v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীন ---স্বপ্ন বাস্তবায়নের দেশ
2009-08-31 20:30:49
১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চীনে এসে অধ্যায়ন করা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৮০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন যে কেবল বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চিত্তাকর্ষক সংস্কৃতি, সহজ ও সুবিধাজনক জীবন এনে দিয়েছে তাই নয়, বরং তাদের এখানে চাকরি পাওয়ার আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে কর্মসংস্থানের গল্প আপনাদের শুনাবো।

জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আফ্রিকার ৫০টি দেশের ২১ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে চীনে অধ্যায়নের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। চীন এশিয়ায় আফ্রিকার ছাত্র-ছাত্রী গ্রহণের সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দেশে পরিণত হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চীন-আফ্রিকা আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্রুত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ নয় গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে দু'পক্ষের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যিক উন্নয়নের পাশাপাশি আফ্রিকার ছাত্র-ছাত্রীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেইচিং ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকারী সুদানের যুবক মুস্তফার বর্তমান চীনা ভাষার মান তেমন উন্নত নয়। তবে তিনি ভবিষ্যতে একজন অনুবাদকে পরিণত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, (১)

আমাদের দেশ ও চীনের মধ্যে বেশ কিছু বাণিজ্যিক বিনিময় রয়েছে। সুদানে অনেক চীনা বসবাস করে থাকেন। তারা আমাদের দেশে ব্যবসা করেন। তাদের অনুবাদক দরকার। আমি তাদের একজন অনুবাদকে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছি।

বর্তমানে চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে। চীন এ শ' ৩০ কোটি মানুষের দেশ হিসেবে বিদেশী ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভাষা, বিষয় বিবেচনার পদ্ধতি এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন পার্থক্যের কারণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বাণিজ্যিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরাও ক্রমশ এ বিষয় অনুভব করেছে। তারা স্বদেশ ত্যাগ করে চীনে লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে তারা আন্তঃদেশীয় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে কাজ করার প্রতীক। ক্লাসের জ্ঞান তাদের চাহিদা মেটাতে পারে না, তাই তারা তাদের বেশির ভাগ চীনা বন্ধুদের সঙ্গে সংলাপ, খেলাধুলা ও প্রকল্প সম্পন্ন করতে আগ্রহী। তারা আশা করেন, তাদের চীনকে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারার একজনে পরিণত হতে হবে।

সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র ছাজ গিলবার্ট মাদ্রিদ তাদের মধ্যে একজন। তার অধ্যায়নের বিষয় হল ব্যবসায়িক চীনা ভাষা। তার মতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক অর্থসহ বিভিন্ন পেশাগত কোর্স ইংরেজী ও চীনা এ দু'ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তার একজন আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যিক ব্যবসায়ীতে পরিণত হওয়ার জন্য খুবই কল্যাণকর হবে। তিনি বলেন, (২)

পরবর্তীতে আমি চীনে ব্যবসা করতে খুব আগ্রহী। আমি মনে করি, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসা করা খুবই বুদ্ধিসম্পন্ন কাজ। আগে আমার বাবা একটি বড় আন্তঃদেশীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন। ছোট বেলায় তিনি আমাকে সবসময় বলতেন, তিনি চীনে বহু প্রকল্পের কাজ করেছেন। আমি এতে খুব আগ্রহী। তিনি বলেছেন, চীন একটি সুপ্ত শক্তি থাকা দেশ। চীন বিশ্বের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে। আমি মনে করি, আমার বাবার কথা ঠিক। আপনি জানেন, চীন বিশ্বের একটি বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে চীনে আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বর্তমানে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে চাকরি পাওয়ার পদ্ধতি ভিন্ন। কিছু কিছু বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, কিছু কিছু চীনে দূতাবাস বা প্রতিনিধি বিভাগে কাজ করেন, কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যমে উপস্থাপক, অনুষ্ঠানের উপদেষ্টা বা স্কুলে বিদেশী ভাষার শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

চীনের সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির জনসংখ্যা এবং শ্রম ও অর্থনৈতিক গবেষণা বিভাগের গবেষক জাং ই বলেছেন, চীন বিশ্বের সঙ্গে আরো বেশি যোগাযোগের পাশাপাশি চীনে অধ্যায়নের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ এনে দিতে পারে। তিনি বলেন, (৩)

বিশ্বের বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি চীনে স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের স্টাফ পরিচালনা ও বিনিময় করা দরকার। একজন ছাত্র চীনে লেখাপড়ার পর আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংক্রান্ত কাজের মাধ্যমে অন্য দেশে চাকরি সহজভাবে পেতে পারে। এটি বিশ্বায়ন সমাজ উন্নয়নের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম।

চীনে চাকরি পেতে আগ্রহী বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের কেবল চীনের দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগের ব্যাপার রয়েছে তাই নয়, বরং চীনের প্রাচীন ইতিহাস ও রঙ্গিন সংস্কৃতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর পাশাপাশি তাদের সামর্থ্য প্রদর্শনের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে।

চীনের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক চাং ই মো জানতেন না যে, "হোং কাও লিয়াং" নামে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যে কেবল তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্র পরিচালকের জীবন শুরু হয়েছে তাই নয়, বরং দক্ষিণ আফ্রিকার বেনিনের একজন যুবক দরোথির ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়েছে। হোং কাও লিয়াং নামের চলচ্চিত্র বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে গোল্ডেন বীয়ার পুরস্কার পেয়েছে।

দরোথির চীনা নাম হল চাং ফেই। তিনি চাং ই মোর মত আফ্রিকার বিখ্যাত চিত্র পরিচালকে পরিণত হতে চান। ১৯৯৮ সালে দরোথি শুধু একজন জীব বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। হোং কাও লিয়াং নামে চলচ্চিত্র দেখার পর তার জীবন আগের চেয়ে ভিন্ন রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, (৪)

চলচ্চিত্র আমার শখ। তবে আগে আমি কখনো ভাবিনি যে, চলচ্চিত্র আমার বিষয়ে পরিণত হবে। এ চলচ্চিত্র আমার জীবনের মনোভাব পরিবর্তিত হবে।

২০০০ সালে দরোথি চীনে এসে চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন। সাত বছর লেখাপড়ার পর তিনি তার আইডলের সঙ্গে শুটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন।

যদিও চীনের চলচ্চিত্র এতোটা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। দরোথি বেনিনে অনেক ফরাসী চলচ্চিত্র দেখেছেন। তবে তিনি চিত্র পরিচালক চাং ই মোর চলচ্চিত্রের মধ্যে আফ্রিকার চলচ্চিত্র শেখার অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি মনে করেন, চীন ও আফ্রিকার সংস্কৃতির মধ্যে অনেক বেশি মিল রয়েছে। যেমন দু'দেশের জনগণ অতিথিপরায়ন ও পারিবারিক সম্পর্ক গভীর। এসব কারণে দরোথি চীনে একটি চলচ্চিত্র কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি বলেন, (৫)

আমি আশা করি, আমার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চীন আফ্রিকাকে জানতে পারবে এবং আফ্রিকা চীনকে জানতে পারবে। কেন চীন এতো দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে? আমি আমার দেশের জনগণকে বলবো, এখানকার সবাই চেষ্টা করে, দেশকে উন্নত করতে পেরেছে। আমি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এ প্রস্তাব প্রকাশ করবো।

দরোথির মত বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা চীনে তাদের স্বপ্ন অনুসন্ধান করছেন। চীনে লেখাপড়ার মাধ্যমে তারা অবশ্যই আরো সুন্দর উন্নয়নের পথ খুঁজে বের করতে পারবেন।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China