v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
জাতিসংঘের যুব সম্মেলনে চীনা মেয়ে
2009-09-01 17:02:09
প্রতি বছরের আগষ্ট মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুব-সম্প্রদায়ের একটি বিরাট সম্মিলনী—জাতিসংঘ যুব-সম্প্রদায়ের বন্ধুপ্রতীম বিনিময় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । পেইচিংয়ের মেয়ে তুয়াং ইংচি আস্থাবান , অকৃত্রিম এবং সমাজের প্রতি মনোযোগ দেয়া ও রাজনীতি পছন্দ করা একটি মেয়ে । চীনের যুব সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে তিনি জাতিসংঘের এবছরের সম্মিলনীতে অংশ নেবেন ।

সম্মিলনীটি জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ইউনেস্কো,জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ,জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের মৈত্রী পরিষদসহ কয়েকটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং জাতিসংঘের অধীনস্থ বেসরাকারী সংস্থা"বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রদূত তহবিল"-এর উদ্যোগে আয়োজিত একটি সম্মেলন । এ পর্যন্ত একটানা পাঁচবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে । প্রতিটি সম্মেলন সারা বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি যুবকযুবতিকে আকর্ষণ করেছে বলে এটাকে সারা বিশ্বের যুবসম্প্রদায়ের একটি কুটনৈতিক সম্মিলনীও বলা হয়ে থাকে ।

সম্মিলনীতে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ১৬-২৫ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ । ১৭ বছর বয়সী তুয়ান ইংচি পেইচিংয়ের ছাওইয়াং বিভাগে একটি বিদেশী ভাষা স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর একজন ছাত্রী । তিনি কীভাবে সাংগঠনিক সংস্থাকে মুগ্ধ করে সম্মিলনীতে অংশ গ্রহণের দূর্লভ যোগ্যতা লাভ করেছেন ?সম্মিলনীর কাছে পাঠানো ইংরেজী ভাষায় লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেন, আমি হাসিখুশি এবং অকৃত্রিম একজন মেয়ে । সহপাঠীর সঙ্গে আমি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে মেলামেশা করি । আমার বন্ধুরা কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হলে তারা সবার আগে আমাকে জানায় বলে আমি মনে করি । তাছাড়া আমি খুব প্রবলভাবে উপলব্ধি করেছি যে সকলের কল্যাণের ওপর গুরুত্ব দেয়া আমার দায়িত্ব । তাই আমাকে নিজের দর্শনের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে এবং বিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি জানতে হবে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল অভিজ্ঞতা লাভ করা । আমি জাতিসংঘ যুব সম্মেলন থেকে এটা অবশ্যই পাব । সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও শ্রেষ্ঠ যুবকযুবতীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করা আমাকে আকষর্ণের অন্যতম কারণ । এটা তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের একটি সুবর্ণ সুযোগ ।

গণ কল্যাণ ও রাজনীতি করা তুয়ান ইংচির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য । তিনি বলেছেন, তিনি প্রাচীন চীনের জ্ঞানী ব্যক্তিদের খুব শ্রদ্ধা করেন ।তিনি মনে বরেন , চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিতে রয়েছে বিরাট বুদ্ধিদীপ্ত সম্পদ । তিনি বলেন, ছোট বেলায় বাবা আমাকে প্রাচীনকালের কিছু সাহিত্যের বই কিনে দেন। বইতে মানুষ, যুদ্ধ ও সাহিত্য সম্পর্কিত কাহিনীগুলোর মধ্যে প্রাচীন চীনের বসন্ত, শরত্ এবং যুদ্ধ রাজ্য কালের কাহিনী আমি বিশেষভাবে পড়তে পছন্দ করতাম। যদিও সেসময় আমি অত বেশি শব্দ চিনি না তবুও আমি পড়তে পছন্দ করতাম ।আমার মতে গল্পগুলো খুব মজা । নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে আমার ইতিহাস শিখতে শুরু হয় । ইতিহাস শিখার প্রতি আমার আগ্রহ বেশি । অবসর সময় আমি অনেক বই পড়েছি । উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাসে আমি একেরারে সাহিত্যে নিমজ্জিত হই ।

