v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ক্যালিফোর্নিয়ার তরুণ ছেলে মিচেল রিয়ান এখন পেইচিংয়ে
2009-09-08 21:11:08
প্রতি দিন সকালে চীনা মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে দেখা যায় যে,একজন সোনালী রংয়ের চুলের মার্কিন তরুণ উচ্চস্বরে চীনা ভাষায় আবৃত্তি করেছেন । যদি তাকে জিজ্ঞাস না করেন তাহলে আপনি ভাবতে পারবেন না যে,তিনি মাত্র চীনে দু বছর আছেন । আরও আশ্চর্য যে , ভাল করে ইংরেজী,জার্মান এবং স্পেনীস ভাষা জানা ছাড়াও তিনি একজন ভাল গায়কও ।

গত ২৪ মে বিকেলে "২০০৯ সাল পেইচিং বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের হান ভাষার তারকা " শিরোনামে চীনা ভাষা প্রতিযোগিতার ফাইনাল পেইচিংয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়েছে । পেইচিংয়ের ১৩টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৬জন বিদেশী ছাত্র এতে অংশ নিয়েছেন । এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার তরুণ ছেলে মিচেল রিয়ান সবার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় । তিনি "তুংফোংফো","বেন ছাও কাংমু"ও " লা মেইচি"সহ তিনটি চীনা গান গেয়ে উপস্থিত সকল দর্শকের মন জয় করে দশজন হান ভাষা তারকার মধ্যে "সেরা যোগ্যতার পুরস্কার"পান ।

মিচেল রিয়ান এখন চীনা মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতিমূলক কোর্সে লেখাপড়া করছেন । এক সাক্ষাত্কারে তিনি আমাদের সংবাদদাতার সঙ্গে চীনা ভাষায় কথাবার্তা বললেন । নিজের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে তিনি বলেন, আমি একটি বহুজাতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করি । আমার বাবা মার্কিনী আর মা মেক্সিকোর লোক । ছোট বেলা থেকেই আমি ইংরেজী ও স্পেনীস ভাষা বলতাম । ক্যালিফোর্নিয়ায় বহু চীনা মানুষ আছেন ।মাধ্যমিক স্কুলে আমি চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শিখেছি । তখন থেকে আমি রহস্যময় চীনা অক্ষর এবং হান ভাষা শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠি । কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি যে, যদি যুক্তরাষ্ট্রে শিখি তাহলে বেশি সময় লাগবে এবং তেমন ভাল করে শিখা যাবে না । ভাগ্য ভাল যে ,মাধ্যমিক স্কুলে আমার এক চীনা বন্ধু ছিল । তার সাহায্যে আমি সি চিয়াচুয়াং শহরে এসেছি ।

চীনা ভাষা শেখার ব্যাপারে মিচেল রিয়ান পরিবারের আপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন । বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে তার নানীর বড় বোন চীন এসেছিলেন । চীন সম্পর্কে তার কিছু ভুল বুঝাবুঝি ছিল । প্রথমবার চীন সফর শেষে মিচেল রিয়ান বাড়ি ফিরে গেলে নানি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ,চীনারা ছিফাও ও থাং পোশাক পরেন ?কিন্তু চীনে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন হয়েছে কথাটা শুনে তার নানিও যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজিত চীনা অক্ষর লেখা কোর্সে অংশ নিয়েছেন ।

চীনা ভাষা শেখার জন্য মিচেল রিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা লাভের উত্তম সুযোগ এমন কি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লস অ্যাঞ্জেলস শাখায় ভর্তির যোগ্যতা ছেড়ে দিয়েছেন । তিনি মনে করেন,পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া শেষ করার সুযোগ পাবেন । কিন্তু যখন বয়স বেড়ে যায় তখন বর্তমান বয়সের মতো সহজে একটি বিদেশী ভাষা আয়ত্ত করা যাবে না । অবশেষে তিনি চীনে এসে চীনা ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নেন । এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ায় তার কখনো অনুতাপ হয়নি । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ঝুঁকি নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি । কারণ আমি জানি না , বর্তমান চীনের পরিবেশ কী রকম। এ পরিবেশের সঙ্গে আমার খাপ খাবে কি না ? সৌভাগ্যযে , বর্তমান চীনের পরিবেশে আমি খুব সন্তুষ্ট । নিজের এই সিদ্ধান্তে আমি অনুতপ্তহই নি ।

