v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের ক্রীড়া ক্ষেত্রে এত উন্নত হওয়ার প্রধান কারণ কি?
2009-08-13 20:27:55

কুষ্টিয়া জেলার শ্রোতা অঘোর মন্ডর তাঁর ঠিতে চীনের ক্রীড়া সম্পর্কে জানতে জানতে চেয়েছেন। তিনি তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় লক্ষ্যনীয় সাফল্য অজর্ন করেছেন। ক্রীড়ার মান উন্নত করার জন্য চীন সরকার কি কি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন? চীনের ক্রীড়া ক্ষেত্রে এত উন্নত হওয়ার প্রধান কারণ কি?

প্রিয় শ্রোতা বন্ধু, গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে সরকার শরীরচর্চা, ব্যায়াম ও খেলাধুলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উন্নতি ও প্রসায়ের জন্যে এ সম্পর্কে নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীনে রাষ্ট্রীয় শরীচর্চা ও ক্রীড়া কমিশন গঠন করা হয়েছিল। বিভিন্ন অঞ্চলে শরীচর্চা ও খেলাধুলার কাজকর্ম পরিচালনার জন্যে বিভিন্ন প্রদেশ, শহর, স্বায়ত্তশিসিত এলাকা ও জেলায়ও এমনি শরীচর্চা ও ক্রীড়া কমিশন সক্রিয় রেয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বতর্মানে সারা চীনদেশে অনেক শরীরচর্চা ও ক্রীড়াচর্চা ইনস্টিটিউট আছে। এসব ইনস্টিটিউটে তরুণ-তরুণীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ক্রীড়া মান উন্নত করার জন্যে চীনে গণ-পযার্য়ের ক্রীড়াচর্চা শুরু হয়েছে ১৯৪৯ সালে। জনসাধারণ ক্রমেই আরো ব্যাপক সংখ্যায় ক্রীড়াক্ষেত্রে সাসতে থাকার ফলে অনেক বিশিষ্ট নারীপুরুষ ক্রীড়াবিদদের উদ্ভব হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্রীড়ার মানও ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে চীনের নারী-পুরুষ ক্রীড়াবিদরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপরের সারিতে পৌঁছেছেন।তা ছাড়া, গত কয়েক বছরে চীনের নারীপুরুষ ক্রীড়াবিদদের অনেকেই বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেছেন, অনেকেই শ্রেষ্ঠত্বের খেতার পেয়েছেন। টেবিল-টেনিস চীনের জাতীয় খেলা। এই খেলা চীনা জনগণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ষাট দশকের শেষ দিক থেকে এখন পযর্ন্ত চীনের টেবিল-টেনিস সবর্দাই বিশ্বের চ্যাম্পীয়ন। চীনের জাতীয় টেবিল-টেনিস দল দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

আপনারা জানেন যে, ২০০৮ সালে পেইচিংএ অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করা হয়। এখন চীনের নারীপুরুষ ক্রীড়াবিদরা অলিম্পিক গেমসের জন্যে কঠোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পেইচিং অলিম্পিক ২০০৮-এ চীনের নারীপুরুষ ক্রীড়াবিদরা ভাল নৈপুণ্য দেখাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজশাহী জেলার শ্রোতা জাকিয়া আহমেদ তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েক রেল লাই আছে?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চীনের রেলপথ সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। চীনের মাল-পরিবহণ ব্যবস্থায় রেলপথের গুরুত্ব খুব বেশী। দেশে মাল পরিবহণের মোট পরিমাণের শতকরা ৬০ ভাগ রেলযোগে সম্পন্ন হয়। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে চীনে প্রথম রেলপথ বসিয়েছিল ইংরেজরা ১৮৭৯ সালে। তখন থেকে মুক্তির বছর ১৯৪৯ সাল পযর্ন্ত এই ৭৩ বছরে মাত্র ২২ হাজার কিলোমিটার রেলপথ গড়ে উঠেছিল। এই রেলপথেরও প্রায় অধের্কই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল দীঘর্দিন ধরে দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মুক্তির সময়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী রেলপথ ছিল মাত্র ১১ হাজার কিলোমিটার। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পুরনো রেলপথগুলো মেরামত বা সংস্কার করা হয়েছে এবং অজস্র নতুন রেলপথ তৈরী করা হয়েছে। বতর্মানে চীনের প্রতি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে রেলগাড়ীর চলাচল হয়েছে। গত বছর ছিনহাই-তিব্বত রেলপথ স্থাপিত হয়েছে। তার মানে সারা চীনে এমন যায়গা নেই যার প্রতি রেলগাড়ী যাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা চীনে রেলগাড়ীর গতি কয়েক বার বাড়ানো হয়েছে। যেমন ধরুন, বিশ বছর আগে পেইচিং থেকে সাংহাই যেতে প্রায় ২১ ঘন্টা। কিন্তু এখন মাত্র ১১ ঘন্টা। আগামী দশ বছরের মধ্যে পেইচিং থেকে সাংহাই যেতে মাত্র ৭ ঘন্টার সম্ভবনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেলগাড়ী চীনা মানুষের প্রধান যানবাহন। কোর জায়গায় গেলে রেলগাড়ীতে চড়া নিরাপদ মনে করা হয়।

ঢাকা জেলার শ্রোতা আবু ছিদ্দিক তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের জাতীয় ফুল আর পাখি কি?