তুয়ান ইংচি বলেন,আগামী বছর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছেন । তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগে ভর্তি হতে চান । তিনি ভবিষ্যতে চীনা সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখতে চান ।কিছু দিন আগে তার সংগঠনে সারা ক্লাসের সহপাঠীরা পশ্চিমাঞ্চলের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের জন্য কলম,রাবার ও কলমদানীসহ লিখবার সামগ্রী সংগ্রহ করার একটি পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছেন । তুয়ান ইংচি বলেছেন, পরিকল্পনাটির প্রণয়ন থেকে প্রস্তুতি নেয়া এবং প্রচার তথ্য তৈরী থেকে বক্তৃতা দেয়া পর্যন্ত সব অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে তারা অনেক উপকৃত হয়েছেন । তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে অন্য শ্রেণীর ক্লাসে গিয়ে অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ পরিকল্পনা প্রচার করি । অন্যান্যদের মধ্যে প্রচার এবং অবশেষে কলমসহ লেখার সামগ্রী দরিদ্র ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিলি করার প্রক্রিয়ায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট।

সহপাঠীদের প্রতি তাদের কলম দান করার আহবান করা হোক বা স্কুলের পত্রিকার মাধ্যমে সহপাঠীদের মধ্যে দেশবিদেশের মহা ঘটনা জানানো হোক অথবা সক্রিয়ভাবে ভূমিকম্পকবলিত এলাকার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা হোক বা কমিউনিটির নির্বাচনেসাহায্য করা হোক তুয়ান ইংচি সবসময় এ সব সামাজিক কাজে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন । তিনি চান যাতে নিজের সাহায্যে চারপাশের পরিবেশের কিছু উন্নতি করা যায় । এ সম্পর্কে তুয়ান ইংচির শিক্ষক হান ফাং বলেন, তুয়ান ইংচি আমার মনে যে রেখাপাত করেছে তা তার চমত্কার লেখাপড়া নয় এবং ক্লাসের জন্য তার বিনা পারিশ্রমিক কাজ নয় বরং আধৃনিক যুগের মাধ্যমিক স্কুলের একজন ছাত্রী হিসেবে তার দেশপ্রেমের প্রতি আন্তরিকতা আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে । অন্য লোকের সঙ্গে তার বিনিময় ও যোগাযোগের সময় ভাষার সামর্থ্য আমার মনে সবচেয়ে গভীর দাগ কেটেছে ।

এ বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় তুয়ান ইংচি আরও বিরাট মঞ্চ---জাতিসংঘ যুব সম্মিলনীতে আরোহন করবেন । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুবকযুবতীরা জাতিসংঘ সদরদপ্তর পরিদর্শন,স্বেচ্ছাসেবী কাজ এবং জাতিসংঘ সম্মেলনসহ ধারাবাহিক অনুকরণ কার্যক্রমে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নিজের বিশ্ব গণবোধ গড়ে তুলে সক্রিয়ভাবে গণকল্যাণে অংশ নেবেন এবং যার যার দেশে দাঁড়িয়ে বিশ্বের প্রতি মনোযোগ দেয়ার আন্তর্জাতিক ধারণা তৈরী করবেন । সম্মেলনে সারা বিশ্বের যুবসম্প্রদায়ের নেতা নির্বাচনকরা হবে এবং মানবজাতির অস্তিত্ব ও বিশ্ব উন্নয়নে লক্ষ্যণীয় অবদান রাখা শ্রেষ্ঠ যুব সংস্থা ও ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হবে ।যুব সম্মেলনে কিছু অবদান রাখতে পারবেন বলে তুয়ান ইংচি আশা প্রকাশ করেছেন ।

সহপাঠী ছেন ইয়ুফি ইংচির শুভকামনা করে বলেন, ইংচি তার নিজের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে যেখানেই যাবেন সেখানেই নিজের অবদান রাখতে পারবেন । এবারের যুব সম্মেলনে ইংচি চমত্কার এবং সম্পূর্ণভাবে নিজের দক্ষতা দেখাবেন ।যাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুবকযুবতীরা তার জন্য গর্বিত হবেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China