v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ইউনানে ই জাতির ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ' লু সেন'
2009-07-28 20:49:53

প্রাচীনকালে মানব জাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত প্রাণী ও বস্তুর মূর্তির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো । যাকে ' টুটেম' বলা হয় । দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের ছু স্যুন বিভাগের শানবো জেলায় বসবাসকারী ই জাতির লুলু লোকজনের মধ্যেও এ ধরনের ঐতিহ্য প্রচলিত আছে । এ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বাঘের মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ঐতিহ্য ও আচার ব্যবহারও বজায় রয়েছে । এ অঞ্চলে বাঘের মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অতি আদিম , প্রাচীন ও পূর্ণাঙ্গ ক্রিয়াকর্ম এখনো চালু আছে । এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঐতিহ্যবাহী লোক নৃত্যও খুব জনপ্রিয় । আজ এ অনুষ্ঠানে ইউননান প্রদেশ ও এ প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির বাঘ সম্পর্কিত সংস্কৃতি সম্পর্কে আপনাদের কিছু জানাচ্ছি আমি...

চীনের ইউননান প্রদেশে বসবাসকারী ই জাতি , হানি জাতি, নাসি জাতি , থুচিয়া জাতি , চিংপু জাতিসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে বাঘের মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের আচার ব্যবহার খুবই প্রচলিত । এ ক্ষেত্রে ইউননানের শানবো জেলায় বসবাসকারী ই জাতির লোকজনের মধ্যে বাঘের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আচার ব্যবহার আরো বিশেষভাবে ফুটে ওঠে । 'লুসেন' নামে এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র ই জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে খুব জনপ্রিয় । ই জাতির অঞ্চলে শানবো জেলার ই জাতির প্রধান ঐতিহ্যবাহী লোক নৃত্য হিসেবে 'বাঘ নৃত্য' , ' ঢোল নৃত্য' ও ' চিতা-বাঘ নৃত্য' ব্যাপকভাবে চালু করা হয় । এ তিন ধরনের নৃত্য লুসেন নামে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বাজানো হয় । এ তিন ধরনের নৃত্য ই জাতির এখনো টিকিয়ে রাখা বাঘভিত্তিক সংস্কৃতির নমুনা ও অনুরূপ বলা হয় ।

যেহেতু এ তিন ধরনের নৃত্যের সঙ্গে লুসেন বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ , সেহেতু এ তিন ধরনের নৃত্যকে লুসেন সংস্কৃতি বলেও অভিহিত করা হয় । ছু স্যুন বিভাগের ই জাতির সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণাগারের উপপ্রধান , জেলার সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর উপপরিচালক সিয়াও হুই হুয়া বলেন , ই জাতির ঐতিহ্যবাহী লুসেন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এ জাতির লোক নৃত্য পরিবেশন করা হয় । তিনি বলেন ,

লু সেন বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পাশাপাশি লোক শিল্পীরা কেউ বাঘ , কেউ বা চিতা বাঘের মূর্তি ও ভঙ্গি নৃত্য পরিবেশন করে ।

এ তিন নৃত্যের মধ্যে ই জাতির লোকজন সবচেয়ে বাঘ নৃত্যের প্রতি বেশি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে । শানবো জেলার ই জাতির শাখা লুলু সম্প্রদায়ের লোকজন বাঘ নৃত্য ও আদিম নৃত্য খুব পছন্দ করে । বাঘ নৃত্য সাধারণতঃ চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাসের অষ্টম থেকে পঞ্চদশ দিন পর্যন্ত পরিবেশন করা হয় । বাঘ নৃত্যের পরিবেশনা এ জাতির ঐতিহ্যবাহী উত্সব এক ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ ও পবিত্র পরিবেশে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে । সুতরাং ই জাতির এ ঐতিহ্যবাহী উত্সব বাঘের উত্সবও বলা হয় । স্থানীয় লোকজন নিজেদের লুলু বলে গণ্য করে । তারা মনে করে , লুলু লোকজনের পূর্বপুরুষ হল বাঘ । বিশ্বের পাহাড় , নদী , গাছ ও মাটি বাঘ দিয়ে দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে । তাই প্রতি বছর বাঘ উত্সব পালনের জন্য মানুষের মাধ্যমে বাঘ পরিবেশন করা প্রয়োজন । এ প্রসঙ্গে ইউননান প্রদেশের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর ছু স্যু বিভাগের শাখার উপপ্রধান সিয়াও হুই হুয়া বলেন ,

