হংকংয়ের ২০তম বই মেলা ২২ জুলাই হংকংয়ের সম্মেলন ও প্রদর্শন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে। এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি বই মেলা হিসেবে এবারের হংকং বই মেলা ইতিহাসের বৃহত্তম। ২০টি দেশ ও অঞ্চলের ৫শোরও বেশি সংস্থা এবারের বই মেলায় অংশ নিয়েছে। হংকং বই মেলা হল চীনা ভাষার বই বিশ্বে প্রচারের একটি জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে এবারের হংকং বই মেলা সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।
হংকং বই মেলা হল হংকংয়ের বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বই মেলা। ১৯৯০ সাল থেকে হংকং বই মেলা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব চীনা ভাষার বই প্রচারের প্ল্যাটফর্মে পরিনত হয়েছে। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১৯৯০ সালের ২লাখ থেকে বেড়ে গত বছর প্রায় ৮লাখ ৫০হাজারে দাঁড়িয়েছে।
চীনের অভ্যন্তরভাগের ১শোরও বেশি প্রকাশনালয়ের ১৩হাজারেরও বেশি বই ৭দিনব্যাপী এবারের হংকং বই মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে। চীনের জাতীয় সংবাদ প্রকাশনালয়ের মহা পরিচালক লিউ বিনচিয়ে এবারের বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, চীনের অভ্যন্তরভাগ বরাবরই ইতিবাচকভাবে হংকং বই মেলায় অংশ নিচ্ছে। যাতে চীনা ভাষার বই বিশ্বের সবার কাছে প্রদর্শন করা যায়। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'চীনের অভ্যন্তরভাগের প্রকাশনালয় ও পাঠকগণ সবসময়ই হংকংয়ের বই বাজারের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে। ১৯৯০ সাল থেকে অভ্যন্তরভাগের প্রকাশনালয় প্রতি বারই হংকং বই মেলায় অংশ নিচ্ছে। এবারের বই মেলায় অংশগ্রহণকারী অভ্যন্তরভাগের প্রকাশনালয়ের সংখ্যা আগের চেয়ে আরো বেশি। চীনের প্রকাশনালয় সংস্থা, চীনের আন্তর্জাতিক প্রকাশনালয় কোম্পানি এবং চিয়াংসু ফোনিক্স প্রকাশনালয় কোম্পানিসহ পেইচিং ও সারা চীনের ১শোরও বেশি বিখ্যাত্ প্রকাশনালয় এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে। আমরা আশা করি, হংকং বই মেলায় চীনের প্রকাশনা মহলের সুদৃঢ় অবস্থান হংকংয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বাজার ব্যবসার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের ঘরে ঘরে চীনের সংস্কৃতিকে নিঃসংকোচে পৌছে দেবে।'
তাইওয়ানের প্রদর্শনী স্টলটি ৯শো বর্গ মিটারের। এতে ১শো প্রদর্শন যোগ্য কন্টেইনার রয়েছে। এবারে বই মেলায় তাইওয়ানের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি। মানবজাতির অগ্রগতি নামের তাইওয়ানের একটি প্রকাশনালয় কোম্পানি এ পর্যন্ত ১৮বার হংকং বই মেলায় অংশ নিয়েছে। এ কোম্পানির মহা পরিচালক কুই থাইহুয়া বলেছেন, হংকং বই মেলা চীনের অভ্যন্তরভাগ ও তাইওয়ানের প্রকাশনা মহলের মধ্যে সমঝোতা বাড়ানো ও দু'তীরের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'এখন দু'তীরের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হয়েছে। দু'তীরের যোগাযোগ আরো বেশি বেড়েছে। অভ্যন্তরভাগ তাইওয়ানকে আগের চেয়ে আরো বেশি জানতে পারবে। যদিও হংকং বই মেলায় আমাদের অভ্যন্তরভাগের ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ হয় নি, তবুও কিছু যোগাযোগ হয়েছে বলতে হবে। এটি হচ্ছে বই'র মাধ্যমে যোগাযোগের একটি উত্তম সুযোগ।'
