v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সাংহাই বিশ্ব মেলার স্বেচ্ছাসেবকদের জানুন
2009-08-04 20:40:15
এখন থেকে ২০১০ সালের সাংহাই বিশ্ব মেলা শুরু হতে মাত্র একবছরেরও কম সময় বাকি । বিশ্ব মেলার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের কাজ গত ১ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে । এ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি লোক নাম তালিকাভূক্ত করেছেন । চীনে এ বৃহত্তম অর্থনৈতিক শহরের আবাল-বৃদ্ধবণিতাসহ সবাই স্বেচ্ছাসেবক হয়ে সাংহাই বিশ্ব মেলায় নিজেদের অবদান রাখতে চান ।

আপনারা যে গানটি শুনছেন তা হল "আপনার কাছে থাকব" শিরোনামে সাংহাই বিশ্ব মেলার স্বেচ্ছাসেবকদের গান । গানটির নামের মতোই সাংহাই বিশ্ব মেলার স্বেচ্ছাসেবকরা শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সবার পাশে থাকবে ।

সাংহাই বিশ্ব মেলা স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বেশির ভাগই হলো যুব-ছাত্রছাত্রীরা । "৪ মে যুব দিবস" এদিন সাংহাই কিশোরকিশোরী উ2ন্নয়ন তহবিল সংস্থার কর্মীরা সাংহাইয়ের ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ৩০০০টি জরীপ পত্র বিলি করে । জরীপের ফলাফল হল ৯২ শতাংশেরও বেশি যুবকযুবতী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাংহাই বিশ্ব মেলায় সেবাদান করতে আগ্রহী । সাংহাই ২ নম্বর শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইয়ে সিয়াওছেন তাদের মধ্যে একজন । সহপাঠীদের মতোই তিনি বিশ্ব মেলার ওপর খুবই মনোযোগ দিচ্ছেন এবং স্বেচ্ছাসেবক হতে আগ্রহী । তিনি বলেন, আমি খুব আবেগে আপ্লুত । আমি সবসময় বিশ্ব মেলার জন্য নিজের কিছু প্রচেষ্টা প্রদান করতে চাচ্ছি । লেখাপড়ার সময় আমি বিশ্ব মেলার ওপর নজর রেখেছি এবং স্বেচ্ছাসেবকের অনেক তত্পরতায় অংশ নিয়েছি । বিশ্ব মেলার জন্য আরও মজবুত ভিত্তি স্থাপন করে আরও ভালভাবে বিশ্ব মেলার সেবা করতে পারবো বলে আমি আশা করি । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে । বহু ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছাসেবক হতে নাম লিখে দিয়েছেন । স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা সীমাবদ্ধ থাকার কারণে কাকে নেয়া হবে বা নেয়া হবে না তা কঠিন সমস্যা । সুতরাং সবাই বাধ্য হয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হচ্ছে । তারা বিরামহীনভাবে নিজেদের গুণগতমান ও সামর্থ্য উন্নতি করার চেষ্টা করেছেন ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী এবারের বিশ্ব মেলার জন্য এক লাখ ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে । এর মধ্যে ৭০ হাজার হলো উদ্যান এলাকার স্বেচ্ছাসেবক । তারা উদ্যানে পর্যটক,প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলো এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে সহযোগিতা করবেন , প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করবেন এবং দোভাষীর কাজ করবেন । তাছাড়াও এক লাখ স্বেচ্ছাসেবক সাংহাই শহরের ১০০০টি স্বেচ্ছা সেবা কেন্দ্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের জন্য পরামর্শ ,দোভাষী এবং জরুরী সাহায্যের সেবাদান করবেন । অলিম্পিক গেমসের মতো সাংহাই বিশ্ব মেলার জন্য বাছাই করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হচ্ছে । স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংহাই বিশ্ব মেলার প্রস্তুতিমূলক গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক দলের নেতা ওয়াং চুংওয়েই আহবান জানিয়েছেন যে, অধিবাসীরা একটি চমত্কার ও স্মৃতি বিচলিত একটি বিশ্ব মেলা অনুষ্ঠানে নিজেদের অবদান রাখবেন বলে তিনি আশা করেন । তিনি বলেন, গোটা মানবজাতির বুদ্ধি ও স্বপ্ন আমাদের শহরে জমা হবে । সারা বিশ্ব আমাদের শহরের প্রতিটি অধিবাসীদের ওপর দৃষ্টি রাখবে । এবারের বিশ্ব মেলা বিশ্ব সভ্যতার একটি প্রদর্শনী,সবার জন্য বিশ্ব মেলা বলে আমরা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি । বিশ্ব মেলা সফল হবে কী না তা সবার প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল । বিশ্ব মেলার বৈচিত্র্য আমাদের হাতেই তৈরী হয়েছে । আমাদের প্রচেষ্টায় বিশ্ব মেলা স্মরণীয় থাকবে ।

