v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
গীতিকার নিয়েএর ও তাঁর সংগীত কর্ম
2009-09-02 17:57:26

জাতীয় সংগীত হচ্ছে একটি দেশের জাতিগত মর্মের প্রতিনিধিত্বকারী গান। এর ওপর রয়েছে সে দেশের ইতিহাস, সংগ্রাম ও বিশ্বাস। তা দিয়ে সারা দেশের জনগণকে উত্সাহ দেয়া হয়। আসন্ন ১ অক্টোবর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তি হবে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে চীনের জাতীয় সংগীতের সুরকার নিয়েএর ও তাঁর সংগীত কর্মের পরিচয় করিয়ে দেবো।

চীন গণ প্রজাতন্ত্রের 'জাতীয় সংগীতের' আসল নাম ছিল 'স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অভিযাত্রা'। এর কথা লিখেছেন প্রয়াত নাট্যকার থিয়েন হান। সুরকার হচ্ছেন প্রয়াত গণ গীতিকার নিয়েএর। 'জাতীয় সংগীতের' কথা এমন, 'দাঁড়াও। দাঁড়াও। যারা দাস হতে চাও না। আমাদের রক্ত ও মাংস দিয়ে এক নতুন প্রাচীর নির্মাণ করি। চীনা জাতি সবচেয়ে বিপদজনক সময়ের মধ্যে রয়েছে। প্রতিটি মানুষ বাধ্য হয়ে সর্বশেষ গর্জন করি। দাঁড়াও। দাঁড়াও। আমরা সবাই একই মন নিয়ে শত্রুর গুলির সামনে এগিয়ে যাই। এগিয়ে যাই।'

নিয়েএর ১৯১২ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের খুনমিং শহরে একটি চীনা চিকিত্সকের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক স্কুল থেকেই তাঁর সংগীতের ওপর বিশেষ কৌতুহল ও প্রতিভা প্রকাশিত হয়। তিনি বাঁশি ও এরহুসহ চীনের নানা ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেছেন। পরে তিনি শাংহাই গিয়ে মিংইউয়ে নৃত্য গীতি দলে চাকরি গ্রহণ করেন। তিনি জনসাধারণের জন্য সংগীত রচনা করার লক্ষ্যে নিজে সুর বানানোর তত্ত্বও শিখেছেন।

বন্ধুরা, আপনারা নিয়েএর চলচ্চিত্র 'সড়ক' এর জন্য লেখা 'সড়কের গান' শুনছেন। এ গানটি রাস্তা নির্মাণ শ্রমিকের জীবন বর্ণনা করা হয়েছে। গানের কথা এমন, 'রাস্তার ওপর অসমতলকে সমতল করি। সামনের সকল জটিলতাকে দূর করি। আমরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাওয়ার মতো পথ ছেড়ে দিতে পারি না। সবাই একসাথে চেষ্টা করি, একসাথে যুদ্ধ করি। ভারী বোঝা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। স্বাধীন সড়ক তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হবে।'

১৯৩৩ সালে নিয়েএর সংবাদপত্র বিক্রয়ের এক ছোট মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি এ মেয়েকে আদর্শ করে 'সংবাদপত্র বিক্রয়' নামে একটি গান লিখেছেন। তিনি এ গানটি গীতিনাট্য 'ইয়াংজি নদীর ঝড়বৃষ্টি'তে দিয়েছেন এবং সে সংবাদপত্র বিক্রয়ের মেয়েকে তার ভূমিকায় অভিনয় করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তখন থেকে এ শিশুর গানটি জনপ্রিয় হয়ে আজ পর্যন্ত প্রচলিত আছে এবং বিংশ শতাব্দীতে চীনের শ্রেষ্ঠ শিশু সংগীতের অন্যতম সংগীতে পরিণত হয়েছে। এখন শুনুন 'সংবাদপত্র বিক্রয়' নামে গানটি।

শ্রোতাবন্ধুরা, এবার আপনারা 'স্নাতক' গানটি শুনুন। নিয়েআর চলচ্চিত্র 'থাওলিচিয়ে' এর জন্য এ গানটি লিখেছেন। চলচ্চিত্র দেখার পর এ গানটি দ্রুত সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক যুব ছাত্রছাত্রী এ গান শুনে শুনে বিপ্লবী পথে চলেছে।

