প্রিয় বন্ধুরা, কর্মসংস্থান সব সময় সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৭৮ সালের আগে অর্থাত চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার আগে চীনের যুবক-যুবতীরা সরকারের নিয়োগ নীতি অনুযায়ী চাকরি পেয়ে আসতো তবে চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনারা নিজেদের পছন্দমত চাকরি বাছাই করতে শুরু করেন। বতর্মানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছে যারা তারা নিজেদের শখ ও পছন্দ অনুয়ায়ী তাদের চাকরি বাছাই করেন।
গত ২০ বছর ধরে পেইচিং যৌথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফেন ফান ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের চাকরি খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বলেন, গত শতাব্দীর নব্বই দশকের আগে সরকারের নির্ধারিত নিয়োগ নীতি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীরা রাষ্ট্রীয় মলিকানাধীন সংস্থায় চাকরি পেতো। যদিও তখন তাদের কর্মসংস্থানের চাপের সম্মুখীন হতে হয় নি তবুও এ পদ্ধতিতে তারা স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দমত চাকরি বাছাই করতে পারতে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
অতীতে দেশে নির্ধারিতভাবে চাকরি বন্টনের ব্যবস্থা করা হতো। বিশেষভাবে সত্তর ও আশির দশকে ছাত্রছাত্রীদেরকে বিনা শর্তে দেশের নির্দেশ অনুসরণ করে মাতৃভূমিতে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে হবে। তাদের পড়ার বিষয় বা নিজস্ব শখ একেবারে কর্মসংস্থানের বিবেচিত উপাদান ছিল না। তখন " ব্যক্তিত্বের " ধারণা জনসাধারণের মনে অত্যন্ত দুর্বল ছিল।
গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শেষ দিকে চীনে পরিকল্পনা অর্থনীতি বাজার অর্থনীতিতে রুপান্তরিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের পদ্ধতিও আপনাআপনি পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দেশের নিয়োগ অনুসরণ না করে বরং বাজার অর্থনীতির প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেদের চাকরি বাছাই করেন। লিও লি হলেন প্রথম কিস্তির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন যিনি স্বতন্ত্র কর্মসংস্থান নীতি প্রবর্তিত হওয়ার পর চাকরি পেয়েছেন। তার বয়স ৩৪। বতর্মানে তিনি সেনডং ইয়েতাইয়ের এক শেয়ার কোম্পানিতে কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সেনসি অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হন । হঠাত স্বতন্ত্র কর্মসংস্থানের মুখে পড়ে তিনি বিষন্ন হয়ে পড়েন। তিনি বলেন,
তখন এ কর্মসংস্থানের নীতি শুনে আমি অবাক হয়ে গেছি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময় আমি কখনও ভাবি নি যে ভবিষ্যতে আমাকে নিজেই চাকরি খুঁজতে হবে। আমার ধারণা এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার শেষ বছর আমি চাকরি সর্ম্পকে হতচকিত হয়ে গেলাম।
বিশের একটু বেশী বয়স্ক লিও লির পক্ষে তার সামনে অনেক জটিল অসুবিধা রয়েছে। তখন তিনি অন্যদের কাছ থেকে কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থান বিষয়ক কোনো কোর্সও ছিল না। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি বুঝতে পেয়েছেন , ভবিষ্যতের মুখে তার জন্য জীবনের মূল্যায়ন প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তার বিষন্ন মন পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
কিন্তু আমার মনে হয়, স্বতন্ত্রভাবে চাকরি বাছাই করা মানুষের জীবনে হয়তো একটি ভাল ব্যাপার। জীবনযাত্রার জন্য বাইরে নিজে নিজে লড়াই করা মন্দ ব্যাপার নয়। তখন আমার বয়স কম , সুতরাং আমার ভয়ের কিছু ছিল না। পরে আমি চাকরি খুঁজতে শুরু করি।
এর পর লিও লি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জন্মস্থান সেনসি ত্যাগ করে চীনের উপকূলীয় শহরে চাকরি খুঁজতে যান। তিনি বিশ্বাস করেন, অপেক্ষাকৃত ভাল অর্থনৈতিক ভিত্তি তার জন্য একটি আশাবাদী ভবিষ্যত এনে দিতে পারে । তিনি স্বতন্ত্র কর্মসংস্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুরোপুরি নিজের জীবন পরিবর্তন করতে চায়। অন্যান্য সহপাঠীর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য তিনি পর পর পেইচিং ও সাংহাই সহ কয়েকটি শহরে গিয়েছেন। অবশেষে তিনি সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সেনডং গিয়েছেন।
সৌভাগ্যক্রমে লিও লি সাক্ষাত্কারে চমত্কার নৈপূণ্য দেখিয়েছেন । তিনি সেনডংয়ে সুযোগ পেয়েছেন। দশ বছর পর , এখন তিনি এক শেয়ার কোম্পানির উচ্চ পদস্থ ব্যবস্থাপনা ব্যক্তি।তার এই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে লিও লি বলেছেন, স্বতন্ত্রভাবে চাকরি বাছাই করার মাধ্যমে তার মনের দিগন্ত প্রসারিত হয়েছে। তিনি বলেন,
আমি লক্ষ্য করেছি যে, যারা আগে সরকারের নিয়োগ নীতি অনুযায়ী চাকরি করছেন তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের চাকরি পছন্দ করেন নি। হয়তো মানুষ নিজের আশা-আকাংক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে না। কিন্তু আমি কখনও নিজের বাছাই সম্পর্কে অনুতপ্ত নই।
স্বতন্ত্র চাকরি বাছাই করার নীতি প্রতিবর্তনের দশ বছর পূর্ণ হয়েছে। বতর্মানে চীনের যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের পরিবেশ ও অবস্থায় কী কী পরিবর্তন ঘটেছে? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফেন ফান ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
বতর্মানে স্নাতকদের মধ্যে অধিকাংশেরই আশির দশকের পর জন্ম । তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব প্রতিফলিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশ ছাড়া , তারা নিজের দক্ষতা দেখানোর প্ল্যাথর্ফোম খুঁজেছেন।
বতর্মানে অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। চীনের যুবক-যুবতীরা কর্মসংস্থান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। এখন কর্মসংস্থানের অবকাশ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। সুতরাং অধিক থেকে অধিকতর যুবক-যুবতী নিজস্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতে পছন্দ করেন। অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল চাকরি তাদের লক্ষ্য আরও নয়।
লি হুয়ান হুয়ান ১৯৮৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বতর্মানে যে কোম্পানিতে কাজ করেন সেই কোম্পানি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের স্বয়ং প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। এটা হল জাতি সংঘের কৌশল অনুশীলন প্রশিক্ষণ সংস্থা। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। চীনের কয়েকটি নাম-করা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। এ কোম্পানি চালু হওয়ার শুরুতেই, অনেক অসুবিধা ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
প্রথম দু'বছর এ কোম্পানি চালানো ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের জন্যে তাদেরকে বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু বিদেশের স্কুলগুলো আমাদেরকে বিশ্বাস করে না। অভিভাবকরাও আমাদের সন্দেহ করে । কারণ আমরা সবই সদ্য স্নাতকপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী।
বতর্মানে কোম্পানির ব্যবসা খুব ভাল। গত বছর এ কোম্পানির উদ্যোগে চীনের মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রি দল যুক্তরাষ্ট্রের য়েলু বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত জাতিসংঘ অনুশীলন কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন। |