ওয়াং চুংওয়েই জানিয়েছেন , এক লাখ ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া বিশ্ব মেলা চলাকালে লাখ লাখ অধিবাসীরা রাস্তায় রাস্তায় বা অলিগলিতে অথবা কমিউনিটিতে সাংহাইয়ের স্থিতিশীলতা,বিশুদ্ধতা ও নিরাপত্তা এবং সুষমতার জন্য নিজের অবদান রাখবেন ।

সাংহাইয়ের একটি পুরোনো আবাসিক এলাকায় ইয়াং ছুনই নামে একজন ৮২ বছর বয়সী বুড়ো বাস করেন ।১৯৯৮ সাল থেকে এপর্যন্ত ১১ বছর সময়ের মধ্যে তিনি সাংহাইয়ের রাস্তায় রাস্তায় বা অলিগলিতে প্রায় ৭০ হাজার ছবি তুলেছেন । ছবিগুলো সাংহাই শহরের অবকাঠামোর দুর্বলতাইপ্রমাণ করে । প্রাসঙ্গিক বিভাগের কর্মকর্তাকে ছবিগুলো দেখিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধানের বিষয় নিয়ে বুড়ো ইয়াং তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন ।

২০১০ সালে সাংহাই বিশ্ব মেলা শুরু হবে । সাংহাই শহরের অধিবাসী হিসেবে বুড়ো ইয়াং অনেক আগেই স্বেচ্ছাসেবকের কাজ শুরু করেছেন । তিনি প্রত্যেক দিন ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বা অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ান এবং সভ্য বিশ্ব মেলার কথা প্রচার করেন । তিনি বলেন, তিনি নিজের আন্তরিকতা দিয়ে অন্যান্যদের মুগ্ধ করেন এবং বিশ্ব মেলায় নিজের অবদান রাখবেন । তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সাংহাইর অধিবাসীদের হাতে বিশ্ব মেলা অবশ্যই সফল হবে । আমরা সাফল্যের সঙ্গে এপেকের আয়োজন করেছি । তাই এপেকের মর্মবস্তু অনুসারে সাফল্য অর্জন করতে আমরা আস্থাবান । মেলা চলাকালে ৩০ লাখ বিদেশী পর্যটকসহমোট ৭ কোটি অতিথি আসবেন । সাংহাইর অধিবাসী হিসেবে আমরা হাসিমুখে অতিথিদের স্বাগত জানাব ।

কথা আছে,একজন সফল পুরুষের পেছনে তাকে সমর্থন করার জন্য একজন মহিলাও আছেন । ইয়াং ছুনইর স্ত্রী চাও চোপিং বুড়ো ইয়াংয়ের স্বেচ্ছাসেবকের কাজে নিজের সাধ্যমতো সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন । তিনি বলেন,ইয়াং ছুনই বহু বছর আগে অবসর নিয়েছেন । স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার পর তিনি খুব ব্যস্ত থাকেন । বাড়িকে রাতে হোটেল ,দিনে রেস্তরাঁ এবং টাকাপয়সা না থাকার সময় ব্যাংক হিসেবে গ্রহণ করছেন ।

সাংহাই বিশ্ব মেলার শ্লোগান হল," বিশ্ব আপনার সামনে , আমরা আপনার পাশে থাকব । "বিশ্বাস করা যায় যে,যখন আপনি সাংহাই আসবেন তখন আপনি অনুভব করবেন সাংহাইয়ের স্বেচ্ছাসেবকদের অকৃত্রিমতা ও আন্তরিকতা । যদি আপনিও স্বেচ্ছাসেবকদের সেবাকাজে অংশ নিতে আগ্রহী তাহলে আপনি সাংহাই বিশ্ব মেলার সরকারী ওয়েবসাইট http://www.expo2010.cn-এর মাধ্যমে নাম দেন বা পরামর্শ নেন ।

অনুষ্ঠান শেষে শুনুন"আহবান"শিরোনামে বিশ্ব মেলার একটি গান । পৃথিবী আমাদের হাতে । তাকে নীল রঙে পরিণত হতে দাও,তাকে নীল রঙে পরিণত হতে দাও । শহর আমাদের কোলে । তাকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলো । আসুন, আমরা একসঙ্গে সাগরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে ভালবাসার আহবান জানাই । যাতে প্রতিটি শিশুর হাসি মুখে আর নিঃসঙ্গের ছাপ দেখা না যায় ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China