 নাস্তা খাওয়ার পর আমরা রুই লি শহর থেকে ইয়ুননান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের সীমান্তে অবস্থিত লুং ছুয়ান জেলায় এসে পড়লাম । এ জেলার লোকসংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার । এখানকার অধিবাসীদের অধিকাংশই চিং পোও জাতির লোক ।
 পাশাপাশি অন্য কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতির লোকেরাও এখানে বাস করেন । জেলা শহর চাং ফোং হচ্ছে চীনের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় শ্রেণীর স্থলবন্দর । এ স্থলবন্দরে চীন ও মায়ানমারের মধ্যে প্রতিদিন রমরমা ব্যবসা হয়ে থাকে । চাং ফোং স্থলবন্দরে কিছু সময় বিরতির পর আমরা এ জেলার চিং পোও সাংস্কৃতিক মহাচত্বরে আসলাম ।
 এ মহাচত্বরের আয়তন ২২১ হেক্টর । প্রতি বছরের চান্দ্রিক জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখে চিং পোও জাতির নারী পুরুষ বৃদ্ধ শিশু সবাই এখানে সমবেত হয়ে ঐতিহ্যিক মু নাও সংগীত উত্সবে অংশ নেন । সে সময় দশ হাজারেরও বেশি লোক মিলে এ মহাচত্বরে অবিরামভাবে নাচ গান করেন । সুতরাং এ উত্সব দশ হাজার লোকের নৃত্য সম্মিলনী বলেও পরিচিত ।
 এরপর আমরা চিং পোও জাতির একটি গ্রামে গেলাম । এ গ্রামের গভীরে গিয়ে আমরা দেখতে পেলাম সারি সারি আকাশচুম্বী গাছ । চিং পোও জাতির প্রবাদ অনুসারে যে গাছ সবচেয়ে বড় , সেটি এখানকার সব গাছের মা ।
 অন্য গাছগুলো তাদের সন্তান । এটি বোধগম্য । কেন না , প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ততা ছিল সংখ্যালঘু জাতির আদি পুরুষদের সনাতন বিশস্ততা । তখন মানুষ প্রকৃতির অকল্পনীয় শক্তির প্রতি ভয় পাওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাও প্রকাশ করেন । এটিও চিং পোও সংস্কৃতির একটি অংশ বিশেষ ।

যখন আমরা এ গ্রামে এসে পড়লাম , তখন ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিহিত চিং পোও জাতির মেয়েরা হাতে মদ নিয়ে সারিবদ্ধভাবে আমাদের স্বাগত জানালেন । গ্রামে চিং পোও জাতির মধুর গানের তালে তালে আমরা একসাথে মু নাও নাচ করলাম । এখানে আমি দেখতে পেলাম , চিং পোও জাতির পোশাক-আষাক , খাবার-টাবার ও খাওয়ার পদ্ধতি ভারতীয় লোকের সংগে প্রায় হুবহু একই ।

ভারতীয়রাও ভাত ও তরকারি মিশিয়ে হাতে খান । এটা দেখে আমি ভাবতে লাগলাম , চীনের চিং পোও জাতি ও ভারতের মধ্যে কি কিছু ঐতিহাসিক যোগসূত্র ছিল ? এজন্যে আমি কিছু বই পড়লাম । এ বইগুলো থেকে আমি জানতে পারলাম , চীনের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতেই চিং পোও জাতির উত্পত্তিস্থল ।

এক হাজার বছর আগে চিং পোও জাতির লোকেরা ক্রমে ইয়ুননান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের সীমান্তে আসতে থাকেন । পরে যুদ্ধের কারণে তারা পশ্চিম দিকে আসতে থাকেন । সপ্তদশ শতাব্দির পর তারা ধাপে ধাপে ইয়ুননান প্রদেশের তে হুং এলাকায় বাস করতে শুরু করেন । এতে প্রমাণিত হয় , চিং পোও জাতি ও ভারতের মধ্যে প্রায় কোনো যোগসূত্র ছিল না বলে বলা চলে ।

নাচ করার ফাঁকে ফাঁকে আমি এ গ্রামের একটি মেয়ের সংগে আমার আলাপ হলো । সে আমাকে জানায় , সে একজন ছাছী । এখন তাদের স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বলে সে দেশের বাড়িতে ফিরে এসেছে ।

সে আমাকে বলল , আগামী বছর সে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হবে । স্নাতক হওয়ার পর সে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করতে চায় । আমি আবিষ্কার করলাম , সংখ্যালঘু জাতির এ নতুন প্রজন্ম আর গ্রামে থেকে থাকতে চায় না । তারা সবাই বাইরে গিয়ে আরো বেশি সুযোগ অন্বেষণ করতে চায় । |