোগাযোগ করা যায়। যা সারা বিশ্বে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বিদেশে চীনের বইগুলো সম্প্রসারণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা চীন সরকারের অনুবাদের জন্য ব্যয় করার পাশাপাশি বিদেশী প্রকাশনা সংস্থাকে চীনা বই প্রকাশনার জন্য উত্সাহিত করে। তিন বছর আগে এ পরিকল্পনা শুরু হয়। এর আগে ৩০টি দেশের ১০০টিরও বেশি সংস্থা এতে অংশ নিয়েছে।

বিদেশে চীনের বইগুলোর সম্প্রসারণ সংক্রান্ত পরিকল্পনার একজন দায়িত্বশীল ও চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য দপ্তরের কর্মকর্তা মাদাম উ ওয়ে বলেছেন, পেইচিংয়ে আন্তর্জাতিক বই মেলার পর ফ্রান্কফুট বই মেলা আয়োজিত হবে। প্রধান অতিথি দেশ হিসেবে আমরা সেই মেলায় চীনের সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য যথাযথ চেষ্টা চালাবে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China