v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের নামকরা গীতি কবিতার অনুবাদক সুয়ে ফান
2009-09-09 21:15:37

রাশিয়ার একটি জনপ্রিয় গানের নাম ' মস্কোর উপকন্ঠের সন্ধ্যা ' । গানটি চীনের একজন তরুণ রুশ ভাষা থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন । অনুবাদের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। এ গানটি রাশিয়ার একটি জনপ্রিয় প্রেমের গান , চীনারাও এ গানটি খুব পছন্দ করেন । এখন পর্যন্ত এই গানটি চীনাদের মুখে মুখে গীত হচ্ছে। এ তরুণের নাম সুয়ে ফান । তিনি চীনের একজন নামকরা গীতি কবিতার অনুবাদক । তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় দু' হাজার গানের কথা অনুবাদ করেছেন , তার মধ্যে অর্ধেকই রাশিয়ার গান ।

১৯৩৪ সালে পূর্ব চীনের সাংহাই শহরে সুয়ে ফানের জন্ম । দু' বছর বয়সের সময় তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী হন । তখন থেকেই তাকে হাঁটার স্টিক ও হুইলচেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করতে হয় । উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি সাংহাইয়ের রাশিয়া ভাষা ইন্সটিটিউটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন । প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তিনি এ ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে পারেন নি । কিন্তু এ আঘাত রুশ ভাষার প্রতি তার ভালোবাসার পরিবর্তন করে নি। তিনি বাসায় নিজের চেষ্টায় রুশ ভাষা শিখতে শুরু করেন । তিনি বলেন ,আমি বাসায় রাশিয়ার ভাষা শিখতে শুরু করি । সেই সময় আমার দু'জন সবচেয়ে ভালো শিক্ষক ছিলেন ।

তারা হলো গ্রন্থাগার ও বেতার অনুষ্ঠান । আমি প্রতি দিন বেতারের রুশ ভাষার অনুষ্ঠান শুনতাম এবং নিয়মিত বেতারের কাছে চিঠি লিখতাম । আমি চিঠিতে অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমার প্রস্তাব ও আশা প্রকাশ করতাম এবং পড়াশুনার প্রশ্নগুলো লিখে সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করতাম । ভাষা শেখা ছাড়াও সুয়ে ফান সাহিত্য , চিত্রশিল্প , দর্শন ও ইতিহাস পছন্দ করেন । তিনি বেতার অনুষ্ঠান শোনা ও গ্রন্থাগারে বই পড়ার মাধ্যমে নানা বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন । ১৯ বছর বয়সে সুয়ে ফান প্রথম একটি বিদেশী গান অনুবাদ করেন । সেই সময় তিনি প্রায়শঃই বেতারে যেতেন। ফলে বেতারের কর্মীদের সঙ্গে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন । এ প্রসঙ্গে সুয়ে ফান বলেন , সেই সময় সাংহাইয়ের বেতার কেন্দ্র খুব ছোট ছিল । বারান্দার এ পাশে বেতারের নাটক দল নাটক অভিনয়ের রিহার্সাল করছে , ও পাশে বেতারের বাদক দল গানের চর্চা করছে । আমি বারান্দার মাঝখানে বসতে পছন্দ করতাম । সেখানে বসে আমি এক কানে নাটক আর অন্য কানে গান শোনার চেষ্টা করতাম । বেতারের সংগীত দলের নেতা ও পরিচালক আমাকে বলেন , তুমি রুশ ভাষা শিখছ , কেন রাশিয়ার কিছু গান অনুবাদের চেষ্টা কর না ? তাদের কথায় আমি বিপুলভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি ।

সুয়ে ফানের অনুবাদ করা প্রথম রুশ ভাষার গানের নাম হল ' শান্তিরক্ষী যোদ্ধার গান ' । তার অনুদিত এ গান সংগীত সাময়িকী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাংহাই বেতার কেন্দ্রের বাদক দলের শিল্পীদের গাওয়া এ গান শ্রোতাদের সমাদর পেয়েছে । তার কিছু দিন পর সুয়ে ফান আমন্ত্রণক্রমে সাংহাই বেতার কেন্দ্রের বাদক দলের জন্য রাশিয়ার সংগীতবিদ দুনায়েভস্কীর গান ' বসন্তের জয়গান ' অনুবাদ করেন । এ সময় থেকে তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের গান অনুবাদ করা সুয়ে ফানের একটি শখে পরিণত হয়ে যায় । ২১ বছর বয়সে তার অনুদিত রাশিয়ার গানের সংগ্রহ নিয়ে সুয়ে ফানের প্রথম গানের এ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

