একজন নেপালী নাগরিক হিসেবে এটি চাং মু স্থলবন্দরে আমার প্রথম সফর । নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডু ও চীন-নেপাল সীমান্তের চাং মু স্থলবন্দরের ব্যবধান মাত্র ১৭০ কিলোমিটার । তাসত্ত্বেও আগে আমি কোনোদিন এখানে আসি নি । চাং মু স্থলবন্দর থেকে নেপালী ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত চীনে তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন আমার নিজের কাছে , তেমনি সকল নেপালীর কাছেও অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । যখন আমি চাং মু স্থলবন্দরে এসে পৌঁছলাম , তখন আমি অনুভব করেছি যে , এ জায়গা আমার আগেকার কল্পিত চাং মুর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে ।
চাং মু স্থলবন্দর চারদিকে পাহাড়-পর্বত দিয়ে ঘেরা । এখানকার সর্বত্রই সবুজ রংয়ের ছড়াছড়ি । জলপ্রপাত উঁচু উঁচু পাহাড় ও উপত্যকা থেকে নীচের দিকে প্রবাহিত হয় এবং অসংখ্য ঝরনার আওয়াজ মানুষের মনকে মাতিয়ে তুলে । চাং মু স্থলবন্দরের দোকানপাট সবই পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে । পাহাড়ের নীচ থেকে উপরের দিকে তাকালে সারি সারি দোকানপাট দেখা যায় । চাং মু স্থলবন্দরে সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে এবং বর্তমান বর্ষাকাল চলছে বলে এখন আসাযাওয়া যানবাহনের জন্যে একটু কষ্টকর । আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে , চাং মু স্থলবন্দরের প্রত্যেক লোক নিজের নিজের ব্যবসার জন্যে ব্যস্ত রয়েছেন । এখানকার লোকেরা নানা ধরণের ব্যবসা করছেন । কেউ কেউ ইলেক্ট্রোনিক পণ্য বা কাপড়-চোপড় নিয়ে ব্যবসা করেন , আবার কেউ কেউ ফলমুল বা শাকসব্জি নিয়ে ব্যবসা করেন । নেপালীদের মধ্যে যারা ছোটখাটো ব্যবসা করেন , তারা সাধারণত চাং মু স্থলবন্দর থেকে কিছু না কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকেন । যেসব নেপালী ব্যবসায়ী পাইকারী ব্যবসা করেন , তারা সাধারণত দক্ষিণ চীনের কুয়াং চৌ থেকে আমদানি করে থাকেন ।
চাং মু স্থলবন্দরের বাড়িঘর একেবারে নেপালের বাড়িঘরের মত । এখানকার বাড়িঘরের স্থাপত্যরীতি দেখে আমার নিজের বাড়ির চেহারা মনে পড়ে । চাং মু স্থলবন্দরে এখানে আসা পর্যটকদের থাকার জন্যেও কিছু হোটেল-মোটেল রয়েছে । পর্যটকদের আকৃষ্ট করা এবং সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার জন্যে এসব হোটেল-মোটেল নির্মাণ করা হয়েছে । আমি দেখতে পেলাম , চাং মু স্থলবন্দরের হোটেল-মোটেলের দাম বেশি নয় ।
যারা চাং মু স্থলবন্দরে বসবাস করেন , তারা সবাই সাবলীলভাবে চীনা ভাষা , তিব্বতী ভাষা ও নেপালী ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারেন । একদিন স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসীর সংগে আমার দেখা হলো । তারা নেপালী ভাষায় আমার সংগে আলাপ করলেন । এতে আমার খুবই ভালো লাগল । আমি যেন নেপালে ফিরে এসেছি ।
চাং মু স্থলবন্দরে কয়েকজন নেপালী ব্যবসায়ীর সংগেও আমার আলাপ করার সুযোগ ঘটলো । তারা আমাকে জানান , তারা চীন থেকে পণ্যদ্রব্য আমদানি করতে খুবই আগ্রহী । নেপালীদের কাছে চীনে তৈরি পণ্যের দারণ চাহিদা রয়েছে । কেন না চীনের পণ্যদ্রব্যের মান উত্কৃষ্ট এবং দাম সস্তা । যদিও চীন-নেপাল সড়কের অবস্থা মোটামুটি ভাল , তবুও চাং মু স্থলবন্দর থেকে নেপালে মাল পরিবহন করতে হলে এখনো অনেক সময় লাগে । যদি চীন সরকার তার রেলপথ চীন-নেপাল সীমান্ত বরাবর পর্যন্ত নির্মাণ করে , তবে চীন থেকে নেপালে মাল পরিবহন করা অনেক সুবিধাজনক হবে এবং অনেক সময়ও বাঁচানো সম্ভব হবে ।
চীন ও নেপালের মৈত্রী সুদীর্ঘদিনের । উভয় পক্ষ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের আদান-প্রদান ও সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কও অবিরামভাবে সম্প্রসারণ করা দরকার । আমি আন্তরিকভাবে আশা করি যে , চীন ও নেপাল এবং দুই দেশের জনগণ ভবিষ্যতেও ভালো ভাই ও অংশীদার হয়ে থাকবো । |