v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
মংলা জেলার কৃষকদের ফল চাষের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছেন
2009-09-10 20:41:46
ম্যানলংলে চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশের দক্ষিণাংশের সিশুয়াংবাংনা বিভাগের মংলা জেলার একটি সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত গ্রাম। এ গ্রামে যেখানে সেখানে প্রাচীন সবুজ গাছের সারি । তা ছাড়া একটি বড় নদী এ গ্রামের চার দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ জেলায় ব্যাপকভাবে বন ও নানা ধরনের ফুল শিল্প বিকশিত হয়েছে। বতর্মানে এ গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ কার্যকরভাবে রক্ষা করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে।

গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিক থেকে, ম্যানলংলে গ্রামে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অর্থকরী সফল –রাবার গাছ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এ শতাব্দীর শুরুতে গোটা গ্রামে রাবার গাছ লাগানোর প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। বতর্মানে গোটা গ্রামে ৮২ হেক্টর জমিতে রাবার গাছ লাগানো হয়েছে। এ পযর্ন্ত ২০ হেক্টর রাবার গাছ থেকে রাবারের রস সংগ্রহ করা হয়েছে। বহু বছরের প্রচেষ্টার পর গ্রামবাসীরা বুঝতে পেরেছেন যে, ধান ও কলাসহ অন্য ফসলের চেয়ে রাবারের মূল্য অনেক বেশী। এ গ্রামের অন্যতম নেতা চৌ ইয়েন ছাং বলেন

আমরা এক হাজারেরও বেশী মুর জমিতে রাবার গাছ লাগিয়েছি। রাবার কারখানার লোকজন এখানে এসে রাবার কিনে থাকে। রাবারের দাম বাজারের মতো।এখন সবাই জানে , ধান ও কলার চেয়ে রাবার চাষ থেকে পাওয়া আয় অনেক বেশী। সুতরাং এখন লোকেরা রাবার চাষ করতে বেশি আগ্রহী।

রাবার ও অন্যান্য ফসল চাষ করার পাশাপাশি এ গ্রামের আংশিক কৃষক নিজেদের জমি কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছে। সে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ভাড়া জমিতে আবার কলা চাষ করে। মেনলা জেলার মেনলা থানা নগরের প্রধান ইয়েন লা শাং সংবাদদাতাকে বলেন,

যদি আবাদি জমিতে গ্রামবাসীদের চাষ করার সুযোগ নেই তাহলে তারা সাধারণত জমি ভাড়া দেয়। কোনো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান হয়তো এ ভাড়াকৃত জমিতে কলা চাষ করে । যদি তারা নিজেই ধান চাষ করে তাহলে তারা বড়জোর প্রতি মুর জমি থেকে ২৫০---৩০০ ইউয়ান আয় করতে পারেন। কিন্তু যদি তারা জমি ভাড়া দেয় তাহলে প্রতি মুর জমি থেকে তাদের বার্ষিক আয় হয় ১১০০---১২০০ ইউয়ান। উপরন্তু তারা অন্যান্য কাজও করতে পারে।

এ গ্রামে সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন, গ্রামবাসীর বাসায় নানা ধরনের ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সাজানো রয়েছে। প্রায় সকলের হাতে রয়েছে সেলফোন। তাদের মধ্যে অনেকেই ট্রাকটার ও কৃষিতে ব্যবহৃত তিন চাকার গাড়ি কিনেছে। তাদের জীবন বর্ণাঢ্য করে তোলার জন্য অনেক গ্রামবাসী অবসর সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। ৬০ বছর বয়স্ক পু খ্যাং লো বলেন, এখন গ্রামবাসীদের প্রতি সরকারের অনেক সহায়তা নীতি প্রবর্তিত হয়েছে । ২০০৫ সাল থেকে, গ্রামবাসীরা বিনা পয়সায় অনেক ধরনের ফসল চাষের উত্পাদন সামগ্রী কিনতে পেরেছে। উত্পাদনের ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে গ্রামবাসীদের আয় আপনাআপনি বেড়েছে। এখন তারা যে বার্ষিক আয় পেতে পারে তা আগে কল্পনাও করা যেতো না।

আমার পরিবারে ৬জন সদস্য আছে। ধান চাষ করার জমি ১২ মু এবং রাবার চাষ করার জমি ৩০ মু। দু বছর আগে ধান চাষের জমি ভাড়া দেয়া হয়েছে। এ ভাড়াকৃত জমি থেকে আমরা প্রতি বছর ৩০ হাজার ইউয়ান পাই। এখন আমারা সচ্ছল জীবন যাপন করছি। দশ বছর আগে আমাদের জীবনযাত্রা এত উন্নত ছিলনা। দশ বছর আগে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র এক হাজার ইয়ান। এখন বছরের পর বছর আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।