চীন আসার প্রথম দিকে এখানকার রীতিনীতি ও খাওয়াদাওয়াসহ কোনো ক্ষেত্রেইমিচেল রিয়ানের অভ্যাস ছিল না । তাকে সব ক্ষেত্রকেইগ্রহণ করতে ও শিখতে হবে । তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ছেলেমেয়েরা শুধু গরুর মাংস ও মুর্গির মাংস খায় । এখানে আসার পর তিনি সামুদ্রিক খাবারসহ নানা ধরণের খাবার খেতে শুরু করেন । তিনি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন যে,বিদেশী বন্ধুদের , বিশেষ করে নতুন আসা বিদেশী বন্ধুদের প্রতি চীনাদের যথেষ্ট ধৈর্যরয়েছে । এতে মিচেল রিয়ান পরিবারের উষ্ণতা অনুভব করেন । মিচেল রিয়ান যেমন বলেছিলেন, মা'র কাছে মেক্সিকোয় ফিরে যে আন্তরিকতা অনুভব করেছি এখানে আমি তা অনুভব করেছি । মেক্সিকোয় সবাই একই টেবিলে বসে খেতে এবং গল্প করতে ভালবাসে । চীনদেশেও আমি এ ধরণের পারিবারিক উষ্ণতা অনুভব করেছি । এ ধরণের অনুভব খুবই চমত্কার ।

চীন আসার এক বছর পর মিচেল রিয়ান চীনা মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতিমূলক কোর্সে ভর্তি হন । পরীক্ষা পাশ করে তিনি উপস্থাপক ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করবেন । চীনা মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয় চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় । গত ৫০ বছরেরও বেশি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি বেতার ও টিভি সম্প্রচারের জন্য বিপুল পরিমান দক্ষ মানুষ তৈরী এবং চীনের বেতার ও টিভি সম্প্রচারসহআর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । বিশ্ববিদ্যালয়টি " চীনের বেতার ও টিভি সম্প্রচারের দক্ষ মানুষের দোলনা" এবং " তথ্য প্রচার ক্ষেত্রের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়" নামে দেশবিদেশে পরিচিত । তাই এখানে প্রতি দিন মিচেল রিয়ান ধারাবাহিকভাবে চীনা ভাষায় পড়া, রচনা ও কথা বলা শিখে থাকেন । মিচেল রিয়ান জার্মানীতে সাত বছর ধরে জার্মান ভাষা শিখেছেন । তিনি চীনা ভাষার সঙ্গে জার্মান ভাষার তুলনা করে বলেন, দুটো একেবারেই ভিন্ন ভাষা । জার্মান ভাষার শব্দ ও উচ্চারণ সহজ কিন্তু তার ব্যাকরণ জটিল । পক্ষান্তরে চীনা ভাষা লেখা কঠিন । এক শব্দের একাধিক উচ্চারণ । কিন্তু তার ব্যাকরণ অনেক সহজ ।

চীনে লেখাপড়ারত বিদেশী ছাত্র হিসেবে মিচেল রিয়ান শুধু চীনা ভাষা পড়ায় সন্তুষ্ট নন । তিনি বলেন, এখনো বহু মার্কিনী জানেন না যে , চীনদেশে পপ গানও প্রচলিত । আমি বিশেষভাবে লস অ্যাঞ্জেলসের চায়না টাউনের একটি সঙ্গিত দোকানের মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলাম । তিনি আমাকে চৌ চিয়েলুনের গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন । এর পর আমি চীনের পপ গান পছন্দকরতে শুরু করেছি ।

চীন আসার পর মিচেল রিয়ান সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়ে নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । তিনি মনে করেন,ভাষা শেখা সহজভাবে শোনা,বলা,পড়া ও লেখা নয় ।সক্রিয়ভাবে এ দেশের সংস্কৃতি ও জীবনযাপনে মিশে যাওয়ারও দরকার রয়েছে । মিচেল রিয়ানের পক্ষে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া চীনকে জানার একটি ভাল উপায় ।

নিজের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে মিচেল রিয়ান জানান, তিনি চীনে টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বা গায়ক হতে চান ।তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এবং তিনি আরও বেশি মার্কিনীর কাছে চীনের সংস্কৃতি প্রচার করবেন বলে আমরা আশা করি ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China