প্রতি বছর বাঘের উত্সব পালন করা হয় । বাঘের নাচ পরিবেশনের জন্য ৮জন অল্পবয়সী পুরুষকে নির্বাচন করা হয় । যারা নিজেদের বাঘ হিসেবে পরিবেশন করে , তারা খুব গৌরব বোধ করে । যারা বাঘের নৃত্য শিল্পী হবে , তাদের অল্পবয়সী ও জোয়ান হওয়া উচিত । ৮ জনের দরকার আলাদা আলাদাভাবে বাঘের মূর্তি ও ভঙ্গি অনুকরণ করে নৃত্য পরিবেশনের জন্য ।

বাঘের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং উপাসনা করার জন্য বাঘের নৃত্য শিল্পীদের বাঘের মতো দরজা খোলা , পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা , সঙ্গীদের সঙ্গে খেলাধূলা , খাবার খুঁজে বের করা এবং লেজ নাড়ানোসহ বিবিধ ভঙ্গি অনুকরণ করতে হয় । এতে ই জাতির পূর্বপুরুষদের উত্পাদন ও জীবনযাপন বিষয়ক ধারাবাহিক নৃত্য জীবন্ত হয়ে ওঠে । চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাসের অষ্টম থেকে পঞ্চদশ দিন পর্যন্ত এ ধরনের বাঘের নৃত্য পরিবেশন করা হতো ।

চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাসের অষ্টম দিনের সন্ধায় ই জাতির উদযাপনী অনুষ্ঠান সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে মুখরিত হয়ে ওঠে । নৃত্য শিল্পী ছাড়া গ্রামবাসীরাও এক সাথে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় । তারা সবাই চিত্কার ও হৈচৈ করে । এতে নববর্ষের অভিনন্দন এবং দৈত্য তাড়িয়ে দেয়ার দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করা হয় । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাঘ ছাড়া শিল্পী ও গ্রামবাসীরা পাহাড়ী দেবতা ও বিড়ালের মূর্তি ও ভঙ্গি অনুকরণ করেও নৃত্য পরিবেশন করে । নৃত্যে বাঘের শক্তি ও সাহসিকতাও পুরোপুরি প্রকাশ পায় । এ ধরনের নৃত্য প্রসঙ্গে সিয়াও হুই হুয়া বলেন ,

বাঘের নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ই জাতির বাঘ বিষয়ক সংস্কৃতি, বাঘের মূর্তি ও ভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বাঘের প্রতি উপাসনা করার বাসনা তুলে ধরা হয়েছে । ই জাতির লোকজন এর মাধ্যমে তাদের বংশধরদের শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা লাভের কামনা করেছে । বাঘের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাসের অষ্টম থেকে পঞ্চদশ দিন পর্যন্ত আয়োজন করা হয় । এতে ই জাতির বাঘ বিষয়ক সংস্কৃতি ও আচার ব্যবহার পুরোপুরি তুলে ধরা হয়েছে ।

চিতা-বাঘের নৃত্য ই জাতির একটি শাখা ' নাসু' সম্প্রদায়ের এক ধরনের ধর্মীয় নৃত্য । এ নৃত্যের মাধ্যমে দেবতা ও ভবিষ্যতের শুভকামনার প্রতি উপাসনা করা হয় । এ নৃত্য মানুষের তরুণ হওয়ার প্রতীক । মানে ই জাতির কিশোর কিশোরীরা বাঘ ও চিতা-বাঘের মতো শক্তিশালী হবে। তারা কোন কিছুকেই ভয় পাবে না । তারা সাহসী , পরিশ্রমী এবং নানা রকম বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম । সিয়াও হুই হুয়া আরো বলেন ,

বাঘের নৃত্য , চিতা-বাঘের নৃত্য এবং ঢোল নৃত্য হল ই জাতির এমন তিন ধরনের নৃত্য , যার সাথে এ জাতির সংগীত , নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনের শিল্পকলা সংযুক্ত হয়েছে । এতে ভবিষ্যতের প্রতি মানুষের শুভকামনা ও বাসনার কথাও ফুটে উঠেছে ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China