v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সুন সিমেই ও হোপেই প্রদেশের"গ্রামীন পাঠাগার"
2009-08-25 21:01:06

সুন সিমেই একজন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রী । তার পরিবার গরিব হলেও তিনি হোপেই প্রদেশে নিজের জন্মস্থানে একটি গ্রামীন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন । যাতে কৃষকরা বই পড়তে এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারেন তার জন্য গ্রামীন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা তার উদ্দেশ্য । তার এই গ্রামীন পাটাগার হোপেই প্রদেশের সংস্কৃতি বিভাগের সহায়তা পেয়েছে এবং প্রদেশের ভেতরের বিভিন্ন এলাকায় পাটাগারের শাখাও প্রতিষ্ঠা করেছে ।

জুন মাসে উত্তর চীনে একটানা বেশ কয়েক দিন ধরে উচ্চ তাপমাত্রা থাকলেও গ্রামবাসীদের পই পড়ার আগ্রহ একটুও কমেনি । হোপেই প্রদেশের লুয়ান ছেন জেলার তোংচো গ্রামের "গ্রামীন পাটাগারের" ৪০ বর্গ মিটার আয়তনের রুমের পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর তিন দিকের আলমারী বই এবং পত্রপত্রিকায় ভরা ছিল এবং রুমের দক্ষিণ দিকের টেবিলে রাখা ছিল কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং ভিসিডিসহ নানা ভিডিও ক্যাসেট । রুমের মাঝখানে বড় টেবিলের চারপাশে ৭-৮জন গ্রামবাসী মনোযোগের সঙ্গে বই পড়ছিলেন ।গরম আবহাওয়ার দরুন তাদের বই পড়ার আগ্রহ বিন্দুমাত্রও কমেনি ।একজন গ্রামবাসী জানান, আমি প্রায়ই বই পড়তে আসি । আমি জলজ চাষ করি । জলজ চাষে যে সমস্যা হয় বই পড়ে আমি তা সমাধান করতে পারি । এ পাঠাগার থেকে সত্যি আমরা খুব উপকার হই ।

হোপেই প্রদেশের গ্রামীন পাঠাগারগুলো সমাজের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের আর্থিক সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত । এগুলোর মধ্যে সুন সিমেইর "গ্রামীন পাটাগার" সবচেয়ে বিখ্যাত । সুন সিমেই উহান শহরের মধ্য-দক্ষিণ আর্থ-রাজনৈতিক আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ।তার বাড়ি হোপেই প্রদেশের লিংসৌ সিয়েন জেলার ছিউশানছুন গ্রামে । আর্থিক অবস্থার কারণে নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ততিনি স্কুল ভাতা এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে লেখাপড়ার মাধ্যমে পাওয়া বৃত্তি দিয়ে লেখাপড়া ও দৈনিক জীবনযাত্রা নির্বাহকরতেন । তিনি স্কুলের পাটাগারে বই পড়ে অনেক জ্ঞান লাভ করেন । কিন্তু তার জন্মস্থানের ছেলেমেয়েরা আর্থিক অভাবের কারণে স্কুলচ্যুত হচ্ছে দেখে তার খুব দুঃখ লেগেছে । তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছুটিতে আমি বাড়ি যাই । গ্রামের ছেলেমেয়েরা আমাকে দেখে খুব ঈর্ষা করে । তাদের অবস্থা দেখে আমার মনে খুব কষ্ট লাগে । তারা বাইরের বিশ্ব সম্পর্কে খুব কম জানে । আমি চাই তারা বেশি বই পড়বে, বই থেকে জ্ঞান লাভ করবে ।

গ্রামবাসীদের জন্য একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা সুন সিমেইর বড় আশা । ২০০৭ সালে সিচিয়াচুয়াং শহরে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় সুন সিমেই আবর্জনা বিক্রি করে কেনা এবং সহপাঠীদের কাছ থেকে জোগাড় করা এক হাজারেরও বেশি কপি বই দিয়ে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা বরেছেন । সুন সিমেই আবর্জনা বিক্রি করে গ্রামবাসীদের জন্য যে পাটাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন তা অনেককে মুগ্ধ করেছে এবং স্থানীয় সরকারের সাহায্যও পেয়েছে ।

