v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনে লেখাপড়ার কারণ চীনের সংস্কৃতি ছাড়া, অন্য কারণ রয়েছে
2009-09-07 21:10:23
    চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালে চীনে অধ্যায়নের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দু'লাখেরও বেশি। এ সংখ্যা ২০০৭ সালের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। গত ৩০ বছরে চীনে অধ্যায়নের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৮০ গুণ বেড়েছে। কেন এতো বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনে অধ্যায়নের বাছাই করেছে? তারা চীনে কী কী শিখতে পারে? আজকের অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।

    বেলজিয়ামের মেয়ে সোপিয়ে মাট্টহি "চীনা ভাষা সেতু" নামে বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী চীনা ভাষা সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে তার অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করেছেন। সোপিয়ের এক চীনা নাম রয়েছে।তার চীনা নাম হল হাও ফেই।সে বেলজিয়ামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের একজন ছাত্রী। চীনা ভাষা সেতু নামে এ প্রতিযোগিতায় সে চ্যাম্পিয়ন হন। আমাগী বছর সে চীনে এসে চীনা ভাষা বিভাগের স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর কোর্স গ্রহণ করবে। এরপর সে চীন সম্পর্কিত চাকরি পাওয়া চায়। চীনা ভাষা শেখার কারণ তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে, ছোট বেলায় আমি চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী। ছয় বছর বয়সী আমি একজন চীনা মেয়ের সঙ্গে বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলাম। ১৬ বছর বয়সী প্রতি সপ্তাহে আমি বাইরে কাজ করে টাকা লাভ করেছিলাম। ১৮ বয়সে আমি পর্যটনের দলে যোগ দিতে গিয়ে চীনের বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেছিলাম। ১৯ বছর বয়সী আমি বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগে একজন চীনা বন্ধুতে পরিণত হয়েছি। তিনি বেলজিয়ামে লেখাপড়া করতেন। তিনি স্বদেশে ফিরে আসার সময় আমি তার সঙ্গে চীনে আবার গিয়েছি। এর পাশাপাশি আমি তার বাড়িঘরে থাকতাম। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমি শান তোং প্রদেশের চিনান শহরে অবস্থিত শান তোং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছিলাম। আমি চীনের চীনা ভাষা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় নেতৃতাধীন দলের স্কলারশীপ পেয়েছিলাম।

    হাও ফেই'র অভিজ্ঞতা শুধু চীনের সংস্কৃতি পছন্দ করার কারণে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনে লেখাপড়ার একটি দৃষ্টান্ত। তারা ছোট বেলা থেকে চীনের সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। এসব তাদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে।

    তবে এক দেশ শুধু তার সংস্কৃতি বিদেশীর দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ রওয়া যথেষ্ট নয়। ১৯৫০ সালে পূর্ব ইউরোপের ৩৩জন ছাত্র-ছাত্রী চীনের পেইচিংয়ে লেখাপড়া করেছিলেন। তারা হচ্ছে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ভর্তির প্রথম দফার বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ২৯ বছর ধরে চীন ১২ হাজারেরও বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ চীন সরকারী স্কলারশীপ পেয়েছেন। ২০০৮ সাল শুধু এক বছরে চীন ১৮৯টি দেশের ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণ করেছে। এ সংখ্যা ১৯৭৮ সালের তুলনায় ১৮০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মধ্যে নিজের ফি ও বেতন দেয়ার ছাত্র-ছাত্রীর হার ৯০ শতাংশ বেশি।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে লেখাপড়ার বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গবেষণাগার উপগবেষক ওয়াং ইউ চু মনে করেন

    প্রথমতঃ বিশ্বের বেশি দেশ চীনের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। তাছাড়া, চীন আন্তর্জাতিক বাজারে পর্যায় ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দ্বিতীয়তঃ চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মান বেশি উন্নতি লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণার বেশি ক্ষেত্রে চীনের সংশ্লিষ্ট মান বিশ্বের শীর্ষ স্থানে হয়েছে। বেশি বিদেশী চীনে শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি শিখতে চায়। তৃতীয়তঃ আরো বেশি দেশ চীনের ব্যবস্থা , সংস্কৃতি ও সভ্যতা স্বীকৃতি দেয়ার পটভূমিতে তারা চীনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

    বর্তমানে চীনের প্রায় ছ'শ বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণের যোগ্যতা রয়েছে। আগে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনে লেখাপড়ার বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে যে, চীনা ভাষা ও চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা ও ভেষজ। বর্তমানে চীনা ভাষা, অর্থনীতি, চিকিত্সা, আইন ও পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র উন্নত হচ্ছে।

    ফিজি থেকে আসার এতা হচ্ছেন ফিজি সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মী। তার বিভাগ বেতার ও টেলিভিশনের তথ্য সংক্রান্ত কাজ দায়িত্ব পালন করেছে।তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ করার সামর্থ্য উন্নত করার জন্য এতা চীনে পাঠানো হয়েছেন। তিনি মধ্য চীনের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতার ও টেলিভিশন ক্ষেত্রের জ্ঞান শিখছেন।তিনি বলেছেন,

    আমাদের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি জরীপ অনুযায়ী, আমাদের কর্মী বেতার ও টেলিভিশন খাতের হাটে ক্রয় বিক্রয়ের সামর্থ্য উন্নত করা দরকার। আমাদের বিভাগ বড় নয়। আগে আমার সাংবাদিকতা ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুতরাং আমার নেতা আমাকে চীনে লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

    বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ার ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ২০০৮ সালে চীন সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় চীনে লেখাপড়ার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দেয়ার স্কলারশীপ বাড়ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান ও বসবাসের মানও ইতিবাচকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ইংরেজী ও অন্যান্য বিদেশী ভাষা শিক্ষাদানের কোর্স চালু এবং বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি পরিচালনার ক্যাডার ও শিক্ষাদানের শিক্ষককে প্রশিক্ষণের কাজ জোরদার করছে। গত বছরের মার্চ মাস থেকে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নিটোল ড্যাটাবেস গড়ে তুলেছে। যাতে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা ক্ষেত্রের পরিচালনা আরো মানসম্পন্ন করা যায়।

    চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গবেষণাগার উপগবেষক ওয়াং ইউ চু বলেছেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তরণের নীতিতে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শ্রেষ্ঠ জ্ঞান দিতে পারে। তিনি বলেছেন,

    প্রথমতঃ সমাজের সভ্যতা উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতিতে চীন বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সারিতে অবস্থিত। দ্বিতীয়তঃ চীন দ্রুত উন্নয়নের কারণে বিশ্বের বহু দেশ চীনকে গুরুত্ব দেয়। তারা চীনের রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ এমনকি দাম্পত্য সম্পর্ক গবেষণা করতে চায়।

    আমরা দেখতে পারি যে, চীনের সংস্কৃতি চীনে লেখাপড়ার বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের একক কারণ নয়। তারা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্জনের ব্যাপক সাফল্য থেকে জানতে পারে যে, তারা চীনে বেশি উন্নয়নের সুযোগ পেতে পারে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China