v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
শিহুয়ের কাহিনী
2009-08-24 17:02:31
   কিছু দিন আগে ৬৮ বছর বয়স্ক চাও চু মিনের মন ছিল খুব খারাপ। কারন তিনি ড্রাভিং লাইসেন্স পাননি। এর আগে তিনি দু'বার পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারে নি।সুতরাং তাকে তৃতীয় বার পরীক্ষা দিতে হবে।

    চাও চু মিন চিয়াংসু প্রদেশের চিনঠাই শহরের শিয়েহু নগরের একজন সাধারণ কৃষক। এ বছরের জানুয়ারী মাসে তিনি ৫০ হাজার ইউয়ান দিয়ে একটি ছোট গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। নতুন গাড়ি বাসায় রেখে তার মন খারাপ হওয়া ছাড়া অন্য কোন কারণ নেই।

   আসলে যন্ত্র চালিত গাড়ি তার কাছে অপরিচিত নয়। কেননা, তার অনেক বছরের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা আছে। তার তিন চাকার গাড়ি ড্রাইভিংয়ের লাইসেন্স আছে। তিন চাকার গাড়ি চালাতে তিনি খুব পটু। তা ছাড়া, অনেক বছর ধরে তিনি মোটর সাইকেল চালান । তিনি পর পর তিনটি মোটর সাইকেল পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু ছোট গাড়ি তার পক্ষে একেবারে নতুন জিনিস। তিনি কোন দিন ছোট গাড়ি চালান নি। তাই তিনি ড্রাইভিং স্কুলের প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। তিনি ড্রাইভিং সম্পর্কিত পাঠ্যবইও কিনেছেন।

   দিনের বেলা তিনি খেতের ফুল গাছের পরিচর্সা করেন।রাতেরবেলা তিনি ড্রাইভিং শেখেন। অনেক পরিশ্রমের পর তিনি তৃতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। গত ১০ জুলাই তিনি অবশেষে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন কিন্তু তাকে প্রতি বছর থানায় গিয়ে এক বার শারীরিক পরীক্ষা দিতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্জনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, এটি একটি খুব মজরার ব্যাপার। তিনি বলেন,

    পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আমার বয়স সবচেয়ে বেশী। সে দিন একজন বিচারক আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, কেন আমি এত বয়সী হয়ে ড্রাইভিংয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাস করেন, আমার কতটুকু লেখাপড়া হয়েছে। আমি তাকে বললাম , আমি একটি ছোট গাড়ি কিনেছি, তাই আমাকে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হবে। আমি তাকেও বলেছি , আগের দু'বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তৃতীয় বার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। প্রতি বছর থানায় গিয়ে গিয়ে আমাকে শারীরিক পরীক্ষা দিতে হবে।

     চাও চু মিন যে শিহু থানায় বাস করেন তা চিয়াংসু প্রদেশের ছানচো শহরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এই থানার আয়তন ২৩০ বগর্কিলোমিটারের বেশী। লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত বলে শিহু থানায় পযার্প্ত সম্পদ রয়েছে। এই থানা চিয়াংসু প্রদেশের "ফুল থানা" হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালে শিহু থানায় চাষ-করা ফুলের জমির আয়তন ১৫০০ হেক্টরেরও বেশী যা গোটা থানার আয়তনের শতকরা ৩০ ভাগ। ফুল বিক্রির পরিমাণ দু'কোটি ইউয়ানের বেশী।

     থানার অন্যান্য কৃষকের মতো তিনিও ফুল চাষ করার মাধ্যমে ধনী হয়েছেন। তার পরিবারের ৪ থেকে ৫ হেক্টের জমিতে নানা ধরনের ফুল চাষ করা হয়েছে। তার কথায় " পিঠার মতো জমিতে গাছও লাগানো হয়েছে। গত বছর তিনি ফুলচাষ করে এক লাখেরও বেশী রেন মিন পি আয় করেছেন।

    তার পরিবারের বতর্মান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার আনন্দের সীমা নেই। তিনি বলেন, গাছ লাগানোর মাধ্যমে কেবল তার পরিবার সচ্ছল হয়েছে তা নয় গ্রামের অন্যান্য কৃষকের পরিবারও সচ্ছল হয়ে উঠেছে। তার গ্রামের সবসকল পরিবারের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। অনেক পরিবার গাড়ি কিনেছে এবং থানা নগরে নতুন বাড়িও কিনেছে। তিনি বলেন,

