চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৬০ বছরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ প্রক্রিয়ায় জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখার বিষয়টি মৌলিক নীতি হিসেবে মেনে চলা হয়েছে। চীনের মৌলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে , নতুন সময়পর্বে নিম্ন পর্যায়ের গণতন্ত্রের অনুশীলনে জনগণের স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকটিকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হয়েছে।
৬০ বছর আগে ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান মাও জে দং তিয়েন আন মেন মহাচত্বরের প্রধান তোরণের ওপর দাঁড়িয়ে গুরু গম্ভীর কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, " চীন গণ প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় গণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ মুহুর্ত থেকে অধিকাংশ চীনা জনগণের সমর্থন প্রাপ্ত চীনের কমিউনিষ্ট পাটি ক্ষমতাসীন পাটিতে পরিণত হয়েছে এবং জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের সুত্রপাত হয়েছে ।
চীনের সদ্যজাত প্রসাশন কীভাবে সবসময় জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে যাবে ? চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই চেয়ারম্যান মাও এ বিষয়টি বিবেচনা করতে শুরু করেন। ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে চেয়ারম্যান মাও বিখ্যাত গণতান্ত্রীক ব্যক্তি হুওয়াং ইয়েন পেইয়ের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমী এ প্রসঙ্গে বর্নণা করেছে ,
হুওয়াং ইয়েন পেই বলেন, ইতিহাস সব সময় উত্থান ও পতনের মধ্যে থাকে। চেয়ারম্যান মাও বলেন, ' আমরা নতুন পথ খুঁজে পেয়েছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, জনগণ সরকারের ওপর তদারকি করলে কেবল সরকার সাবধানে প্রশাসন চালায় । সবাই দায়িত্ব গ্রহণ করলে পরেই কেবল প্রশাসনের অস্তিত্ব স্থায়ী থাকতে পারে।
চেয়ারম্যান মাও যে নতুন পথের কথা উল্লেখ করেছেন তা চীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর পরই বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের প্রথম সংবিধানের জন্ম হয়। এ সংবিধানে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে যে, চীন গণ প্রজাতন্ত্রের সমস্ত ক্ষমতা জনগণের ।
গণ কংগ্রেস ব্যবস্থা হচ্ছে চীনের মৌলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় নির্ধারন করা হয়েছে, চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সংস্থা । আইন প্রর্ণয়ন করা, দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনা বিবেচনা ও তা অনুমোদন করা, সরকার , আদালত ও অভিসংশন বিভাগের কাজ নিয়ে বিবেচনা করা বা তা অনুমোদন করা, দেশের বাজেট , নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহ বিভিন্ন দায়িত্ব চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের । গণতন্ত্রের মাধ্যমে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস নির্বাচিত হয়। সুতরাং চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস জনগণের আশা-আকাংক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম ।
চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মান ও জনগণের জীবনযাত্রার মান অপেক্ষাকৃত নিম্ন পর্যায়ে ছিল। সুতরাং, দীর্ঘকাল ধরে চীনে আইন প্রণয়নের সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকের ওপর বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া হত। গত ৩০ বছর ধরে চীনের অর্থনীতিতে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাজার অর্থনীতির ব্যবস্থা মোটামুটি নির্ধারিত হয়েছে। তা ছাড়া, অর্থনীতি বিষয়ক আইনগত বিধানও মোটামুটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম দিকে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান উ পাং কুও জনগণের জীবন-জীবিকার সঠিক নিষ্পত্তির গুরুত্ব জোরদার করেছেন। তিনি বলেন,
মানুষের স্বার্থকে শীর্ষ স্থানে রেখে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির প্রধান কাজ। আমাদের কাজকর্মে সব সময় মনোযোগ দিতে হবে যে , আইন প্রণয়ন ও তদারকির সঙ্গে সংযুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আইন প্রণয়ন জোরদার করার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজ পরীক্ষা ও পযর্বেক্ষণ করা উচিত যাতে আমাদের কাজ জনগণের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত হয়।
২০০৮ সালে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির অধিবেশনে ন'টি আইনগত প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়েছে। যেমন, " খাদ্য নিরাপত্তা আইন", " প্রতিবন্ধক নিষ্চয়তা আইন" ইত্যাদি। |