৫ জুলাই থেকে মার্কিন ভিয়াকম কোম্পানির নিকেলোডেওন শিশু চ্যানেলে চীনা কাটুনছবির একটি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। এটি হল বিদেশী টেলিভিশনে প্রথম বারের মত চীনের তৈরী কাটুন ছবি প্রদর্শন। অনুষ্ঠানটি প্রতি বার প্রচারের সময় হল এক ঘন্টা। এখন চীনের কাটুন 'প্লিজেন্ট গোট এন্ড বিগ বিগ ওয়োল্ফ'(Pleasant goat and Big Big Wolf) এবং ' দি নেভারেন্ডিং স্টোরি' (The Neverending Story) এ চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। এ দু'টি কাটুন ছবি চীনে ব্যাপক উচ্চ দর্শকের সমাদর পেয়েছে এবং এশিয়ার ১৩টি দেশ ও অঞ্চলে এসব ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ দু'টি কাটুন ছবি সম্পর্কে কিছু কথা আপনাদের বলবো।
চীনের কুয়াংতংয়ের ইউয়ানছুয়াংতুংলি সংস্কৃতি প্রচার কোম্পানি কাটুন ছবি ক্যাটন 'প্লিজেন্ট গৌট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফ' প্রদর্শন করেছে। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে প্রথমবারের মত টেলিভিশনে তা প্রদর্শিত হয়। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত চীনের অভ্যন্তরভাগের ৬০টিরও বেশি চ্যানেল এ ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও, হংকং, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ও অঞ্চলের অনেক চ্যানেলেও প্রদর্শিত হয়েছে। কাটুন চলচ্চিত্র 'প্লিজেন্ট গোট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফ' ৯কোটি ইউয়ান রেনমিনপির টিকিট বিক্রী হয়েছে। এটি সবচেয়ে চীনের নিজস্ব তৈরী জনপ্রিয় কাটুন ছবি। এ কাটুন ছবিতে ছাগল ও নেকড়ের লড়াইয়ের বর্ণনা করা হয়েছে। এ কাটুন ছবির গল্প খুবই মজাদার এবং পাত্র কথোপকথন শ্রুতি বাধুর এতে চীনের বর্তমান কালের
আধুনিকসব নতুন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এখন চীনে শিশুরা হয়ে এ কাটুন ছবি পছন্দ করে তা নয়, বরং প্রচুর বয়স্ক লোক তা পছন্দ করে। ভিয়াকম কোম্পানির এমটিভি চ্যানেলের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বৃহত চীন অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কমকর্তা ইয়া দুয়ানইউন এ সম্পর্কে বলেছেন, 'চীনের কাটুন ছবি শিল্প অনেক দ্রুত উন্নত হচ্ছে। সেজন্য কাটুনের ব্যাপক দর্শকও সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি হল'প্লিজেন্ট গোট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফের' চীনে অনেক জনপ্রিয় হওয়ার একটি করণ। অনুষ্ঠানে 'চীনা কাটুন ছবি' হল একটি সুষ্ঠু প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে চীনের কাটুন শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।'
গত কয়েক বছরে চীনের পেইচিং, থিয়ানচিন, হাংচৌ ও শেনচেনে অনেক কাটুন শিল্প কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চীনা কাটুন ছবির মোট তৈরীর পরিমান ছিল ৪৬ হাজার মিনিট। কিন্তু ২০০৬ সাল এক বছরে চীনা কাটুন ছবি তৈরীর পরিমান ৪২হাজার মিনিট। ২০০৭ সালে ২০০৬ সালের চেয়ে দ্বিগুণ এবং ২০০৮ সালে ২০০৭ সালের চেয়েও তিন গুণ বেড়েছে। চীনা কাটুন শিল্প উন্নয়নের গতি এখন অনেক দ্রুত।
'প্লিজেন্ট গোট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফ'-র প্রয়োজক কুয়াংতুংয়ের ইউয়ানছুয়াংতংলি সংস্কৃতি প্রচার কোম্পানির উপ পরিচালক মাদাম লি লিসি বলেছেন, 'প্লিজেন্ট গোট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফের' আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ হল তাঁদের চূড়ান্ত আশাবাদ। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'এটি হল আমাদের চূড়ান্ত আশাবাদ। কারণ এখন 'প্লিজেন্ট গোট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফ' শুধু যে একটি কাটুন ছবি তা নয়, বরং তা একটি সংস্কৃতি শিল্প। চীনের নিজস্ব তৈরী কাটুন এখন বিশ্ব মানে উঠে এসেছে। আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম চাই যে, তার মাধ্যমে চীনের শ্রেষ্ঠ কাটুন চলচ্চিত্র বিশ্বের বাজারে প্রদর্শন করবো।'
আরেকটি নিকালোডিওন চ্যানেলে প্রচারিত চীনা কাটুন ছবিটি হল ' দি নেভার এরেন্ডিং স্টোরি'। চীনের চেচিয়াংয়ের চৌংনান গোষ্ঠী এ কাটুন নির্মাণ করেছে। ২০০৮ সালে এ কাটুন ছবি চীনে প্রদর্শিত হয়েছে। এটি হল চীনের প্রথম থ্রি-ডাইমেনশনাল (Three-dimensional) কাটুন ছবি। এ কাটুন ছবিতে সাগরের জীবসমূহের মধ্যে কার বিভিন্ন দিকে গল্পের রমত বর্ণনা করা হয়েছে। এসব গল্পে আশাবাদী ও অবিচলিত ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। চৌংনান কোম্পানির প্রধান পরিচালক শেন শুনরং বলেছেন, চৌনান কোম্পানি বিশ্বের নানা স্থানের ৬০টিরও বেশি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা করছে। প্রতি কাটুন তৈরীর সময় তাঁরা চীনা দশর্ক ছাড়াও