সুয়ে ফান যে সব গান অনুবাদ করেছেন ,সেগুলোর মধ্যে ' মস্কোর উপকন্ঠের সন্ধ্যা ' সবচেয়ে জনপ্রিয় । গানটির কথা খুব সংক্ষিপ্ত বলে সুয়ে ফান দু'দিন সময় নিয়ে এ গান চীনা ভাষায় অনুবাদ করেন , তবে অনুবাদটা নিয়েতিনি নিজেও সন্তুষ্ট ছিলেন না । একদিন তিনি থিয়েটারে অপেরা উপভোগের পর হুইলচেয়ারে বসে সাংহাইয়ের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান । তখন সবেমাত্র বৃষ্টি হয়েছে ,রাস্তা ভেজা , পাশের গাছের পাতায় পানির বিন্দু দুলছে ,মৃদুবাতাসে গাছের পাতাগুলোর শাঁ শাঁ শব্দ শ্রুতিমধুর । সেই নিস্তব্ধ সুন্দর সন্ধ্যায় তিনি হঠাত্ পিয়ানোর সুর শুনতে পান ।

সুয়ে ফান গাড়ি থামিয়ে অনেকক্ষণ শুনেছিলেন সেই সুর। রাত একটার দিকে তিনি বাসায় ফিরে এক ঘন্টা সময় নিয়ে ' মস্কোর উপন্ঠের সন্ধ্যা ' গানটি আবার অনুবাদ করেন । গানে বলা হয়েছে , গভীর রাতের বাগান , চার দিক নিস্তব্ধ , গাছের পাতা আর শাঁ শাঁ করছে না , রাতের দৃশ্য কত সুন্দর । এই মনোহর রাত্রে আমার মন দূরে উড়ে যায়। 

এ গান চীনের সব সংগীত সাময়িকীতে প্রকাশিত হওয়ার পর সমগ্র চীনের সংগীত অনুরাগীরা এ গান গাইতে শুরু করেন । এ গানের জন্য সুয়ে ফানের সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে । এ গান রাশিয়ার একটি জনপ্রিয় গান , তবে চীনে যারা চীনা ভাষায় এ গান করেন ,তার সংখ্যা রাশিয়ায় এ গান গাওয়া মানুষের চেয়ে অনেক বেশি । পেইচিংয়ের একজন টি ভি উপস্থাপক বলেছেন , ' মস্কোর উপকন্ঠের সন্ধ্যা ' গানটিতে আমাদের জীবনের অনুভূতি ও মমতা মেশানো রয়েছে , এ অর্থে এ গান একটি চীনা গানে পরিণত হয়েছে ।

সুয়ে ফানের বয়স এ বছর ৭৫ বছর হলো। তিনি গান অনুবাদ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সংগীতানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচীতেও অংশ নেন । অনুষ্ঠানে তার অনুরাগীরা তাকে জিজ্ঞেস করেন , তার অনুদিত গানগুলোতে তার সবচেয়ে প্রিয় গান কোনটি ? উত্তরে তিনি বলেন , তার অনুবাদ করা সব গানই তিনি পছন্দ করেন , গানগুলো তার সন্তানের মত বাবা হিসেবে তিনি তার সব সন্তানকেই ভালোবাসেন । সুয়ে ফান চীন ও রাশিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বিরাট অবদান রেখেছেন । সে জন্য তিনি দু দেশের সরকারের প্রশংসা পেয়েছেন ।

১৯৯৭ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েলতসিনের চীনসফরকালে তিনি সুয়ে ফানকে রাষ্ট্রীয় মৈত্রী পদকে ভূষিত করেন । ২০০৭ সালে সুয়ে ফান আমন্ত্রিত হয়ে রাশিয়া সফর করেন । গত ৫০ বছরে সুয়ে ফান রাশিয়ার গানগুলো অনুবাদ করেছেন , তবে এটা ছিল সুয়ে ফানের প্রথম রাশিয়া সফর । এ বছর হলো চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী এবং চীনের রুশ ভাষা বর্ষ। এ উপলক্ষে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের উদ্যোগে চীনাদের কন্ঠে রাশিয়ার গান নামক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে । সুয়ে ফান এ প্রতিযোগিতার জন্য এক শ'টি রাশিয়ার গান সুপারিশ করেছেন । তিনি মনে করেন এ ধরনের কর্মসূচী দু'দেশের জনগনের বন্ধুত্ব বাড়াতে সহায়ক হবে । তিনি বলেন , চীনে রাশিয়া বর্ষ ও রাশিয়ায় চীনা বর্ষ এবং রুশ ভাষা বর্ষ কর্মসূচী আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য পারস্পরিক বিনিময় ও যোগাযোগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থা গড়ে তোলা । আমি মনে করি আস্থা বাড়ানো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সাংস্কৃতিক বিনিময় উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থা বাড়াতে পারে ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China