বাংলাদেশের জামালপুর জেলার শ্রোতা কামরুন নাহার শীলা তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের হোয়াংহো নদীর উত্পাত্ত কোথা থেকে? চীনের বৃহত্তম পাহাড় কোন শহরে অবস্থিত এবং এর উচ্চতা কত? এখন প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। হোয়াংহো নদী চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। তার মোট দৈর্ঘ্য ৫৪৬০ কিলোমিটার। চীনের ছিনহাই, সিছুয়ান , গানসু , সেনসি সহ কয়েকটি প্রদেশের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়। এ নদীর উত্পাত্ত ছিনহাই প্রদেশের বাইয়েন পবর্তমালা থেকে। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। চীন একটি বিশাল দেশ। সারা দেশে অজস্র পাহাড় আছে। কিন্তু যদি কোনটা বৃহত্তম পাহাড় বলতে হয় তাহলে হিমালয় পাহাড় চীনের বৃহত্তম পাহাড় হিসেবে বলা যায়। তার উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার ।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার শ্রোতা বিএম ফয়সল আহমেদ তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের প্রধান রপ্তানী জাত দ্রব্য কি কি? উত্তরে বলছি, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানীকারী দেশ। প্রতি বছর চীন থেকে নানা ধরনের জিনিজপত্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। রপ্তানী জাত দ্রব্যের মধ্যে বেশির ভাগ হল হালকা শিল্পজাত দ্রব্য । চীনের তৈরী পণ্যদ্রব্য বিশ্বে খুব জনপ্রিয়। বলাবাহুল্য, বতর্মানে বৈশ্বিক মন্দার কারণে রপ্তানীর পরিমাণ ইতোমধ্যে কমে গেছে । আমার বিশ্বাস , বিশ্বের অর্থনীতি পুর্নজীবিত হওয়ার পর চীনের রপ্তানী পরিমাণ আগের মতো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের রংপুর জেলার শ্রোতা মো: ছাইদুর রহমান ভূইয়া তার চিঠিতে দুটো প্রশ্ন করেছেন। তার প্রথম প্রশ্ন হলো: পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীন সরকারের মোট কত টাকা ব্যয় হয়েছিল এবং কত টাকা আয় হয়েছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো: তাইওয়ান কি অতীতে চীনের শাসনে ছিল? এখন প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮ সফরতার সঙ্গে আয়োজন করা হয়। পেইচিং অলিম্পিক আয়োজন করতে চীন সরকার ঠিক কত টাকা ব্যয় করেছে এ সর্ম্পকে সরকারীভাবে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে গত বছর পেইচিংয়ে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক তথ্যমাধ্যম ফোরামে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটির কার্যনির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান চিয়াং শিও ইয়ু জানিয়েছেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের আয়োজনে ১৯৪১ কোটি রেন মিন পি অর্থাত ২৩৪.৭ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে । আয় করা হয়েছে ১৩ কোটি রেন মিন পি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে , পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে যে সুপ্ত বাজার উন্মোক্ত করা হয়েছে তা ১৩ কোটি রেন মিন পির আয়ের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কথায় , পেইচিং অলিম্পিক গেমসে কত টাকার আয় হয়েছে তা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে চীনাদের মনের দিগন্ত প্রসারিত হয়েছে। তা ছাড়া, নানা ধরনের বাজার উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, পেইচিং অলিম্পক গেমস আয়োজনের মাধ্যমে চীনা জনগণের চেতনা বেড়েছে।
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার শ্রোতা মামুন রহমান তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের মাধ্যমিক স্কুলে কী কী বিষয় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয়? আসলে আগে বেশ কয়েক জন শ্রোতা একই প্রশ্ন করেছে। এখন এ সম্পর্কে আবার বর্ননা করবো। চীনে মাধ্যমিক স্কুল বলতে নিম্ন আর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বুঝায়। সপ্তমশ্রেনী থেকে নবম শ্রেনী পযর্ন্ত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল। দশম শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পযর্ন্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। এখানে উল্লেখ্যচীনে নিম্নমাধ্যমিক স্কুল পযর্ন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক স্কুল থেকে পাশ করার পর ছাত্র-ছাত্রীরা সরাসরি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভূর্তি করতে পারে। তবে যারা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে চান তাদেরকে ভতির্পরীক্ষা দিতে হয়। প্রত্যেক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ভতির্র মানদন্ড ভিন্ন। ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা দেওয়ার আগে তিনটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বাছাই করার সুযোগ আছে। পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী কোনটা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভতি হতে পারবে তা নিধারর্ন করা হয়। সাধারণত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে উত্তীণ ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীউচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পায়। যারা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত হতে পারে না তারা পেশাদার মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে পারে। নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল আর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে পড়ার বিষয় প্রায় একই। অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের বিষয় আরও কঠিন। এর আগে বলেছি যে চীনে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে তিন বছরের পড়াশুনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। চীনের নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে সাধারণত চীনা ভাষা, ইংরেজী ভাষা, ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা, গণিত বিদ্যা, ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।
রাজশাহী জেলার শ্রোতা মাসুম আলি তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে বন সম্পদ কেমন? উত্তরে বলছি, মাটি আর জলবায়ুর বিভিন্নতার কারণে চীনে অজস্র ধরনের গাছ জন্মায়। উত্তর-পূর্ব চীনে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম চীনে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে ও দক্ষিণ চীনে চারটি প্রধান বনাঞ্চল অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে উত্তর-পূর্ব চণের বনাঞ্চল আয়তনে বৃহত্তম, এবং সবচেয়ে বেশি কাঠ সেখান থেকে পাওয়া যায়। উত্তর চীন ও উত্তর-পশ্চিম চীনে বন-সম্পদ কিছুটা কম। উত্তর চীনের বনাঞ্চল প্রধানত শানসি প্রদেশের লুইয়াম ল্যুলিয়াং পবর্ত ও হোবেই প্রদেশের ইয়ানশান অঞ্চলে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা চীনে ব্যাপক গণ-পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ তত্পরতা চালানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু চীনে বনীকরণের হার পৃথিবীর গড়পরতা হারের চেয়ে কম। তা ছাড়া সারা চীনে বনাঞ্চলগুলো সুসম দূরত্বে অবস্থিত নয়। যেমন, উত্তরপশ্চিম চীনে ও উত্তর চীনের উত্তরাংশে ও উত্তর-পূর্ব চীনের পশ্চিমাংশে ত্রিশ কোটি একরেরও বেশী বালি আর পাথরের মরুভূমি । মরুভূমি কারণে শুল্ক জলবায়ু , মরুঝড়, এবং জল ও ভূমির বিলোপ এই অঞ্চলের চাষের জমি ও ধাসের জমির গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। বনাঞ্চলগুলো রক্ষা করার জন্যে ও আরো তাড়াতাড়ি বনীকরণ সম্পন্ন করার জন্যে ১৯৭৯ সালে চীনে আরণ্য আইন জারী করা হয়েছে।
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ মুখোমুখি শুনলেন। প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এখন শুনবেন বাংলাংদেশের শিল্পী মস্তাফা জামান আব্বাসীর গাওয়া একটি লোকসঙ্গীত। গানের নাম ময়ুরপজ্খী কৌকা চলে।
|