বিদেশী দশর্কদের রেওয়াজের কথা বিবেচনা করেন। এর আগে চীনের বেশির ভাগ কাটুন ছবির বিষয় ছিল চীনের প্রাচীন গল্প, কিন্তু বিদেশী দশর্করা বুঝতে পারতো না। সেজন্য শেন শুনরং বলেছেন, মজার গল্প ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশী দশর্কদেরকে বুঝানো আরো গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চীনের প্রাচীন গল্প অনেক মজার। যদি চীনের ঐতিহ্যিক গল্পের নবায়ন ও উদ্ভাবন করা যায়, তাহলে কাটুন ছবি বেশি আকর্ষিত হবে। আমরা চীনের প্রাচীন গল্প নিয়ে একটি কাটুন ছবি তৈরী করেছি। গত বছরের এপ্রিল মাসে ফ্রান্সের ক্যানেস চলচ্চিত্র উত্সবে আমরা বিশ্বের কাছে এ কাটুন ছবি প্রদর্শন করেছি। এরপর ২০টিরও বেশি দেশ এ কাটুন ছবি কিনতে করেছে।'
২০০৬ সালে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় উদ্যোগে ও সরকারের ১০টি বিভাগ নিয়ে গঠিত কাটুন শিল্পের উন্নয়নে সহায়তা বিষয়ক সম্মেলন এবং বিশেষ তবিহল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তদন্ত, গবেষণা ও মতামত জরীপের মাধ্যমে ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসে চীনা কাটুন ছবির সমৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছে। যাতে চীনা কাটুন শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে।
যদিও চীন সরকার যথেষ্ট সহায়তা করেছে, তবুও চীনের কাটুন সংশ্লিষ্ট শিল্পের মান এখনো উচ্চ পর্যায়ের না। চীনের কাটুন সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়নকে সহায়তা করা সম্মেলনের বিশেষজ্ঞ কমিশনের পরিচালক লি ইয়াং সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনের কাটুন উন্নয়নের গতি দ্রুত, কিন্তু স্থিতিশীল নয়। কারণ চীনা কাটুন ব্যক্তি ও সে সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্য উন্নয়নের নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয় নি এবং এ ক্ষেত্রের আলোকিত শিল্প-প্রতিষ্ঠান নেই। সেজন্য চীনা কাটুন শিল্পের উচিত চীনা বৈশিষ্ট্যময় গল্প ও কাটুন সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়ন করা এবং ফ্ল্যাগশিপ শিল্প-প্রতিষ্ঠান সংগঠন করা। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'চলচ্চিত্র ও টিভি শোর মুনাফা প্রধানত তার প্রকাশ অধিকার বিক্রীর মাধ্যমে পাওয়া যায়। কিন্তু কাটুনের জন্য নয়। কাটুন শিল্পের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। কাটুন তৈরীর প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পুঁজিবিনিয়োগ দরকার এবং মুনাফা সৃষ্টির সময় দীর্ঘ। কারণ কাটুনের মুনাফা এবং সে সংশ্লিষ্ট শিল্পের মাধ্যমে পাওয়া যায়। যেমন কাটুনের ব্যক্তিদের আঁকা জুতা, টুপি ও খেলনা। আমাদের উচিত যথাশীঘ্র চীনে কাটুন গৌষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা। যাতে বিভিন্ন ছোট ছোট কাটুন কোম্পানির মানব সম্পদ ও অর্থ সংগ্রহ করে চীনের উত্কৃষ্ট কাটুন তৈরী করা যায়।'
যদিও চীনের ৫শোরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটুন বিভাগ ও ৫হাজার কাটুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে তবুও উত্কৃষ্ট কাটুন তৈরী করা কর্মক্ষম জনশক্তি বেশি নেই। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমান চীনের অভাব কাটুন তৈরীতে সক্ষম জনশক্তি ও অনগ্রসর কাটুন শিক্ষা চীনা কাটুনের উন্নয়নকে বিঘ্নিত করছে। এর ফলে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাটুন বাজারে শতকরা ৮০ ভাগ মুনাফা লাভ করেছে।
এছাড়া, চীনের বেশির ভাগ কাটুন শিশু সম্বন্ধে তৈরী করা হয়। 'প্লিজেন্ট গৌট এন্ড বিগ বিগ ওল্ফ' বয়স্কদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কাটুন চীনে অনেক কম। কিন্তু ডিজনির বেশির ভাগ কাটুনই বয়স্ক ও শিশুরা দেখতে পছন্দ করে।
গত মার্চে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চীনের ৪৬টি কাটুন শিল্প-প্রতিষ্ঠান নিয়ে টোকিও আন্তর্জাতিক কাটুন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজার বিভাগের একজন কর্মকর্তা সং ছিহুই বলেছেন, এবারের প্রদর্শনী চীনের প্রদর্শনী ক্ষেত্র বৃহত্তম ও সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কাটুন শিল্পের প্রতি চীনের সহয়তা বাড়ানো এবং চীনের কাটুন শিল্প-প্রতিষ্ঠান নবায়ন ও উদ্ভাবন জোরদার করার পাশাপাশি চীনা কাটুন অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের বাজারে অবশ্যই তার অবস্থানকে সংহত করে নিতে পারবে।
ছাই ইউয়ে |