v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সুন্দর ও সমারোহময় হুয়াং কুও শু জলপ্রপাত
2009-09-10 20:03:38

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের আন শুন অঞ্চলে সুন্দর হুয়াং কুও শু নামের একটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এখানে অনেক সবুজ পাহাড় ও জলপ্রপাত রয়েছে। বিখ্যাত হুয়াং কুও শু জলপ্রপাত মূল কেন্দ্র হিসেবে বিভিন্ন আকারের '৯ পর্যায়ের আরো ১৮টি জলপ্রপাত' রয়েছে। পাথর খুঁটির বেড়া দেয়া পল্লীগ্রাম, থিয়ান সিং সেতু, লাং কোং ও তি শুই থান জলপ্রপাতসহ ৬টি বৈশিষ্ট্যময় দর্শনীয় স্থান এখানে রয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে হুয়াং কুও শু-এ নিয়ে সেখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং গভীর লোক রীতিনীতি অনুভব করবো। বন্ধুরা, চলন না যাওয়া যাক তাহলে।

চীনের প্রথম বড় জলপ্রপাত হিসেবে হুয়াং কুও শু জলপ্রপাত সবসময় দেখতে পাওয়া স্থানীয় এক ধরনের বৃক্ষ 'হুয়াং কুও শু' থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছে। অন্য জলপ্রপাতের দৃশ্যের চেয়ে পর্যটকরা উপরে, নিচে, বামে, ডানে, সামনে ও পেছনে এই ৬টি দিক থেকেই হুয়াং কুও শু জলপ্রপাতের সবসময়কার পরিবর্তিত দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ঠিক এই অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাকে বিশ্বের বিখ্যাত জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও সমারোহময় জলপ্রপাত বলে পরিচিত।

হুয়াং কুও শু জলপ্রপাতকে কেন্দ্র হিসেবে এখানে বিভিন্ন আকারের আরো ১৮টি বড় ও ছোট জলপ্রপাত রয়েছে। ফলে এ স্থানটি একটি বিরাট জলপ্রপাতের 'পরিবারে' পরিণত হয়েছে। এর সমন্বিত নাম হলো '৯ পর্যায়ের ১৮ জলপ্রপাত'। সুন্দর এ দৃশ্য গ্রিট ওয়াল্ড গিনিস সদর দপ্তর বিশ্বের বৃহত্তম জলপ্রপাত গ্রুপ বাছাই করার পাশাপাশি বিশ্ব গিনিস রিকর্ডে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। স্থানীয় বু ই জাতির পথপ্রদর্শক ওয়েই ফাং বলেন,

হুয়াং কুও শু শুধুমাত্র একটি জলপ্রপাতই নয়। বরং এটি একটি বিরাট জলপ্রপাত গ্রুপ। এর নিকটবর্তী ২০ কিলোমিটারের মধ্যে নানা রকম ছোট ছোট আরো অনেক জলপ্রপাত রয়েছে। হুয়াং কুও শু জলপ্রপাতটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। এটি ১০১ মিটার চওড়া এবং ৭৭.৮ মিটার উঁচু। সারা বছরের চার ঋতুতেই এতে স্রোতের ধারা অব্যাহত থাকে। দেখতে তার পোষাক ও চেহারা পরিবর্তনের মাধ্যমে সবাইকে তার ভিন্ন দৃশ্য ও আকর্ষণশক্তিকে ফুটিয়ে তুলছে।

হুয়াং কুও শু দর্শনীয় স্থানে সারি সারি নীল পাহাড় ও বিষ্ময়কর সব পাথর দাঁড়িয়ে রয়েছে। নদীর স্বচ্ছ পানি মাঝেমাঝে পাহাড়গুলো দিয়ে বয়ে যায়। মাঝেমাঝে ভূমির নিচের প্রান্ত ছুঁয়ে যায়। ফলে এক একটি ভূগর্ভস্থ নদীর সৃষ্টি হয়েছে। সবুজ পানি ও নীল আকাশে বেড়াতে যাওয়া, সবুজ গাছ ও পাহাড়গুলোর মধ্য দিয়ে চলা এবং 'প্রাকৃতিক অক্সিজেন বার'-এর নির্মল আবহাওয়া শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া মানুষেরা অনেক আরাম বোধ করে। স্থানীয় পথপ্রদর্শক বলেন,

জলপ্রপাতের কাছে যাওয়ার সময় জলপ্রপাতের উদ্ভিদ ঋনাত্মক অক্সিজেন আয়নসের পরিমাণ খুবই বেশি। প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে ২৮ হাজারেরও বেশি। এটা হচ্ছে 'ফূসফূস ধোয়া'র শ্রেষ্ঠ জায়গা। সবাই এখানে এসে গভীরভাবে শ্বাস-নিশ্বাস নিতে পারেন এবং ফূসফূস ধোয়ার অনুভূতি অনুভব করতে পারেন।

