v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের গাড়ি তৈরী শিল্প দ্রুত উন্নয়নের পথে এগুচ্ছে
2009-08-27 20:00:48
এ বছর হচ্ছে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বছর বার্ষিকী। গত ৬০ বছর চীনের গাড়ি তৈরী শিল্পও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে চীনের গাড়ি শিল্প দ্রুত উন্নয়নের পথে এগুচ্ছে। আজকের এ অর্থনীতির অগ্রযাত্রা অনুষ্ঠানে আমরা চীনের গাড়ি শিল্পের উন্নয়নকে নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো।

২৭ বছর বয়সী মা ইয়ুন লিয়াং হচ্ছে একটি কোম্পানির কর্মী। গত মাসে তিনি নিজের জন্য একটি ছোট গাড়ি কিনেছেন। তিনি বলেন, 'এখন অনেক গাড়ি কিনেন। দু-এক বছরের আয় দিয়ে একটি গাড়ি কেনা সম্ভব হয়। গাড়ি কিনলে বাইরে ভ্রমণের সুবিধা হবে এবং অফিসে যাওয়া-আসাও গণ পরিবহণ নেয়া দরকার নেই।

সাম্প্রতিক কালে মা ইয়ুন লিয়াং'র মতো অনেকে গাড়ির অধিকারী হয়েছে। তারা প্রতিদিন গাড়ির সুবিধা উপভোগ করছেন। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে চীনের ব্যক্তিগত গাড়ি অধিকারীর সংখ্যা বিশ্বের ২৬ স্থানে রয়েছে।

কিন্তু ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সময় দীঘকালীন যুদ্ধের কারণে চীনের অর্থনীতি অবশীলতার সীমান্তে রয়েছে এবং গাড়ি তৈরী শিল্প ছিল না। ১৯৫৬ সালে চীনের প্রথম গাড়ি তৈরি কারখানা চালু হয়। যার মানে চীনের গাড়ি তৈরী শিল্প গড়ে উঠেছে।

১৯৭৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি প্রবর্তনের পর থেকে চীনে গভীরভাবে পরিবর্তন হয়েছে। যা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চালিকা শক্তি যুগিয়েছে। ফলে চীনের গাড়ি তৈরী শিল্পেরও দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। চীনের গাড়ি তৈরী শিল্প পরিষদের চেয়ার‌ম্যান চাং সিয়াও ইয়ু বলেছেন, '১৯৭৮ সালে আমরা মাত্র এক লাখ ৪৯ হাজার গাড়ি তৈরী করে। গত ৩০ বছর চেষ্টার পর ২০০৮ সালে এ পরিমাণ ১০০ লাখে দাঁড়িয়েছে। যা জাপানের পর বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির সঙ্গে সঙ্গে চীনের বিশাল বাজার দেখা দিয়েছে। তা আন্তর্জাতিক অনেক গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আকর্ষণ করেছে। জার্মানির জেনারেল মটরস কোম্পানি প্রথমে চীনে কারখানা স্থাপন করে। এ কোম্পানির বাজার বিষয়ক ব্যবস্থাপক হু পো আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, চীনের বাজার জেনারেল মটরসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বর্তমানে চীন জার্মানির পর জেনারেল মটরসের দ্বিতীয় বাজারে পরিণত হয়েছে এবং দু'দেশের বাজারের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। জেনারেল মটরসের জন্য ব্রাজিল ও জার্মানির চেয়ে চীন আরও গুরুত্বপূর্ণ। চীন হচ্ছে সারা বিশ্বে জেনারেল মটরসের বৃহত্তম বাজার।

আন্তর্জাতিক গাড়ি তৈরী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বাজারের কল্যাণ উপভোগ করার পাশাপাশি উত্তেজিত প্রতিযোগিতাও বয়ে এনেছে। এর ফলে চীনের গাড়ি শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। ২০০০ সালে চীন প্রতি পরিবারের গাড়ি কেনায় উত্সাহিত দিতে শুরু করে। চীনের গাড়ি তৈরী শিল্পও বিদেশের গাড়ির সঙ্গে সহযোগিতায় গাড়ি তৈরীর পদ্ধতি থেকে নিজের উদ্ভাবনে গাড়ি তৈরীর পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম দিকে চীনা পরিবার আমদানিকৃত গাড়ি কিনতেন। কিন্তু বর্তমানে গাড়ি বিক্রির বাজার অনেত পরিবর্তন হয়েছে। পেইচিংয়ে বৃহত্তম গাড়ি বিক্রি বাজার-ইয়া ইয়ুন ছুন গাড়ি বিনিময় বাজারের বাণিজ্যিক তথ্য বিষয়ক পরিচালক কুও ইয়ো বলেছেন,

(রেকডিং ৫)