শ্রোতা বন্ধু, এর আগে আরও কয়েক জন শ্রোতা একই প্রশ্ন করেছেন। দু:খের ব্যাপার হল, এখন পযন্র্ত চীনের জাতীয় ফুল আর পাখি নিবার্চিত হয়নি। হয়তো সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের প্রশ্ন উঠবে কেন চীনে জাতীয় ফুল আর পাখি নেই। উত্তরে বলছি, চীন একটি বিশাল দেশ। চীনের স্থলভাগের মোট আয়তন ৯৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। চীনে ২৩টি প্রদেশ , ৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ৫টি কেনদ্রীয় শাসিত শহর আছে। সুতরাং চীনে জাতীয় ফুল ও পাখি নিবার্চন করা সত্যিই একটি কঠিন ব্যাপার। কয়েক বছর আগে জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় ফুল ও পাখি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন মতৈক্য অর্জিত হয়নি বলে পরে এ ব্যাপার নিয়ে আর আলোচনা হয়নি। উল্লেখযোগ্য , এ ব্যাপারের উপর চীনের মানুষের বেশী কৌতুহল নেই।

নরসিংদি জেলার শ্রোতা হুমায়ুন কবীর তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের দীর্ঘতম নদীর নাম কি? উত্তরে বলছি, চীনের দীর্ঘতম নদীর নাম ছাংজিয়াং অথবা ইয়াংসি নদী। ইয়াংসি নদী পৃথিবীর তৃতীয় দীর্ঘতম নদী। ইয়াংসি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৬৩০০ কিলোমিটার। শাংহাই, সানজিং, উহান এবং ছোংছি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে সংযুক্ত করে একটি প্রধান শিরাপথের মতো ইয়াংসি নদী প্রবাহিত।

দিনাপুর জেলার শ্রোতা দিলীপ দেবনাথ তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, সি আর আইএর বাংলা বিভাগে কর্মরত কমর্চারীরা কথায় বাংলা ভাষা শিখেছেন?

উত্তরে বলছি, এখন বাংলা বিভাগে ১৩ জন কর্মচারী আছে। এদের মধ্যে ৯জন ২০০৪ সালে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা চীনের তথ্য মাধ্যম বিশ্ববিদ্যায়ের স্নাত্তক। কিন্তু তাঁরা ২০০২ সালে বাংদেশে দশ মাসের পড়াশুনা ছিল। ২ জন বাংলাদেশে পড়াশুনা করেছেন। বাকী ১ জন বতর্মানে বাংলা বিভাগে শিখছেন। বাংলা বিভাগের দুজন বাংলী বিশেষজ্ঞ এবং বাংলা বিভাগের প্রবীন কর্মচারী বাই কেই ইয়ান কাকে পড়াচ্ছেন। এই ছাত্র বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার আগে অন্য বিষে শিখেছেন। এখানে উল্লেক করতে হবে যে, চীনে যত জন বাংলা ভাষা জানেন তারা সবাই কমপক্ষে একবার বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বতর্মানে চীনের তথ্য মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫জন ছাত্র-ছাত্রী বাংলা ভাষা শিখছেন। ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে কয়েকজন সম্ভাবত বাংলা বিভাগের নতুন কমর্চারী হতে পারে।

ভারতের বারদামান জেলার শ্রোতা আবু নাসের মনিরুজ্জামাল তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, কোন সালে ভারত আর চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরে বলছি, ১৯৫০ ৪ এপ্রিলে দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত হল প্রথম অ-সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চীনের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা হয়। চীন ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী সুদীর্ঘকালের । ১৯৫৪ সালে দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে সফর বিনিময় বাস্তবায়িত হয়। দু'দেশের শীর্ষ নেতাদের যৌথ প্রস্তাবে বিশ্ববিখ্যাত শান্তিপূর্ণ পঞ্চশীর নীতি বের হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন আর ভারতের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হবে। চীন আর ভারত দু'টো প্রতিবেশী দেশ। সুতরাং দু'দেশের মধ্যে আদান-প্রদান আরও জোরদার হওয়া উচিত।

বগুড়া জেলার শ্রোতা আলতাফ হোসেন তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনে কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি আছে? সে সব সংখ্যালঘু জাতি চীনের কোন কোন জায়গায় বসবাস করে? উত্তরে বলছি, চীন একটি জাতিবহুল দেশ। চীনে ৫৬টি জাতি বাস করে। চীনের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। এর মধ্যে শতকরা ৯৪জন হান জাতিভুক্ত। হান জাতি ছাড়া আরও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতি আছে। স্বাধীন ও সমান জাতিসমূহের একটি মহাপরিবারে চীনের সবকটি জাতি ঐক্যবদ্ধ। কোনো জাতির লোকসংখ্যা যাই হোক না কেন, অথবা যেখানেই তারা বসবাস করুক না কেন, প্রতিটি জাতিই অন্যসব জাতির সমকক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে সক্রিয় অংশ নেয়। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর অনেক প্রতিনিধি আছেন, চীনা কমিউনিষ্ট পাটিতে ও গণসরকারে আছেন সংখ্যালঘু জাতিভূক্ত নেতৃস্থানীয় ক্যাডারা। প্রতিটি জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোকে আর চাহিদাকে রাষ্ট্র পুরোপুরি বিবেচনার মধ্যে রাখে। রাষ্ট্র প্রতি জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেক করতে হবে যে, বিভিন্ন জাতির ভাষাগুলোকে সরকারীভাবে উত্সাহ দেওয়া হয় ও লালন করা হয়।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China