v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের নামকরা পন্ডিত চি সিয়েন লিন
2009-07-29 16:06:07

চীনের বিখ্যাত পন্ডিত ,পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা প্রফেসর চি সিয়েন লিন ১১ জুলাই পেইচিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন , মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৯৮ বছর। চি সিয়েন লিন চীনের প্রাচ্য বিদ্যার প্রবর্তক ও অগ্রণী ছিলেন , তিনি বারোটি ভাষা জানতেন । তিনি ভারতের সংস্কৃত ভাষা ও টোঘারিয়ান ভাষার ওপর দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়েছিলেন । তাঁর মৃত্যুতে সমাজের বিভিন্ন মহল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ।

 

১৯৪৬ সালের গ্রীষ্মকালে চি সিয়ে লিন জার্মানীতে তার লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসেন । জার্মানীতে তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ছিলেন । সেই বছর তার বয়স ছিল ৩৫ বছর । দেশে ফিরেই তিনি নতজানু হয়ে একমুঠো মাটি হাতে নিয়ে চুমু দিয়ে বলেন , আমার প্রিয় মাতৃভূমি , আমি ফিরে এসেছি ।

দেশে ফিরে চি সিয়েন লিন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রতিষ্ঠিত প্রাচ্য সাহিত্য বিভাগের ডীন ও প্রফেসর হিসেবে কাজে যোগ দেন । তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরও ছিলেন । তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪২ বছর কাজ করেছেন । ২০০১ সালে তার ৯০তম জন্ম দিনে চি সিয়ে লিন তার সংগ্রহে থাকা কয়েক হাজার হস্তলিপি ,বইপত্র , চিঠি ও ছবি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারকে উপহার হিসেবে দেন ।

সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে চি সিয়েন লিন বলেন , দেশে ফিরে আসার পর ৫০ বছর পার হয়েছে । আমি বলতে চাই আমার দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল । নিজের গবেষণার জন্য মাতৃভূমির জন্য সেবা করার কথা ভুলে যাওয়া আমার কাছে গ্রহণযগোগ্য নয় । বিদেশের জীবন শান্ত ,সেখানে আমি হয়ত আরো বেশি বই লিখতে পারতাম ,তবে দেশে ফিরে এসে আমি মাতৃভূমির জন্য কাজ করতে পেরেছি , বিদেশে থেকে সরাসরি দেশের জন্য কাজ করতে পারি না ।

১৯১১ সালে পূর্ব চীনের সান তুং প্রদেশে চি সিয়েন লিনের জন্ম । ১৯ বছর বয়সে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । সেখানে তিনি জার্মানী ভাষা শিখেন । ১৯৩৫ সাল থেকে তিনি জার্মানীর গোটিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন । তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দশ বছর ছিলেন । সেখানে তিনি ভারতের সংস্কৃত ভাষা , রুশ ভাষা , যুগোস্লাভিয়ার ভাষা ও আরবী ভাষা শিখেন । সেই সময় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলছিল বলে তাঁর জীবন অত্যন্ত কষ্টকর ছিল , মাতৃভূমি ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ ছিল । অত্যন্ত কষ্টকর অবস্থায় চি সিয়েন লিন লেখাপড়া করেন । ১৯৪১ সালে তিনি দর্শনে ডক্তরেট ডিগ্রি পান এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন । ১৯৪৬ সালে চি সিয়েন লিন দেশে ফিরে আসেন ।

