v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
মঙ্গোলিয় জাতির কবি সি মু রোং
2009-08-12 14:58:04

আজকের অনু্ষ্ঠানে তাইওয়ানের বিখ্যাত মঙ্গোলিয় জাতির কবি সি মু রোংয়ের কাহিনী আপনাদের বলবো আমি ফোং সিউ ছিয়েন । গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরেই কবি সি মু রোনের খ্যাতি ছিল খুব বেশি । তার লেখা মমতাপূর্ণ কবিতা এক প্রজন্মের মানুষের মন প্রভাবিত করেছিল । যদিও মঙ্গেলিয় জাতির একটি পরিবারে সি মু রোনের জন্ম , তবে তিনি অন্তর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের তাইওয়ানে বড় হয়েছেন । গত দশ-বারো বছরে তিনি তার জন্মস্থান অন্তর্মঙ্গলিয়ার যাযাবর জাতির সংস্কৃতি অন্বেষণের চেষ্টা করছেন । সম্প্রতি প্রকাশিত তার দুটি বইতে মঙ্গোলিয়া জাতির প্রতি তার মমতা ও আন্তরিকতার দিকই প্রকাশিত হয়েছে।

গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে চীনের যুবকযুবতীরা সি মু রোনের ' একটি ফুল ফোটা গাছ ' নামে একটি কবিতা খুব পছন্দ করতেন । কবিতায় বলা হয়েছে ,আমি চাই তুমি আমাকে দেখবে -- আমার সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তে । এ জন্য আমি বুদ্ধদেবের সামনে পাঁচ শ' বছর প্রার্থনা করেছি , বুদ্ধ দেবের দোয়ায় আমাদের জীবন সুখী হবে । সেই সময়ের যুবকযুবতীরা সি মু রোনের কবিতা আবৃত্তি করে প্রেমিক প্রেমিকাকে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতেন ।

সি মু রোনের রচিত বইয়ের সম্পাদক ,সাংহাই শিল্পকলা প্রকাশনালয়ের কর্মী ছেন সিয়েন ফা বলেন , সি মু রোনের রচিত কবিতা ও প্রবন্ধ থেকে পাঠকরা নিজের প্রয়োজনীয় মানসিক শান্তি পাবেন । তার রচিত কবিতাগুলো যৌবন , আন্তরিকতা , প্রেম ও জীবনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে তার অনুভূতি যুবসমাজের মনের চাহিদা মেটাতে পারে । আধুনিক সমাজে সবাই বৈষয়িক জীবনের জন্য ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি মনের শান্তি পাওয়ারও চেষ্টা করেন । সি মু রোনের কবিতা এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সাহায্য করে ।

গত শতাব্দীতে সি মু রোনের লেখা কবিতাগুলোতে প্রেম ও ভালোবাসা ছাড়া জন্মভূমি ও আপনজনের প্রতি নিজের মমতা প্রকাশিত হয়। চীনের মূলভূভাগের মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্য বইতে সি মু রোনের জন্মভূমি সম্পর্কিত একটি কবিতা রয়েছে । ' সিয়ান ছিউ ' নামে এ কবিতায় বলা হয়েছে , জন্মভূমি ত্যাগ করার পর জন্মভূমির প্রতি স্মরণের রেশ যেন বার্ষিক রিংহীন গাছের মতো চির সবুজ হয়ে থাকবে । জন্মভূমির টানে সি মু রোন গত বিশ বছর ধরে অক্লান্তভাবে তার জন্মস্থান—উত্তর চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমি ও মরুভূমির সংস্কৃতি অন্বেষণ ও গবেষণা করেছেন ।