হংকংয়ের বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এবারের বই মেলায় বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে। হংকংয়ের বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরোর প্রচার বিভাগের পরিচালক লুও বোসেন বলেছেন, 'এ মেলায় হংকংয়ের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে এবং এতে প্রত্যকের নিজের পছন্দের বই রয়েছে। হংকংয়ে রাজনীতি , বাদু স্টার ও নাটক বিষয়ক বই অনেক জনপ্রিয়। হংকংয়ের নাগরিকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বই পড়তে আগ্রহী। কয়েক দিন আগেও বই প্রেসীরা সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে বই মেলার টিকিট কিনেছে। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, হংকংয়ের নাগরিকরা বই পড়তে আগ্রহী।'
হংকং বই মেলা এখন হংকং পর্যটনের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। হংকংয়ের দর্শক ছাড়াও, হংকং বই মেলায় অভ্যন্তরভাগ, তাইওয়ান ও ম্যাকাও'র অসংখ্য দর্শককে আকর্ষণ করেছে। হংকং বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরো গত মে মাস থেকে পেইচিং, সাংহাই, কুয়াংচৌ ও তাইপেইতে এ মেলার ওপর প্রচার কাজ চালিয়েছে। এছাড়াও, হংকং কুয়াংতুং ও তাইওয়ানের ১৫টি পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে হংকং বই মেলার বৈশিষ্ট্যময় পর্যটনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। সফলভাবে হংকং বই মেলা পর্যটনের সঙ্গে এখন সংযুক্ত হয়েছে।
হংকংয়ের বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত বছর ৭হাজারেরও বেশি অভ্যন্তরভাগের পর্যটক হংকং বই মেলায় পরিদর্শন করেছে। এ বছর এ পরিসংখ্যান আরো বেশি হবে। এছাড়াও, তাইওয়ানের পর্যটক আকর্ষণের জন্য হংকং বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরো প্রথমবারের মত তাইওয়ান ছেংফিং বই দোকানের সদস্যদেরকে বই মেলার সেজন্য টিকিট প্রদান করেছে।
প্রায় ৪শো চীনা ভাষার প্রকাশনালয় ছাড়াও, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ডেনমার্ক, ভারত ও পাকিস্তানের মাত্র ৫০টি প্রকাশনালয় এবারের বই মেলায় অংশ নিয়েছে। যদিও এসব দেশের অংশগ্রহণকারী প্রকাশনালয়ের পরিসংখ্যান বেশি না, তবুও তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের বই হংকং ও এশিয়ার দর্শকদেরকে আকর্ষণ করেছে। এটি বিশ্ব ব্যাংকিং সংকটের পরেও হংকং বই মেলায় অংশ নেয়ার অন্যতম কারণ। উত্তর ইউরোপের শিশুদের বই প্রচারের দায়িত্ব পালনকারী স্টেফেন জেনসেন এ সম্পর্কে বলেছেন, 'আমাদের প্রতিটি বই'র আসল দাম ছিল ৬০ হংকং ডলার। কিন্তু বই মেলায় প্রতি বই'র দাম কমিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র ৪৮ হংকং ডলার। সেজন্য শিশুরাই আমাদের বই কিনেছে বেশি । আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ব ব্যাংকিং সংকট আমাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেল।'
জানা গেছে, বই প্রদর্শনী ছাড়াও এ বারের বই মেলায় ২শোরও বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা মহলের ফোরাম, অভ্যন্তরভাগ, হংকং ও তাইওয়ানের লেখকদের আলোচনা সভা, নতুন বইয়ের প্রচার, বিখ্যাত্ শিল্পীর শিল্পকম প্রদর্শন ও হংকং বই মেলার ২০ বছরের কার্যক্রমের পর্যালোচনা অর্ন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
২০ বছরে এখন হংকং বই মেলা চীনা ভাষার বিশ্বে অংশগ্রহণকারী সবচেয়ে বড় একটি বই মেলায় পরিণত হয়েছে। হংকং বই মেলা অভ্যন্তরভাগ, হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান এবং আরো অনেক অঞ্চলের চীনা ভাষায় পড়াহুনাকারীদেরকে আরো সমৃদ্ধ বই সরবরাহ করবে। এর মাধ্যমে চীনের সংস্কৃতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাড়িয়ে যাবে।
ছাই ইউয়ে |