v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনা ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যকরী দক্ষিণ কোরিয়ান কিম ইয়েং রেই
2009-08-20 15:53:04

উত্তর চীনের থিয়েন চিন শহরে এমন একজন দক্ষিণ কোরিয় ব্যবসায়ী আছেন যার নাম কিম ইয়েং রেই । ২০০৩ সালে তিনি থিয়েন চিন শহরে কারখানা প্রতিষ্ঠার পর ১৩টি দরিদ্র্য এতিম শিশুর লেখাপড়ার জন্য সাহায্য করেছেন । তিনি থিয়েন চিন শহরের সম্মানসূচক নাগরিকের পদ এবং থিয়েন চিনের "দশটি ক্ষেত্রে আদর্শ নাগরিকের পুরস্কার পেয়েছেন । আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের কিম ইয়েং রেই-এর কিছু কাহিনী আপনাদের বলবো আমি শুয়েই ফেই ফেই।

২০০৬ সালের ১০ই নভেম্বর থিয়েন চিন টি ভি স্টেশনের প্রধান হলে কিম ইয়েং রেই "দশটি ক্ষেত্রে আদর্শ নাগরিকের"পুরস্কার গ্রহণ করেছেন । ১৫ লাখেরও বেশি থিয়েন চিন নাগরিকদের অংশ নেয়া এ পুরস্কার নির্বাচনে কিম ইয়েং রেই এ পুরস্কার পাওয়া একমাত্র বিদেশি । এ দক্ষিণ কোরিয় ব্যবসায়ী থিয়েন চিনের কয়েকটি দরিদ্র শিশুর লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন । তার আচরণ থিয়েন চিনের মানুষকে মুগ্ধ করেছে । এ বিষয় নিয়ে যখন আমাদের সংবাদদাতা কিম ইয়েং রেইয়ের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন , তখন তিনি একটু লজ্জা বোধ করেন । তিনি বলেন : আর্থিক সাহায্য করা এটা সবাইকে জানানোর দরকার নেই । থিয়েন চিন শহরের পেই ছেন এলাকার লোকজন আমার এ আচরণ প্রকাশ করেছে , আমাকে এখন আরো বেশি লোকজন চেনেন । আসলে এজন্য আমার একটু লজ্জা লাগছে ।

কিম ইয়েং রেই থিয়েন চিনের একটি বৈদ্যুতিক সবঞ্জাম প্রস্তুকারী কোম্পানীর প্রধান ম্যানেজার । ২০০১ সালে তিনি থিয়েন চিনে এ কারখানা খুলে বসেছেন । কারখানা পরিচালনার সময় তিনি দেখেছেন যে কাছাকাছি এলাকার কিছু দরিদ্র এতিম শিশু স্কুলে যেতে প্রবেশ পারছে না , তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের নামও লিখতে পারে না । এ অবস্থা দেখে তিনি খুব দুঃখ পান । ২০০৪ সালে তিনি এসব শিশুদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন এবং স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ১৩টি দরিদ্র এতিম শিশুর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সাহায্য সম্পর্ক স্থাপন করেন । প্রতি মাসে কিম ইয়েং রেই তাদেরকে ৩ শ' ইউয়ানের সাহায্য করেন এবং নিয়মিতভাবে তাদেরকে কোম্পানীতে নিয়ে এসে একসাথে খাবার খান , তাদের লেখাপড়া ও জীবনযাপনের অবস্থা জিজ্ঞেস করেন , তাদের সুখী ও সুস্থভাবে বড় হওয়ার জন্য সাহায্য করেন ।

আসলে চীনে আসার আগে কিম ইয়েং রেই-এর ১৫ বছরের দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করার অভিজ্ঞতা ছিল । চীনে আসার পর কী কী কারণে তিনি অব্যাহতভাবে নিজের ভালোবাসা দিয়ে অন্যকে সাহায্য করেন ? কিম ইয়েং রেই বলেন , তিনি থিয়েন চিন নাগরিকদের বন্ধুত্ব ও দরিদ্র এতিম শিশুদের ভালোবাসা ছাড়া স্থানীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চান , তিনি বলেন : আমার কোম্পানীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত থিয়েন চিন শহরের পেই ছেন এলাকার সরকার আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন । তাদের সাহায্য ছাড়া আমার কোম্পানীর এতো দ্রুত উন্নতি হতো না । তাই একজন বিদেশি হিসেবে আমি সবসময় ভাবি যে কেমন করে চীন সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানানো যায় ? ফলে আমি এ পদ্ধতি নিয়েছি ।

এ ১৩ জন শিশু কিম ইয়েং রেইয়ের সাহায্যে লেখাপড়া করতে পেরেছে , এ ছাড়াও তাদের মানবিক স্বাস্থ্যও নিশ্চিত করা হয়েছে । কিম ইয়েং রেইয়ের মনে প্রথমবার এ ১৩টি শিশুকে কোম্পানীতে নিয়ে আসার পরিস্থিতি গভীর ছাপ ফেলেছে । তখন একটি ছোট মেয়ের পিছনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়াই । বিনিময়ের পর তিনি জানতে পেরেছেন যে এ মেয়েটি বাবা মা'র মৃত্যুর পর বিরাট মানবিক চাপ ও জীবনের চাপের কারণে তার নিজের ওপর আস্থাও হারিয়েছে । ক্লাসে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পায় , লেখাপড়ার ফলাফলও ভালো না । কিম ইয়েং রেই গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন যে দারিদ্র্য ও একাকিত্ব শিশুদের মানবিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । তাই কিম ইয়েং রেই সময় পেলে এ মেয়েটির সঙ্গে আলাপ করেন , তাকে উত্সাহ দেন এবং এ মেয়ের নানা নানির সঙ্গে যোগাযোগ করে এ মেয়ের শখ অনুযায়ী তাকে নাচের প্রশিক্ষণ ক্লাসে ভর্তি করেছেন । আস্তে আস্তে এ ছোট মেয়ের মুখে হাসি ফিরে এসেছে , লেখাপড়াও ভালো হয়েছে ।