হুয়াং কুও শু অঞ্চলে মিয়াও জাতি ও বু ই জাতিসহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি রয়েছে। যখন আপনি সবুজ পাহাড় ও নদীর পারে হেঁটে বেড়াতে যান, তখন আপনার কানে মিয়াও জাতির মেয়েদের সুরেলা ও হৃদয়গ্রাহী গানের শব্দ ভেসে আসবে। কলনাদিনী পানি এবং পাহাড়ি পাখির গানের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির সিম্ফোনিও যেন মিশে গেছে। জলপ্রপাতের কাছে গেলে, দেখতে পাবেন সাদা পানির পরদা উল্টোদিকে পাহাড়ে ঝুলে রয়েছে। পানির গুরুগম্ভীর আওয়াজ উদ্দাম বাহিনীর মতো।

২০০৫ সালে হুয়াং কুও শু দর্শনীয় স্থান 'চীনের জাতীয় ভূগোল' ম্যাগাজিনের 'চীনের শ্রেষ্ঠ জায়গা'র তালিকায়, পিপলস ডেইলি পত্রিকার 'চীনের দর্শনীয় স্থানের পর্যটকদের ১০টি পছন্দের' তালিকায় এবং 'ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য চীনের ১০টি সবচেয়ে ভালো লাগা দৃশ্যাবলী'র তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরো হুয়াং কুও শু দর্শনীয় স্থানকে চীনের প্রথম দফা শীর্ষ পর্যায়ের দর্শনীয় পর্যটন স্থান নির্বাচন করেছে। বর্তমানে হুয়াং কুও শু দর্শনীয় স্থান তার বৈশিষ্ট্যময় সুন্দর দৃশ্যের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার পর্যটককে আকর্ষণ করছে।

তাইওয়ানের ৬১ বছর বয়সী চাং জলপ্রপাতের প্রশংসায় পঞ্চ মুখ। তিনি বলেন,

আমি প্রথমবারের মত হুয়াং কুও শু জলপ্রপাত দেখতে এসেছি। শুধু একটি কথাঃ খুবই সুন্দর।

শান সি প্রদেশের পর্যটক কুও হুয়াং কুও শু'ও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রশংসায় পঞ্চ মুখ। তিনি বলেন,

এখানকার পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ খুবই ভালো। দৃশ্যও সুন্দর, তরতাজা বাতাস এবং মানুষেরাও খুব ভালো।

হুয়াং কুও শু দর্শনীয় স্থান কুই চৌ প্রদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন ব্র্যান্ড হিসেবে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ক্ষেত্রের সাফল্য সারা প্রদেশের প্রকৃতি সংরক্ষণের সংক্ষিপ্ত চিত্র হিসেবে ধরা হচ্ছে। কুইচৌ প্রদেশের পর্যটন ব্যুরোর মহাপরিচালক ফু ইং ছুন পর্যটনের উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন,

আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে পর্যটনের অর্থনীতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি জনসাধারণের কল্যাণ সৃষ্টি করা। পাহাড় ও পানিসহ পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা করা। এটা আমাদের প্রারম্ভ-বিন্দু ও লক্ষ্য। আমরা এখন এ দিকে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সুস্থ প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হচ্ছে দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের আকর্ষণশক্তির উত্স। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন পরিবেশ সংরক্ষণ ছাড়া চলবে না। হুয়াং কুও শু দর্শনীয় স্থানের পর্যটন উন্নয়নের অবস্থা থেকে আমরা দেখেছি, চীনের পর্যটন শিল্প ক্রমে ক্রমে আদিকালের স্হুল ব্যবস্থাপনার রূপ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করতে শুরু করার পাশাপাশি একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।

নগরের আড়ম্বরপূর্ণ ও ব্যস্ততা দূর করে হুয়াং কুও শু-এ আসা, সবুজ পাহাড় ও গাছগুলোর মধ্যে বেড়াতে যাওয়া, ঝরণা বা জলপ্রপাতের কাছে হেঁটেঁ চলা এবং প্রকৃতি ও সুস্থ মনোভাবের প্রত্যাবর্তন অনুভব করা আড়ম্বরপূর্ণ শহরে থাকা আধুনিক মানুষের জন্য কত আরামের ব্যাপার তা বলার নয়।

'দূরের বন্ধুরা পাহাড়ে আসুন, প্রতিটি পাহাড়ি ফুল আপনার জন্যই ফুটে রয়েছে। আহা, বিশিষ্ট অতিথিরা না আসলে তো, ফুল ফুটবে না।

1 2 3 4 5 6 7
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China