'বর্তমানে আমদানিকৃত গাড়ি প্রতি বছরে গাড়ি বিক্রির পরিমাণের ৩ শতাংশ। গাড়ি বাজারে অধিকাংশ গাড়ি যৌথভাবে বা পুরোপুরি নিজের উদ্ভাবিত। নিজের উদ্ভাবিত গাড়ির পরিমাণ তিন অংশের এক অংশে দাঁড়িয়েছে।

চীনের নিজের তৈরী গাড়ি স্বদেশের ভোক্তাদের আকর্ষণ করার পাশাপাশি বিদেশে বাজারেও ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৭ ও ২০০৮ সাল চীনের রপ্তানিকৃত গাড়ির পরিমাণ যথাক্রমে ছিল ৬ লাখ ও ১০ লাখ। বিদেশের রপ্তানিকৃত গাড়ির মধ্যে চেরি, জিলি, লিফান ও বিয়াডি কোম্পানি তৈরী করা গাড়ি অনেক বেশি। চেরি কোম্পানির সহকারী মহান ব্যবস্থাপক চিন খে পো বলেছেন, 'চেরি কোম্পানি টানা ছ'বছর ধরে গাড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে। তার রপ্তানিকৃত গাড়ির পরিমাণ সব রপ্তানিকৃত গাড়ির পরিমাণের ৫০ শতাংশ। গত বছর চেরি কোম্পানি মোট এক লাখ ৩৬ হাজার। যা অন্য চীনের গাড়ি কোম্পানির চেয়ে অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেছেন, চেরি কোম্পানি বিদেশের ৭০টিরও বেশি দেশে বিক্রির পয়েন্ট স্থাপন করেছে। এ বছরের শেষ দিকে এ কোম্পানি বিদেশে ১৫টি কারখানা স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

অভ্যন্তরীণ ও বিদেশের বাজার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনের গাড়ি কোম্পানি নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ি গবেষণার কাজ জোরদার করছে। বর্তমানে চীনের জ্বালানি সাশ্রয়ী গাড়ির শিল্পায়ন বিশ্বের গাড়ি শিল্পে উন্নত দেশসমুহের সঙ্গে একই মানে রয়েছে।

চেরি কোম্পানির তৈরী দু'ধরণের জ্বালানি সাশ্রয়ী গাড়ি গত বছরে পেইচিং অলিম্পিক গেমসে সেবা প্রদান করেছে। চিন খে পো বলেছেন, 'এ পর্যন্ত আমাদের মিশ্রণ জ্বালানি চালিত গাড়ি ইতোমধ্যেই বাজারজাত করা হয়েছে। এ বছরের শেষ দিক থেকে আগামী বছরের প্রথম দিক পর্যন্ত আমরা মিশ্রণ জ্বালানি চালিত দ্বিতীয় ধরণের গাড়ি বাজারজাত করবো। আমরা জ্বালানি পরিবর্তে গাড়ি তৈরীর প্রযুক্তিও আয়ত্ত করেছি।

চেরি কোম্পানির মতো বিয়াডি কোম্পানিও জ্বালানি সাশ্রয়ী গাড়ির ওপর গুরুত্ব দেয়। এ কোম্পানির বাজার বিষয়ক ব্যবস্থাপক স্যু আন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, বিয়াডি কোম্পানি বিদ্যুত্ চালিত গাড়ি তৈরি ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীতে রয়েছে। সেজন্য অনেক আন্তর্জাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে সহযোগিতার লক্ষ্যে চীনে এসেছে। তিনি বলেছেন, 'আমরা জার্মানির জেনারেল মটরসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছি। দু'কোম্পানির মধ্যে নতুন জ্বালানি কোম্পানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা শুরু করবে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সহযোগিতার লক্ষ্যে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। এ সব বিখ্যাত কোম্পানির সঙ্গে উভয়ের কল্যাণে আমরাও উন্মুক্তকরণভাবে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবো।

বিশ্বের আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে চীন গাড়ি শিল্প চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন জ্বালানি চালিত গামি তৈরী শিল্পকে সমর্থন করা হচ্ছে এ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের গাড়ি শিল্প দ্রুত উন্নয়নের পথে এগুচ্ছে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। চীনের গাড়ি শিল্প পরিষদের চেয়ারম্যান ৬০ বছর বয়সী চাং সিয়াও ইয়ু চীনের গাড়ি শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে বলেছেন,

২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের তৈরী গাড়ির পরিমাণ বিশ্বের প্রথম স্থানে থাকবে। যার পরিমাণ ২০০ লাখ। ফলে আমাদের দেশে প্রতি ২৫জন থেকে প্রতি ১০ জন একটি গাড়ি অধিকারী থাকবে। (ওয়াং তান হোং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China