পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের স্যুইচৌ শহরের সংস্কৃতির ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। উত্তর ও দক্ষিণ চীনের মধ্যবর্তি এলাকায় অবস্থানের কারণে স্যুইচৌ ছিল ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত যুদ্ধ ক্ষেত্র। কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ছাড়াও স্যুইচৌয়ের হালকা খাবারের সংস্কৃতিও কিন্তু সুদীর্ঘকালের। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে স্যুইচৌ শহরের একটি বিখ্যাত হালকা খাবারের দোকানে নিয়ে যাবো এবং এক সাথে শা সুপ নামে এক রকম স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় হালকা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করবো। কি বন্ধুরা খাবেন নাকি?
হ্যা, যদি আপনি স্যুইচৌয়ের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহি ও জনপ্রিয় এই শা সুপ খেতে চান, তাহলে আপনাকে স্যুইচৌ-এর দক্ষিণ মুখি মহাসড়কের মা শি সড়কের শা সুপ দোকানে যেতে হবে। সকাল ৬টা বা ৭টার দিকে এখানে শা সুপ খাওয়ার জন্য শহরবাসীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। দোকানের ভেতরেও লোকারন্যে। দেখতে যেন উত্সব খুব আড়ম্বরপূর্ণ মনে হয়।
শা সুপের রঙ ধূসর। সুপে ডিমের কুসুল মেশানো থাকে। চপস্টিকস দিয়ে নাড়াচাড়া করলে সঙ্গে সঙ্গে তার সুগন্ধ চার দিকে ছড়িয়ে যায়। মুখে দিলেই যেন তা আরো সুস্বাদু হয়ে উঠবে।
স্যুইচৌ'র শহরের অধিবাসী মিস্টার লিনের বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। তিনি সব সময় তাঁর ৮০ বছর বয়সী মাকে নিয়ে এখানে শা সুপ খেতে আসেন। তিনি বলেন, প্রতিটি সুপের দাম ১.৩ ইউয়ান দিয়ে শুরু। জিনিস ভালো তবে দাম বেশি নয়। প্রতি দিনের নাস্তা তাকে ছাড়া চলবে না। এ সম্পর্কে মিস্টার লিন বলেন,
ছোটবেলা থেকেই আমি শা সুপ খেতে পছন্দ করি। আমার পরিবারের সবাই তা পছন্দ করে। সুপের পুষ্টি বেশি ও স্বাদ খুব অসাধারণ। স্যুইচৌয়ের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। প্রত্যেক বার যখন আমার বন্ধু স্যুইচৌ-এ আসেন, তখন আমি তাদেরকে নিয়ে শা সুপ খেতে আসি।
মা শি সড়কে অবস্থিত শা সুপ রেস্তোঁরাটি হচ্ছে একটি ৩ তলা ভবন। প্রথম তলায় রয়েছে সাধারণ পণ্য। দ্বিতীয় তলায় সেট মিল সেবা। তৃতীয় তলায় উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগত কেবিন। শা সুপ রেস্তোঁরার ডেপুটি ম্যানেজার ইন ইয়ুং সিন ব্যাখ্যা করে বলেন, তাদের রেস্তোঁরা প্রতি দিন সকাল ৫টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কমিউনিটিতে ৩টি শাখা রেস্তোঁরাসহ প্রতিদিন তারা প্রায় ৩ হাজার অতিথিকে অভ্যর্থনা জানায়। তিনি বলেন,
এখন আমরা দিনে প্রায় ১ হাজার ৮শ'টি সুপ তৈরী করি। শাখা রেস্তোঁরায় দিনে কয়েকশটি সুপ তৈরী হয়। সব মিলিয়ে এক সঙ্গে আমরা প্রায় ২ হাজার ৮শ'টি সুপ রান্না করি।
প্রাচীনকালে স্যুচৌ'র নাম ছিল পেং ছেং শহর। জানা গেছে, স্যুইচৌ হলো চীনের রান্না'র পিতৃপুরুষ-পেং জু'র আইনত হস্তান্তরিত ভূমি। স্যুইচৌ শা সুপের ইতিহাস ৪ হাজার ৩শ' বছর আগে পেং জু'র ল্যাজ-ঝোলা শিকারের পাখি অর্থাত্ অতিবিরল মুরগি'র ঘন সুপ বলতে হবে। সে সময় পেং জু অতিবিরল মুরগি এবং কিছু ওষুধ ও চাল দিয়ে সুস্বাদু অতিবিরল মুরগি'র সুপ রান্না করে তা অসুস্থ্য সম্রাট ইয়াও'কে প্রদান করেন। সম্রাট ইয়াও এ সুপ খাওয়ার পর খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন। সুতরাং পেং জু'কে তা পে শি কুও অর্থাত তা পেং শি দেশে আইনত হস্তান্তর করেন। তা পেং শি অঞ্চলটিই আজকের স্যুইচৌ শহর। সুতরাং অতিবিরল এ মুরগি'র সুপ 'চীনা প্রথম সুপ'-এর সুনাম পেয়েছে।
1 2 |