যাতে আরও বেশি লোক গ্রামীন পাঠাগার স্থাপনে অংশ নেন তার জন্য গত এপ্রিল মাসে সারা হোপেই প্রদেশে গ্রামীন পাঠাগারের মাধ্যমে সাহায্য ও যোগাযোগের কার্যক্রম চালু হয়েছে । এ সম্পর্কে হোপেই প্রদেশের তথ্য ও প্রকাশনা ব্যুরোর প্রধান লি সিয়াওমিং বলেন,জন্মস্থানকে প্রতিদান দেশপ্রেমিক প্রতিটি লোকের অভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষা । গ্রামীন পাঠাগারের মাধ্যমে সাহায্য ও যোগাযোগের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হল গ্রামীন পাঠাগারের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সাহায্য ও যোগাযোগ করে সবার জন্য প্রতিদানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং নিজের দেশকে প্রতিদানের একটি মঞ্চ গড়ে দেয়া ।

৬৭ বছর বয়সী ছিয়াও সুসিন সিচিয়াচুয়াং শহরের একজন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক । জন্মস্থানে একটি পাটাগার প্রতিষ্ঠা করা তার বহু বছরের আকাঙ্ক্ষা । অনেক চেষ্টা চালালেও তিনি সফল হতে পারেননি । গত এপ্রিল মাসে পত্রিকার খবরটা পড়ে তিনি খুব খুশী হয়েছেন । তিনি বলেন ,২৯ এপ্রিল সংবাদপত্রের একটি খবর পড়ে আমি এত খুশী হলাম যে ,ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । সঙ্গে সঙ্গে আমি টেলিফোন করে তাদেরকে আমার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করি ।আমি তাদেরকে বলেছি , আমি ৬৭ বছর বয়সী মানুষ । আমার স্বাস্থ্য তেমন ভাল নয় । তাড়াতাড়ি করা দরকার । তাই দ্বিতীয় দিন আমি পত্রিকা অফিসে চলে যাই ।

বারবার যোগাযোগের পর হোপেই প্রদেশের তথ্য ও প্রকাশনা ব্যুরোর সাহায্যে বুড়ি মা ছিয়াও সুসিন চেনতিন জেলার সিয়াও হান ছুন গ্রামে ৪০ বর্গমিটার আয়তনের একটি পাটাগার খুলেছেন । ছিয়াও সুসিনের মতো অধিক থেকে অধিক ইউনিট ও ব্যক্তি গ্রামীন পাঠাগার নামে সাহায্য ও যোগাযোগের কাজে অংশ নিচ্ছেন । হোপেই প্রদেশের গ্রামীন পাঠাগার কার্যালয়ের প্রধান সি চিংছুং জানান, কার্যক্রমটি চালু হওয়ার ২ মাসের মধ্যেই সমাজের বিভিন্নমহল গ্রামীন পাঠাগার স্থাপনে অনেক সাহায্য করেছে । এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি ইউনিট ও ব্যক্তি গ্রামীন পাঠাগারের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাহায্যের সম্পর্ক স্থাপন করেছে । তাছাড়া এক হাজারেরও বেশি ব্যক্তি যোগাযোগের সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ।

এ পর্যন্ত হোপেই প্রদেশের ব্যাপক গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৩০০০টি গ্রামীন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । আগের গ্রামীন পাঠাগারসহ এখন হোপেই প্রদেশের দশ হাজারেরও বেশি গ্রামে নিজেদের পাঠাগার রয়েছে । সারা প্রদেশে ৫০ হাজার গ্রামে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের আগেই হোপেই প্রদেশ ১০০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করবে । এটা সকল কৃষকদের বই পড়া এবং খবর জানার জন্য প্রয়োজনীয় বুনিয়াদী ব্যবস্থা ও সুবিধাজনক সেবা দান করবে ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China