১৯৩৪ সালে নিয়েআর শাংহাই পাইদাই ডিস্ক কোম্পানিতে যোগ দেন এবং 'সোনালী সাপের নৃত্য', 'ছুই হ্রদের বসন্ত'সহ চীনের অনেক ঐতিহ্যিক জাতিগত বাদ্যযন্ত্রের বাজানো সংগীত রেকর্ড করেন। তিনি চীনের জাতীয় সংগীত উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ সংগীতগুলোর মধ্যে 'সোনালী সাপের নৃত্য' সবচেয়ে জনপ্রিয়। এখানে 'সোনালী সাপের' অর্থ হচ্ছে ড্রাগন। এ সংগীতটি চীনা জনগণের উত্সবের দিনে ড্রাগন নৃত্য করার আনন্দময় দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।

শ্রোতাবন্ধুরা, এবার শুনুন নিয়েআর এর আরেকটি লোকসংগীত 'ছুই হ্রদের বসন্ত'। ছুই হ্রদ হচ্ছে ইউন্নান প্রদেশের রাজধানী খুনমিং শহরের একটি দর্শনীয় স্থান। নিয়েআর সেখানে থাকাকালে প্রায়শই ছুই হ্রদে হাঁটতেন। শাংহাইয়ে থাকাকালে তিনি আত্মীয়স্বজনের কথা স্মরণ করে এ সংগীতটি লিখেছেন।

১৯৩৫ সালে নিয়েআর চলচ্চিত্র 'চীনা ছেলেমেয়েদের' জন্য 'লৌহ গোড়ালির নিচে গায়িকা' নামে গানটি লিখেছেন। গানের কথা সহজ। গানটি দুর্বল মেয়ের চিত্কার ও আহত মনের ভিতরে তত্পর দেশপ্রেমের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। শুনুন তাহলে।

'স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অভিযাত্রা' গান হচ্ছে চলচ্চিত্র 'চীনা ছেলেমেয়েদের' প্রধান গান এবং নিয়েআর এর সর্বশেষ সংগীত কর্ম ও শ্রেষ্ঠ কর্ম। নাট্যকার থিয়ে হান প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের জেলখানায় সিগারেটের বাক্সের কাগজে এ গানের কথা লিখেছেন। নিয়েআর দু'মাসেরও বেশি সময় চিন্তাভাবনার পর এ শ্রেষ্ঠ গানের সুর দিয়েছেন। গানটি ঝড়-বৃষ্টি রাতের বিদ্যুত ও বজ্রের মতো তুমুল দেশপ্রেমিক আবেগ দিয়ে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনসাধারণকে বিস্মিত করে এবং জনগণকে জাতির বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার আহ্বান জানায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, 'স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অভিযাত্রা' নামের গান সম্পন্ন হওয়ার কিছু দিন পর নিয়েআর জাপান হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে জাপানের সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় দুর্ভাগ্যক্রমে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৪ বছর।

নিয়েআর এর স্বল্প সময়ের সংগীত রচয়িতার জীবন কেবলমাত্র দু'বছরের মতো। কিন্তু তিনি চল্লিশটিরও বেশি সংগীত রচনা করেছেন। তিনি চীনের লোকসংগীত থেকে সংগীত লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তাঁর কর্মের মধ্যে প্রাচুর্য যুগের মর্ম প্রতিফলিত হয়। তিনি চীনের গান লেখার নতুন প্রথা শুরু করেন। বিশেষ করে তাঁর 'স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অভিযাত্রা' গানটি চীনা জনগণ শত্রুকে পরাজিত করে নয়া চীন প্রতিষ্ঠায় উত্সাহ দিয়েছে। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। 'স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অভিযান' অস্থায়ী জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্ধারিত হয়। ১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। আজ পর্যন্ত এ গানটি চীনা জনগণ দেশকে আরো সমৃদ্ধির জন্য অব্যাহত সংগ্রামের উত্সাহ দিচ্ছে।(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China