বন্ধুরা , আজকের অনুষ্ঠানে চীনের একজন নামকরা চিত্রশিল্পীর কাহিনী শোনাবো আমি ফোং সিউ ছিয়েন । এ চিত্রশিল্পীর নাম চিন সাং ই । এ বছর তার বয়স ৭৫ বছর । চীনে চিত্রশিল্পী মহল চিন সাং ইকে তৈলচিত্র শিল্পীর প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করেন । তাছাড়া চিন সাং ই একজন অভিজ্ঞ চারুকলা শিক্ষক । চিন সাং ই দীর্ঘকাল চীনের চিত্রশিল্পী সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন , এখন তিনি এ সমিতির অবৈতনিক চেয়ারম্যান ।
১৯৩৪ সালে মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের চিয়াও চো শহরে চিন সাং ইর জন্ম । প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় তিনি বাচ্চাদের ছবির বইয়ের ছবি অনুকরণ করতে পছন্দ করতেন এবং ভালো আঁকতে পারতেন । তার আঁকা ছবি সুন্দর বলে ক্লাসের সহপাঠীরা তাকে কাগজ দিয়ে ছবি আঁকার জন্য অনুরোধ করতো , চিন সাং ই সহপাঠীর অনুরোধ কখনো প্রত্যাখ্যান করেন নি । এটাই ছিল চিন সাং ইর প্রথম ছবি আঁকার অভিজ্ঞতা ।
১৯৪৯ সালে চিন সাং ই পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিংয়ের একটি সরকারী চারুকলা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন ,এ বিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন চীনের নামকরা চিত্রশিল্পী সুই পেই হোং । নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর এ বিদ্যালয় চীনের কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটে পরিণত হয় । এ ইন্সটিটিউট চীনের চারুকলা শিল্প শিক্ষাদানের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । চিন সাং ই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন , স্নাতক হওয়ার পর তিনি এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দান করেন । পরে চিন সাং ই দীর্ঘদিন এ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন ।
১৯৫৫ সালে চিন সাং ই তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ ম্যাস্কিমভের ট্রেনিং কোর্সে তৈলচিত্র শিখেন । এ সম্পর্কে চিন সাং ই বলেন ,আমি তৈলচিত্র পছন্দ করি । ভালো তৈল চিত্র আঁকার জন্য আমি তৈলচিত্রের ভিত্তি সুন্দর স্কেচ ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি । ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ম্যাক্সিমভের শিক্ষা কোর্স শেষ হওয়ার দীর্ঘ আট বছরে আমি স্কেচ ছবির তত্ত্ব ও কৌশল শেখার চেষ্টা করেছি । সত্তরের দশকের শেষ দিকে আমি ইউরোপে গিয়ে অনেক যাদুঘর পরিদর্শন করেছি । ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এসে আমি মানুষের প্রতিকৃতি আঁকার সময় মুখের ভঙ্গি ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করার কৌশল আয়ত্ত করেছি এবং মনের ভাব ছবিতে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি ।
তৈলচিত্র বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বিদেশ থেকে আসে । সুই পেই হোংসহ চীনের প্রথম প্রজন্মের চিত্রশিল্পীর অক্লান্ত চেষ্টার ফলে তৈলচিত্র চীনে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবে চীনের বেশির ভাগ তৈলচিত্র শিল্পী রাশিয়ার শৈলী অনুসারে ছবি আঁকতেন । সান চিং ই চীনের তৃতীয় প্রজন্মের চিত্রশিল্পীর প্রতিনিধি । চীনে মুক্তদ্বার নীতি কার্যকর করার পর তিনি অনেক দেশের যাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি মানুষের প্রতিকৃতির ছবি আঁকার সময় তার আঁকা ছবিতে চিত্রশিল্পীর অনুভূতি ও ধারণা প্রকাশের চেষ্টা করেন । তিনি বলেন , আমি আশা করি , মানুষের প্রতিকৃতির ছবি আঁকার সময় সমাজের প্রতি আমার ধারণা ও আমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারকো । ১৯৮৩ সালে সান চিং ই ' তাজকিস্তানের নতুন বউ 'সহ মানুষের প্রতিকৃতির অনেক তৈলচিত্র আঁকেন । চারুকলা শিল্প মহল মনে করেন ,এ সব ছবি চীনের তৈলচিত্রের নতুন ক্লাসিসিজমের দ্বার উন্মুক্ত করেছে এবং তখনকার চিত্রশিল্পীদের মধ্যে ক্লাসিকাল ছবি আঁকার জোয়ার সৃষ্টি করেছে ।
চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারীর মহাপরিচালক ফান দি আন বলেন , এ সব ছবিতে চিত্রশিল্পীরা তৈলচিত্রের ভাষা দিয়ে চীনাদের মানসিক অবস্থা প্রকাশ করেছেন । এতে চীনা জনগণের , বিশেষ করে চীনের বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘুজাতির অধিবাসীদের মনের আনন্দ ও স্বপ্ন ফুটে উঠেছে । চিন সাং ইকে এ সব চিত্রশিল্পীর প্রতিনিধি বলা যায় । গত শতাব্দীর আশির দশকে এ সব নতুন ক্লাসিসিজমের তৈলচিত্র চীনে তৈলচিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে ।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে চিন সাং ইতিহাসের নামকরা ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতির ছবি আঁকতে শুরু করেন । ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতির ছবি আঁকার সময় তিনি চীনের ঐতিহ্যিক ছবি আঁকার পদ্ধতির সঙ্গে তৈলচিত্র পদ্ধতি সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন । সমালোচকদের ধারণা , তার আঁকা ছবিতে চীনাদের মমতা ও চীনের সংস্কৃতির আভাস পাওয়া যায়।
চীনের কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে চিন সাং ই কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটে শিক্ষার বিষয়গুলোর ওপর সংস্কার চালিয়েছেন । গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে ইন্সটিটিউটে ঐতিহ্যিক চীন চিত্র , তৈলচিত্র , দেয়াল চিত্র , ভাস্কর্য ও খোঁদাইকর্ম বিভাগ ছিল , এখন এ ইন্সটিটিউটে চারটি বড় বিভাগ রয়েছে , এ চারটি বিভাগ হল ছবি আঁকা , ডিজাইন , স্থাপত্য ও সংস্কৃতি । সংস্কারের পর এ ইন্সটিটিউট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিভিন্ন বিনিময় কর্মসূচীতে অংশ নেয় এবং নতুন ধরনের দক্ষ কর্মী প্রশিক্ষণ দিয়েছে ।
চিন সাং ই লক্ষ্য করেছেন , অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থান চারুকলা গ্যালারী প্রতিষ্ঠা করে । তবে যাদুঘরে প্রদর্শনযোগ্য মানসম্পন্ন ছবির সংখ্যা কম । তাই গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে সান চিং ই নিজের আঁকা ছবি জাতীয় চারুকলা গ্যালারীকে উপহার দেন এবং কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষকদের প্রতি নিজের আঁকা ছবি গ্যালারীকে উপহার দেয়ার আহ্বান জানান । সম্প্রতি তিনি জাতীয় চারুকলা গ্যালারীকে তার আরও ৩৯টি ছবি উপহার দিয়েছেন ।
(চিন সাং ই'র সাহিত্যিক)
মে মাসে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ,চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারী ও কেন্দ্রীয় চারুকলা ইন্সটিটিউটের যৌথ উদ্যোগে চিন সাং ইর উপহার দেয়া চিত্রের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । জাতীয় চারুকলা গ্যালারীর মহাপরিচালক ফান দি আন বলেন ,বাজারে অনেকে চিন সান ইর আঁকা ছবি কেনার চেষ্টা করছেন ,চিত্র ব্যবসায়ীরাও তার ছবি খুঁজছেন। তবুও চিন সাং ই' তার সবচেয়ে উচ্চ মানের ছবি জাতীয় যাদুঘরকেই উপহার দিয়েছেন । উপহার দেয়া চিন সান ইর আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে ' তাজকিস্তানের নতুন বউ ' অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । এছবি জাতীয় গ্যারারীর অনেক প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে ,তাকে চীনের জাতীয় গ্যারালির সবচেয়ে মূল্যবান তৈজসপত্র বলা যায় ।
(চিন সাং ই'র সাহিত্যিক) |