কিম ইয়েং রেইয়ের সাথে সংবাদদাতা মা ইয়ু ছিং নামে এ ছোট মেয়েটিকে দেখেছেন । সংবাদদাতাকে দেখে সে আনন্দের সঙ্গে কথা বলে । কিম ইয়েং রেই'র কথা উল্লেখ করে সে খুব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে । সে বলে ; প্রতি মাসেই আমি কিমের কোম্পানীতে যাই । তিনি আমাদের সাথে খাবার খান , আমাদের তিনি প্রতি মাসেই ৩ শ ইউয়ান সাহায্য করেন ।

কিম ইয়েং রেই চেং রুং নামে আরেকটি মেয়েকে সাহায্য করেন । সে এখন হাই স্কুলে তৃতীয় শ্রণীর ছাত্রী । চেং রুং বলেন , কিম ইয়েং রেইয়ের কাছ থেকে সে শিখেছে যে ,যখন অন্যরা সমস্যার সম্মুখীন হয় , তখন তাদেরকে সাহায্য করা উচিত । নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে চেং রুং আশা করে কিম ইয়েং রেইয়ের মতই সে অন্যকে সাহায্য করতে পারবে । আমি চিন্তা করেছি যে বড় হওয়ার পর আমিও একটি কোম্পানী খুলবো এবং দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করবো । যদি তারা চাকরি খুঁজে না পায় , তাহলে আমার কোম্পানীতে কাজ করতে পারবে । চেং রুংয়ের শিক্ষক লিউ সিং হুং স্বচোখে শিশুদের চরিত্রের পরিবর্তন দেখেছেন । তিনি বলেন : এ মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই বাবা মার ভালোবাসা পায় নি । তাই তার চরিত্র অন্য ছাত্রছাত্রীদের মত প্রসন্ন। সে আমাদের সঙ্গেও নিজের মনের কথা বলেছিল । সে মনে করে তার কাছে সব কিছুই অন্ধকার । কারণ ভালোবাসা নেই , আনন্দ নেই । কিম ইয়েং রেইয়ের সাহায্যের পর সে উপভোগ করেছে যে আমাদের সমাজ ভালোবাসায় ভরে আছে । লোকেরা তাকে সাহায্য করে । সে পরিবারের মত ভালোবাসা উপভোগ করেছে ।

কিম ইয়েং রেইয়ের এ কাজে তার স্ত্রীও তাকে অনেক সমর্থন করেন । কিম ইয়েং রেইয়ের ছেলে মেয়ে থিয়েন চিনে লেখাপড়া করছে । তারাও এসব শিশুদের নিজের ভাইবোন হিসেবে দেখে এবং তাদের লেখাপড়ায় সাহায্য করে । এখন কিম ইয়েং রেইয়ের পরিবার একটি বড় আনন্দের পরিবার হয়েছে । কিম ইয়েং রেইয়ের কোম্পানীর কর্মীরাও শিশুদের জন্য অনেক কিছু করেন । কোম্পানীর কর্মী কুং নি না সবসময় শিশুদের সাথে থাকেন । এখন সে যেন এসব শিশুর বড় বোন হয়েছে । তিনি বলেন :  আমার মনে হয় আমাদের প্রধান ম্যানেজার একজন বিদেশি হিসেবে আমাদের চীনা শিশুদের এত যত্ন নেন , যে তা আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে । তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছুই শিখতে পারি । যদিও এখনো আমার শিশুদের আর্থিক সাহায্য দেয়ার সামর্থ্য নেই । তবুও ভবিষ্যতে আমি এভাবেই সাহায্য করতে পারবো ।

এসব শিশুদের কথা উল্লেখ করলে কিম ইয়েং রেইয়ের মুখে সুখীর হাঁসি ফুটে ওঠে । তিনি বলেন , এসব শিশুদের আনন্দ এবং আস্থার সঙ্গে বড় হওয়া হল তার সবচেয়ে বড় সুখ । তিনি বলেন : প্রথমবার এ ১৩টি শিশুকে দেখে তাদের মুখে কোনো হাসি দেখা যায় নি । সবসময় মানুষের পিছনে লুকিয়ে থাকে । এখন তারা আনন্দময় জীবন কাটাচ্ছে । তারা দিনের পর দিন বড় হচ্ছে দেখে আমি খুব খুশি ।

কিম ইয়েং রেই বলেন , যখন ১৩ টি শিশুকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেই তার প্রধান কারণ হল তখন তার কারখানায় মোট ১৩ জন কর্মী ছিল । এখন এ ১৩টি শিশুর মধ্যে কয়েক জনের বয়স হয়েছে ১৮ বছর । এদের এক জন প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । তাই যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে , তাদের নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করার সময় হয়েছে । চলতি বছর কিম ইয়ে রেই ৩০ জন ছাত্রছাত্রীকে সাহায্য করতে চান । সম্ভব হলে তিনি বিশেষ করে একটি হোস্টেল নির্মাণ করবেন । যাতে এসব ছাত্রছাত্রী একসাথে থাকতে এবং পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে ।

শ্রোতা বন্ধুরা , এতক্ষণ আপনারা দক্ষিণ কোরিয় বন্ধু কিম ইয়েং রেইয়ের চীনা ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার কাহিনী শুনলেন, শোনার জন্য ধন্যবাদ । (শুয়েই ফেই ফেই)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China