    যখন ফুলের বাজারের অবস্থা ভাল থাকে তখন বছরে এক লাখেরও বেশী রেন মিন পি আয় পাওয়া যায়। যেমন গত বছর, ফুল গাছ বিক্রি করে আমার পরিবার এক লাখ ৫০ হাজার ইউয়ান আয় করে ছিল। অন্যান্য কৃষকের আয়ও বেড়েছে। বতর্মানে অধিকাংশ পরিবান নতুন গাড়ি কিনেছে। তা ছাড়া তাদের পরিবারে নতুন পারিপরিক ব্যবহৃত বিদ্যুত সামগ্রীও সাজানো হয়েছে। অনেক পরিবার থানা ও জেলা নগরে নতুন বাড়ি কিনেছে।

    এখন চাও ছু মিন গাড়ি চালিয়ে থানায় কীটনাশক কিনতে যান। গাড়িতে ৭ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে মাত্র আধা ঘন্টা লাগে। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে গাড়ির ভিতরে ঠান্ডা এবং শীতকালে গাড়িতে গরম। মোটর সাইকলের চেয়ে অনেক আরাম লাগে। তিনি বলেন,

      থানা শহর আমার বাসা থেকে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূর। গাড়িতে ওখানে যেতে মাত্র ১২ মিনিট সময় লাগে। গাড়ি কেনার পর আবার ব্যবসার জন্য তা অনেক সুবিধাজনক হয়েছে । থানা বা জেলা গনরে নীটনাশক বা অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য কেনার জন্য এখন আমি সব সময় গাড়ি চালিয়ে যাই।

     শিহু থানায় বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ চাষ করা হয় । তা ছাড়া এই থানার শিল্পও উন্নত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ থানা সরকার " অর্থনৈতিক উন্নয়নে শহরাঞ্চলের গঠন কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং শহরাঞ্চলের গঠনকাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করার ধারণা নির্ধারণ করেছে। বতর্মানে এ থানার নির্মান সামগ্রী, পোষাকসহ শিল্পে দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। গত বছর গোটা থানার শিল্পের মোটমূল্য ৪৭০ কোটি রেন মিন পিতে দাঁড়িয়েছে যা ২০০৭ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

শি লু ফেন শিহু থানা নগরের একটি দোকানের মালিক। গত ২৫ বছর ধরে তিনি এই থানা নগরে ব্যবসা করে আসছে।২০ বছর আগে তখন তিনি প্রথম থানা শহর আসেন তখন তার বড় মেয়ের বয়স মাত্র ৫ মাস। এখন তার বড় মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

    ২০ বছর আগে, আমাদের সামনের রাস্তার বিপরীত পাশে বাড়িঘর ছিলনা না। এই রাস্তায় শুধু মাত্র আমাদের বাড়িটি ছিল। আস্তে আস্তে চারপাশে বাড়িঘর বেড়েছে। অনেক কৃষক এখানে বাড়ি কিনে গ্রাম থেকে নতুন বাসায় উঠেছে। আগের চেয়ে এখন কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তাদের জীবনযাত্রানর চাহিদাও অনেক বেড়েছে।

    বতর্মানে চীনে শহরায়নের অগ্রগতি দ্রুততর হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিহু থানা সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। গত তিন বছর, শিহু থানায় বসতির মানসম্পন্ন নির্মান কাজের দিকে বেশী মনোযোগ দিয়েছে। আবাসিক এলাকার সবুজায়ন কাজও জোরদার করা হয়েছে।

    চীনের গ্রামাঞ্চলের কাজ বিষয়ক কর্মকর্তা জেন শিয়ে ভিয়েন বলেছেন, শরহায়ন গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিণতি। তিনি বলেন,

চীনের শহরায়ন অবশ্যই বড়, মাঝারি ও ছোট শহর ও জেলা এবং থানা শহরের সমন্বিত উন্নয়নের পথ। এ পথ হলো চীনের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শহরায়ন পথ। কারণ চীনের লোকসংখ্যা বিশিল। চীনের কৃষি সমস্যা সামলাতে কেবল বড় ও মাঝারি শহরগুলোর ওপর নিভর্র করা যায় না। ছোট নগরের উন্নয়ন করাকে চীনের শহরায়ন প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে মনে করা হয়।

    বতর্মানে. চীনে মোট ১৮ হাজা ছোট ছোট শহর আছে। চীনের গ্রামাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে ছোট শহরের গঠনকাজ নি:সন্দেহে চীনের শহরায়নের প্রক্রিয়া তরান্বিত করার ক্ষেত্রে তাত্পর্যসম্পন্ন। তবে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের ছোট শহর ও চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের ছোট শহরের মধ্যে ব্যবধান অনেক। সুতরাং চীনের ছোট শহরের গঠনকাজে অনেক কিছু করা আছে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China