v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে লেখাপড়া করতে চাওয়ার পেছনে চীনের সংস্কৃতি ছাড়াও, অন্য কারণ রয়েছে
2009-09-14 20:55:26
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালে চীনে অধ্যায়ন করতে আসা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দু'লাখেরও বেশি। এ সংখ্যা ২০০৭ সালের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩০ বছরে চীনে লেখাপড়া করতে আসা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৮০ গুণ বেড়েছে। কেন এতো বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনে লেখাপড়া করার ক্ষেত্র বাছাই করেছে? তারা চীনে কী কী শিখতে পারে? আজকের অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আমি আপনাদের বন্ধু লিলু।

বেলজিয়ামের মেয়ে সোপিয়ে মাট্টহি "চীনা ভাষা সেতু" নামে বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী চীনা ভাষা সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেছে। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সোপিয়ের একটি চীনা নাম রয়েছে।তার চীনা নাম হল হাও ফেই।সে বেলজিয়ামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের একজন ছাত্রী। চীনা ভাষা সেতু নামে এ প্রতিযোগিতায় সে চ্যাম্পিয়ন হয়। আমাগী বছর সে চীনে এসে চীনা ভাষা বিভাগের স্নাতকোত্তর ডিগ্রী কোর্সে লেখাপড়া করবে। এরপর সে চীন সম্পর্কিত চাকরি পেতে চায়। চীনা ভাষা শেখার কারণ সে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে, (১)

ছোট বেলায়ই আমি চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী হই। ছয় বছর বয়সে আমার একজন চীনা মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ১৬ বছর বয়সে প্রতি সপ্তাহে আমি বাইরে কাজ করে টাকা উপার্জন করেছি। ১৮ বছর বয়সে আমি পর্যটন দলে যোগ দিয়ে চীনের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছিলাম। ১৯ বছর বয়সে আমি বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের একজন চীনা মেয়ের বন্ধুতে পরিণত হয়েছি। তিনি বেলজিয়ামে লেখাপড়া করতেন। তিনি স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময় আমি তার সঙ্গে আবার চীনে গিয়েছি। এর পাশাপাশি আমি তার বাড়িতে থাকতাম। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমি শান তোং প্রদেশের চিনান শহরে অবস্থিত শান তোং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছিলাম। আমি চীনা ভাষা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় নেতৃত্বাধীন দলের স্কলারশীপ পেয়েছিলাম।

হাও ফেই'র অভিজ্ঞতা শুধু চীনের সংস্কৃতি পছন্দ করার কারণে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনে লেখাপড়ার একটি দৃষ্টান্ত। তারা ছোট বেলা থেকেই চীনের সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এসব তাদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে।

তবে একটি দেশের শুধু সংস্কৃতি বিদেশীর দৃষ্টি আকর্ষণের কারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। ১৯৫০ সালে পূর্ব ইউরোপের ৩৩জন ছাত্র-ছাত্রী চীনের পেইচিংয়ে লেখাপড়া করেছিলেন। তারা হচ্ছেন নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর ভর্তি হওয়া প্রথম দফার বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ২৯ বছরে চীন ১২ হাজারেরও বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ চীনে সরকারী স্কলারশীপ পেয়েছেন। ২০০৮ সাল শুধু এক বছরে চীন ১৮৯টি দেশের ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণ করেছে। এ সংখ্যা ১৯৭৮ সালের তুলনায় ১৮০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে নিজের অর্থে ফি ও বেতন দেয়া ছাত্র-ছাত্রীর হার ৯০ শতাংশ বেশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে লেখাপড়া করা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গবেষণাগারের উপগবেষক ওয়াং ইউ চু মনে করেন,(২)

প্রথমতঃ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চায়। তাছাড়া, চীন আন্তর্জাতিক বাজার পর্যায়ে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দ্বিতীয়তঃ চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মান বেশি উন্নতি লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চীনের সংশ্লিষ্ট মান বিশ্বের শীর্ষ স্থান পেয়েছে। অনেক বিদেশী চীনের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি শিখতে চায়। তৃতীয়তঃ আরো বেশি দেশ চীনের ব্যবস্থা , সংস্কৃতি ও সভ্যতার স্বীকৃতি দেয়ার পটভূমিতে তারা চীনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

বর্তমানে চীনের প্রায় ছ'শ বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণের যোগ্যতা রয়েছে। আগে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে লেখাপড়ার বিষয় অন্তর্ভূক্ত ছিল, চীনা ভাষা ও চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা ও ভেষজ। বর্তমানে তা চীনা ভাষা, অর্থনীতি, চিকিত্সা, আইন ও পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নীত হচ্ছে।

ফিজি থেকে আসা এতা হচ্ছেন ফিজি সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তার বিভাগ বেতার ও টেলিভিশনের তথ্য সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব পালন করছে।তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কাজ করার সামর্থ্য উন্নত করার জন্য এতাকে চীনে পাঠানো হয়েছে। তিনি মধ্য চীনের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতার ও টেলিভিশন ক্ষেত্রের জ্ঞান অর্জন করছেন।তিনি বলেছেন, (৩)

আমাদের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি জরীপ অনুযায়ী, আমাদের কর্মীদের বেতার ও টেলিভিশন খাতের বাজারে ক্রয় বিক্রয়ের সামর্থ্য উন্নত করা দরকার। আমাদের বিভাগ বড় নয়। আগে আমার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুতরাং আমার বিভাগীয় প্রধান আমাকে চীনে লেখাপড়া করার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ২০০৮ সাল থেকে চীন সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দেয়া স্কলারশীপের সংখ্যঅ বেড়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান ও আবাসনের মানও ইতিবাচকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ইংরেজী ও অন্যান্য বিদেশী ভাষা শিক্ষাদানের কোর্স চালু এবং বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচালনার জন্য ক্যাডার ও শিক্ষাদানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজ জোরদার করছে। গত বছরের মার্চ মাস থেকে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিটোল ড্যাটাবেস গড়ে তুলেছে। যাতে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ক্ষেত্রের পরিচালনা আরো মানসম্পন্ন করা যায়।

চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গবেষণাগারের উপগবেষক ওয়াং ইউ চু বলেছেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সর্বাধিক জ্ঞান দিতে পারে। তিনি বলেন, (৪)

প্রথমতঃ সমাজের সভ্যতা উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতিতে চীন বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে এবং তা বিশ্বের প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে। দ্বিতীয়তঃ চীনের দ্রুত উন্নয়নের কারণে বিশ্বের বহু দেশ চীনকে গুরুত্ব দেয়। তারা চীনের রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ এমনকি দাম্পত্য সম্পর্কের গবেষণাও করতে চায়।

আমরা দেখতে পেয়েছি যে, চীনের সংস্কৃতি চীনে লেখাপড়া করা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের একক কারণ নয়। তারা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সাফল্য থেকে জানতে পেরেছে যে, তারা চীনে বেশি উন্নয়নের সুযোগ পেতে পারে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China