গত শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে ম্যালংলে গ্রামে বনের মালিকানা ব্যবস্থায় বেশ কয়েক বার সংস্কার চালানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংস্কারে অনেক সমস্যা বিরাজ করছে বলে বন শিল্প ক্ষেত্রের উন্নতি বিঘ্নিত হয়েছে।

সিশুয়াংবানা বিভাগের মেনলা জেলায় ৬৬ শতাংশ জমিতে গাছ লালানো হয়েছে। বন শিল্পের উন্নয়ন দ্রুততর করার সঙ্গে সঙ্গে এ জেলায় সংশ্লিষ্ট নীতি ও প্রবর্তিত হয়েছে। এ সব নীতিপন্থা হল, আবাদি কৃষি জমিতে পুর্নবনায়ন প্রকল্প জোরদার করা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যবস্থাপনা কাজ জোরদার করা। যার ফলে বনের সম্পদ বৃদ্ধি ক্ষয়ের পরিমানের চেয়ে বেশী। এ জেলার প্রথম উপ পরিচালক দাও চিয়া ছাং বলেন, এ বছর এ জেলায় রাষ্ট্রের বৃদ্ধি বজায় রাখা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর নীতি প্রবর্তনের প্রক্রিয়ায় বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। ভবিষ্যেতে আবাদি কৃষি জমিতে পুর্নবনায়ন প্রকল্প জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন,

বন রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা অনেক কাজ করেছি। যেমন কৃত্রিম বন লাগানোর কাজ, সমুদ্র সমতার তুলানায় নির্দিষ্ট উচু জায়গায় গাছ কাটা নিবিবদ্ধ , সমুদ্র সমতার তুলনায় নির্দিষ্ট নীচু জায়গায় রাবার গাছ কমিয়ে বনায়ন বাড়ানোর কাজ ইত্যাদি। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার আর্থিক সাহায্য দিয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, প্রামবাসীদের বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার সচেতন তা বাড়ানোর জন্য বন সংরক্ষণ ম্যালংলে গ্রামের বিধি হিসেবে লিবিবদ্ধ হয়েছে। এ গ্রামের পিছনে ৬০০ হেক্টর জমিতে ঘনঘন গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের বৃক্ষ নিধনের ঘটনা কোন দিন ঘটেনি। গ্রামবাসী পো খান লো সংবাদদাতাকে বলেন.

গ্রামের প্রবীণ ও নেতারা এক সঙ্গে গ্রামের এই বিধিতে সাক্ষর করেছেন। যদি কেউ নিজের বাড়ি নির্মানের জন্য গাছ বা বাঁশ ব্যবহার করতে চায় তাহলে তারা গ্রামের নেতাদের অনুমোদন নিয়ে গাছ কাটতে পারেন। নইলে তাদের কর্মকান্ডে গ্রামের বিধি লঙ্ঘণ হবে।

এই জেলার মেনলা থানা শহরের প্রধান ইয়েন লা শিয়াং বলেন, এক দিকে এই থানা বনের জমি রক্ষার মাধ্যমে গ্রামবাসীদের আয় বাড়িয়েছে। অন্য দিকে তারা বন সংস্কারের সংশ্লিষ্ট নীতি অনুযায়ী জমি ও সম্পদের প্রাধান্যকে কাজে লাগিয়ে বনে অন্যান্য ফসল চাষের কাজ জোরদার করেছে। এ প্রকল্প বাস্তায়িত হওয়ার ফলে আগামী তিন বছরের মধ্যে গোটা নগরের মানুষের মাথাপিছু আয় দু'হাজারের মতো রেন মিন পি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন,

এখন বনে স্থানীয় মুরগী চাষ করা হয়। তা ছাড়া বাঁশও লাগানো হয়েছে। বতর্মানে আমাদের গ্রামের চার দিকে বাঁশ লাগানো হয়েছে। বাঁশ ছাড়া কয়েক ধরনের চীনের ঐতিহ্যবাহী ঔষধী লাগানো হয়েছে। এ সব অর্থরকী সফলে গ্রামবাসীদের জন্য হিতকর হয়। যদি এ বছর আমাদের এ সব প্রকল্প সফল হয় তাহলে আগামী বছর এ প্রকল্প জনপ্রিয় করে তোলা হবে। ২০১২ সালে মাথাপিছু আয় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ইয়ান পৌছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China