সি মু রোনের বাবা মা দুজনই মঙ্গোলিয় জাতির অভিজাত পরিবারের সন্তান । নিয়েছেন । ১৯৪৩ সালে চীনের জাপ-আক্রমণ যুদ্ধের সময় চীনের ছুংছিং শহরে সি মু রোনের জন্ম । ছোট বেলায় তিনি বাবা-মার সঙ্গে চীনের নানচিং , শাংহাই ও হংকংয়ে বাস করতেন । ১৯৫০ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে তাইওয়ানে বসবাস করতে শুরু করেন । সি মু রোন বলেন , বাবা-মা ও নানী সব মঙ্গোলিয় জাতির লোক বলে অন্তর্মঙ্গলিয়ায় জন্ম না হলেও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মঙ্গোলিয় ভাষায় কথা বলতেন । পরে তিনি তাইওয়ানে ছিলেন বলে নিজের ওপর মঙ্গোলিয়া জাতির প্রভাব ধীরে ধীরে কমে যায় । ১৯৮৯ সালে সি মু রোন জন্মস্থান পরিদর্শনের জন্য অন্তর্মঙ্গোলিয়া যান ,সেই বছর সি মু রোনের বয়স ছিল ৪৬ বছর । তখন তার মা মারা গেছেন , তার বাবা জার্মানীতে ছিলেন । সে বছরের জন্মভূমি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে সি মু রোন বলেন , ১৯৮৯ সালের আগষ্ট মাসে আমি বাবার জন্মস্থানে গিয়েছি । আশ্চর্যের ব্যাপার হল এ জায়গায় আমি কখনো যাইনি , তবে জায়গাটি যেন চেনা চেনা মনে হয়। ট্রেন ও গাড়িতে চান পেই শহর অতিক্রমের সময় আমি বিশাল তৃণভূমি দেখেছি । ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত তৃণভূমির ঘাস দেখে সি মু রোন মুগ্ধ হন , কারণ এ দৃশ্য তিনি স্বপ্নে দেখেছেন । জন্মভূমির প্রথম যাত্রা সত্যিই অবিস্মরণীয় । তাইওয়ানে ফিরে গিয়ে তিনি জীবনের প্রথম জন্মভূমি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনার আগ্রহ দমন করতে না পেরে ' আমার বাড়ি মালভূমিতে ' নামে একটি বই লিখেছেন । বইতে সি মু রোন তার স্বপ্নের জন্মভূমির সৌন্দর্য্য ও সমৃদ্ধি সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন । তিনি তার বইতে জন্মভূমিকে তার হৃদয়ের তীর্থস্থান বলে উল্লেখ করেছিলেন। তখন থেকে সি মু রোন প্রতি বছর একাধিকবার অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় যান । তিনি বন , মরুভূমি ও তৃণভূমিতে বসে বসে প্রবন্ধ ও ডাইরী লিখেন এবং ছবি তোলেন । প্রতিবারই তিনি সেখানে অনেক সময় কাটান । সি মু রোন তৈলচিত্র আঁকতেও পছন্দ করেন । তাই তিনি বর্ণ দিয়ে তৃণভূমির দৃশ্য বর্ণনা করতে পারেন , তবে তিনি মনে করেন , তিনি তৃণভূমির মনোরম দৃশ্য পুরোপুরিবাবে প্রকাশ করতে পারেন না , কারণ তিনি তৃণভূমির সংস্কৃতি পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারেন নি । তিনি বলেন , আমি অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় গিয়ে হাঁটতে পছন্দ করি । সেখানে গিয়ে তৃণভূমি , বন অঞ্চল ও মরুভূমিতে বিরামহীনভাবে হাঁটাহাটি করা এবং মনের অনুভূতি লিখে রাখা আমার প্রধান ও প্রিয় কাজ । ক্লান্ত হলে আমি মাটিতে শুয়ে শুয়ে নিজের মনের কথা রেকর্ডিং করতাম এবং ফিরে যাওয়ার পথে গাড়িতে নিজের রেকর্ডিং শুনতাম। কষ্ট হলেও সি মু রোন নিজের মূল খোঁজার প্রক্রিয়ায় আনন্দ পেয়েছেন । তিনি মনে করেন

তার জন্য গ্রীষ্মকালে সীমাহীন তৃণভূমিতে হাটার চেয়ে আনন্দের ব্যাপার আর নেই । প্রতিবার জন্মস্থান অন্তর্মঙ্গোলিয়া ফিরে গিয়ে ছোটখাটো ব্যাপারেও সি মু রোন মুগ্ধ হন এবং তখন তার চোখে পানি এসে যায় । সি মু রোনের মঙ্গোলিয় ভাষার নাম হল মু লুন , এর অর্থ হল বড় নদী । পাঠকদের জন্য বইতে অটোগ্রাফ দেয়ার সময় তিনি এই নাম লিখতে পছন্দ করেন। সম্প্রতি চীনের মূলভূভাগে সি মু রোনের ' স্বপ্নের মাটি' ও ' মঙ্গোলিয় ক্লাস' নামে দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে । এ প্রসঙ্গে সি মু রোন বলেন , ' স্বপ্নের মাটি ' লেখার উদ্দেশ্য হল জন্মভূমির প্রতি নিজের মমতা প্রকাশ করা এবং মঙ্গোলিয় জাতির সংস্কৃতি অন্বেষণ করা । ' মঙ্গোলিয়া ক্লাস ' লেখার উদ্দেশ্য হল মঙ্গোলিয় জাতি সম্পর্কে আমার অনেক অজানা জিনিসের কথা তুলে ধরা । আমাকে এ সম্পর্কে আরো বেশি জানা দরকার । তৃণভূমিতে দেখা একজন সাধারণ পশুপালকও আমাকে অনেক কাহিনী বলতে পারেন এবং আমার জন্য ক্লাস নিতে পারেন । আমার জন্য অন্তর্মরঙ্গোলিয়া একটি নতুন বিশ্ব । এ বছর সি মু রোন চতুর্থ বারের মতো তার এলাকা আলাসান যাবেন । সেখানে তিনি ভালো করে মরুভূমিতে পাথর দিয়ে তৈরী ভাস্কর্য দেখবেন । পাথর দিয়ে তৈরী ভাষ্কর্য সত্যিই একটি অত্যন্ত সুন্দর শিল্পকর্ম । সি মু রোনের দুঃখ হল বাবার সঙ্গে মঙ্গোলিয় ভাষা নিয়ে মতবিনিময় করার সুযোগ তিনি পান নি । বাবা মরে গেছেন বলে এ ধরনের দুঃখ চিরদিনের মতো তার মনে জেগে থাকবে ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China