চি সিয়েন লিন একজন পরিশ্রমী পন্ডিত । তার গবেষণার ক্ষেত্র ব্যাপক । তিনি ভারত বিদ্যা , মধ্য এশিয়ার প্রাচীন ভাষা , বৌদ্ধ ধর্ম এবং চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর যানবাহনের ইতিহাসের ওপর গবেষণা করে অনেক বই লিখেছেন। ৬০ বছর হলো চীনে অবসর নেয়ার বয়স । কিন্তু চি সিয়েন লিন ৬৭ বছর থেকে ৯১ বছর বয়স পর্যন্ত ২৪ বছরে অনেক বই লিখেছেন । তার জীবনের সবচেয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বই ' চিনির ইতিহাস ' ও ' টোখারিয়ান ভাষার অনুবাদ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা ' তিনি আশি বছর বয়সের পর লিখেছেন । ২০০১ সালে তিনি সাংবাদিককে বলেন , আশি বছর বয়সের পর আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বই লিখেছি । এ দুটি বই পাঠকদের উচ্চ মূল্যায়ন পেয়েছে । আশি বছর বয়সের পর আমার হাতে সময় বেশি । ' চিনির ইতিহাস ' বইটির অক্ষর সংখ্যা আট লাখ , এ বই লেখার জন্য আমি প্রতিদিন গ্রন্থগারে যেতাম । আমি মনে করি পরিশ্রমী হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রতিভাবান মানুষ পরিশ্রম ছাড়া সফল হবে না , আমি মনে করি না যে আমি একজন প্রতিভাবান মানুষ ।

জীবনের শেষ পর্যায়ে হাসপাতাল থাকাকালেও চি সিয়েন লিন তার বই লেখার কাজ বন্ধ করেন নি । হাসপাতালে তার ঘরে একটি বই রাখার তাকে বই ভরা ছিল। চীনের লেখক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ছেন চিয়েন কোং পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ,তিনি চি সিয়েন লিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু । তিনি বলেন , চি সিয়েন লিন খুব পরিশ্রমী মানুষ , প্রতি দিন ভোর বেলা থেকেই তিনি বই পড়া বা লেখা শুরু করেন । গত দু' বছরে তার পায়ের অসুখের জন্য তিনি দাঁড়াতে পারতেন না । তবুও তিনি বই পড়া বন্ধ করেন নি । আমি যখন

তাকে দেখতে যাই , যাওয়ার সময় উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে বিদায় দিতে পারেন নি বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন । ছেন চিয়েন কোন আরো বলেন , চি সিয়েন লিন পিকিং ডাক , সিদ্ধ খাসির মাংস ও জাপানের কাঁচা মাছ খেতে পছন্দ করেন । তাই তার কাছে যাওয়ার সময় আমি এ তিনটি খাবারের একটি আমি সঙ্গে নিয়ে যেতাম । তিনি বড় ধরনের ভোজসভায় অংশ নিতে পছন্দ করেন না । দু-তিনজন বন্ধু বা পরিবার পরিজনের সঙ্গে খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলাপ করতে তার ভালো লাগে । আলাপের সময় তিনি তার গবেষণার বিষয় ব্যাখ্যা করেন এবং অন্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন । গবেষণার বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি অন্যের মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন , কখনো নিজের মত অন্যদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেন নি ।

২০০১ সালে চি সিয়েন লিনের ৯০তম জন্মবার্ষিকী ও তার গবেষণার কাজের ৬৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় । এ সভায় শতাধিক কুটনীতিবিদও অংশ নিয়েছেন । তারা সবাই পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতক এবং চি সিয়েন লিনের ছাত্রছাত্রী। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা মনের শোক প্রকাশ করে ইন্টারনেটে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন

। পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত বিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের উপপ্রধান চিয়াং চিং খুই সাংবাদিককে জানান চীনে তথা বিশ্বে ভারত ও প্রাচ্য ভাষা ও সাহিত্যের ওপর গবেষণা ব্রতে চি সিয়েন লিনের ভুমিকা সর্বজনস্বীকৃত । তার মৃত্যু আমাদের জন্য একটি বড় ক্ষতি । তার ছাত্র হিসেবে আমরা শোকে অভিভুত । তবে আমরা জানি ,তিনি যেন একটি বড় দালান , যদিও দালান এখন ধ্বসে পড়েছে , তবে এ দালানের ভিত্তি মজবুত । আমরা তার গবেষণার কাজ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবো । এটা তার কথা স্মরণের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি । চি সিয়েন লিনের শেষকৃত্যানুষ্ঠান ১৯ জুলাই পেইচিংয়ের পা পাও সানে অনুষ্ঠিত হয়েছে । চীনের নেতৃবৃন্দ ও তার ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন মহলের কয়েক হাজার মানুষ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China